প্রতিবেদন: ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে হওয়া সংঘাত নিয়ে কথা বললেন পুতিন ও ট্রাম্প। বুধবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ফোনে এক ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংকট নিয়ে আলোচনা করেছেন। ভারতীয় নিরাপত্তা পরিমণ্ডলের দৃষ্টিকোণ থেকে, এই আলোচনার তাৎপর্য উপেক্ষা করার সুযোগ নেই, কারণ এর কেন্দ্রে ছিল ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের অবসান এবং তা নিয়ে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অংশগ্রহণের উদ্যোগ।
আরও পড়ুন-বেঙ্গালুরু ট্র্যাজেডি, স্বতঃপ্রণোদিত মামলা হাইকোর্টের, এফআইআর মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে ইউরি উশাকভ জানিয়েছেন, পুতিন ও ট্রাম্প ফোনালাপে শুধু মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি কিংবা ইউক্রেন যুদ্ধ নয়, সরাসরি ভারত ও পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সশস্ত্র সংঘাত নিয়েও আলোচনা করেন। এই বক্তব্যটি রুশ সংবাদ সংস্থা তাস নিশ্চিত করেছে। যদিও উশাকভ বিস্তারিত জানাতে সম্মত হননি, তবুও এই স্বীকারোক্তি ভারতের ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় এক গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করে। বিশেষত যখন ট্রাম্প নিজেই পরে ‘ট্রুথ সোশ্যাল’-এ একাধিকবার দাবি করেছেন যে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত তাঁর সক্রিয় মধ্যস্থতায় বন্ধ হয়েছে।
পহেলগাঁওতে প্রাণঘাতী জঙ্গি হামলার পরপরই দক্ষিণ এশিয়ায় যুদ্ধ পরিস্থিতির সূচনা হয়। পর্যটননির্ভর অঞ্চল হওয়া সত্ত্বেও, এই হামলায় ২৬ জন অসামরিক নাগরিকের মৃত্যু ভারতের জনমনে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি করে। ভারত সরকার সরাসরি পাকিস্তান-সমর্থিত জঙ্গিদের দায়ী করে ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামক একটি সামরিক অভিযান শুরু করে, যার লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত জঙ্গিঘাঁটি। এর প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান পাল্টা সামরিক অভিযান চালায়। মাত্র তিনদিনের মধ্যে, ১০ মে, উভয় দেশ আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। এই দ্রুত যুদ্ধাবসানের পেছনে যদি ট্রাম্পের দাবি অনুযায়ী তাঁর ব্যক্তিগত ভূমিকা থেকে থাকে, তবে তা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে তাঁর প্রভাবের এক নতুন দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে বলা যায়। যদিও ইতিমধ্যেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক সংঘাত থামাতে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার দাবি অস্বীকার করেছে।
আরও পড়ুন-বর্ধমানে বাগদি সম্প্রদায়ের নতুন অফিস
এদিকে পুতিন ও ট্রাম্পের আলোচনার আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ। ট্রাম্প উল্লেখ করেন, সাম্প্রতিক রুশ বিমানবন্দরে ইউক্রেনের ড্রোন হামলা ও পাল্টা প্রতিক্রিয়ার কৌশল নিয়ে পুতিনের সঙ্গে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। যদিও আলোচনাটি তাৎক্ষণিকভাবে শান্তি আনেনি, তবুও এর মাধ্যমে দুই প্রভাবশালী নেতার মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সম্পর্কে একটি সমঝোতা তৈরির ইঙ্গিত মিলেছে। তাঁদের আলোচনায় ইরান প্রসঙ্গও উঠে আসে, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির ভবিষ্যৎ নিয়ে। ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, পুতিন একমত হয়েছেন যে ইরান পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন করতে পারবে না, এবং রাশিয়া এই বিষয়ে আলোচনায় সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে প্রস্তুত। এই অবস্থান ইঙ্গিত দেয়, ইরান প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে একধরনের কৌশলগত বোঝাপড়া গড়ে উঠতে পারে, যার প্রতিক্রিয়া পড়তে পারে পশ্চিম এশিয়ার ক্ষমতাবিন্যাসে। তবে একদিন পরেই যখন রাশিয়া ঘোষণা করে যে, ইউক্রেন ও তার মিত্রদের দায়ী করে তারা ড্রোন হামলার জবাবে সামরিক পদক্ষেপ বিবেচনা করছে, তখন স্পষ্ট হয় যে এই আলোচনাগুলি শান্তির পথ যতটা খুলেছে, ততটাই উত্তেজনার নতুন দ্বারও তৈরি করেছে। ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণার মাধ্যমে কিছুটা স্বস্তি মিললেও, বৃহত্তর ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা থেকে ভারত সরে আসতে পারছে না। এই প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে—বিশ্বশক্তিগুলির অভ্যন্তরীণ সমঝোতার প্রবাহে নিজেকে উপযুক্তভাবে সংযুক্ত রাখা, যাতে দক্ষিণ এশিয়ার নিরাপত্তা সংকট শুধু বাইরের ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজস্ব কূটনৈতিক দক্ষতার ভিত্তিতে পরিচালিত হতে পারে। পুতিন-ট্রাম্প আলোচনার নেপথ্য কাহিনি যেমন একটি অস্থির বিশ্ব বাস্তবতার দিকে ইঙ্গিত দেয়, তেমনই ভারতের জন্য তুলে ধরে এক নতুন বাস্তবতা: যুদ্ধ আর শান্তির রাশ অনেক সময় রাজধানী নয়, ফোনালাপের ওপাশে থাকে।