নয়াদিল্লি: বহু প্রতীক্ষিত দ্বিপাক্ষিক আলোচনা ও কৌশলগত অংশীদারিত্বকে নতুন গতি দিতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ঝটিকা সফরে বৃহস্পতিবার ভারতে এসেছেন। শুক্রবার তাঁর মূল কর্মসূচি শুরু হয়। দিনের শুরুতেই প্রেসিডেন্ট পুতিন সরাসরি রাজঘাটে যান এবং জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন, যা দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ইঙ্গিত বহন করে। এরপর তাঁর ঠাসা কর্মসূচি ছিল। রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিক সংবর্ধনা শেষে প্রেসিডেন্ট পুতিন সরাসরি হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকের জন্য উপস্থিত হন। এই বৈঠকে দুই নেতা ভারত-রুশ কৌশলগত অংশীদারিত্বের বিভিন্ন দিক, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা, শক্তি, বাণিজ্য এবং বহুপাক্ষিক প্ল্যাটফর্মগুলিতে সহযোগিতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেন। প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে এস-৪০০ এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমের সময়মতো সরবরাহ এবং ভবিষ্যতে যৌথভাবে সামরিক হার্ডওয়্যার উৎপাদনের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন-বিগ-বি এবার ঝাঁসির ভোটার তালিকায়!
পাশাপাশি, পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং তেল ও গ্যাসের মতো ঐতিহ্যবাহী জ্বালানি সরবরাহ বজায় রাখার বিষয়ে জোর দেওয়া হয়। আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি, বিশেষ করে আফগানিস্তানের বর্তমান অবস্থা এবং ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উভয় দেশ কীভাবে একে অপরের পাশে থাকতে পারে, তা নিয়েও বিশদ মতবিনিময় হয়েছে। দুপুর নাগাদ দুই নেতার উপস্থিতিতে বাণিজ্য, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর একাধিক সমঝোতাপত্র বা মৌ স্বাক্ষরিত হয়। দুই দেশের গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিগুলির মধ্যে রয়েছে, ১. সামরিক ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা: ২০৩৪ সাল পর্যন্ত দীর্ঘমেয়াদি সামরিক-প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বজায় রাখা এবং ভারতে যৌথভাবে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদন বৃদ্ধি। ২. পারমাণবিক শক্তি : তৃতীয় পক্ষের দেশগুলিতে পারমাণবিক চুল্লি নির্মাণে যৌথ অংশীদারিত্ব এবং ভারতে কুরানকুলাম প্রকল্পের পরবর্তী ইউনিটগুলির দ্রুত বাস্তবায়ন। ৩. জ্বালানি সরবরাহ : সাইবেরিয়া থেকে ভারতে তেল ও গ্যাসের সরাসরি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একটি নতুন দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি। ৪. বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও মহাকাশ : বৈজ্ঞানিক গবেষণা, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং মহাকাশ অনুসন্ধানে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য একটি চুক্তি। ৫. বাণিজ্য ও বিনিয়োগ : দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে ভারতীয় রুপি এবং রাশিয়ান রুবল এর ব্যবহার সহজ করার জন্য একটি কাঠামো তৈরি করা। ৬. সাংস্কৃতিক ও পর্যটন : পর্যটন বৃদ্ধি এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া। দিনের শেষে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে দুই নেতা সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন এবং চুক্তিগুলির বিবরণ তুলে ধরেন।

