প্রবীর ঘোষাল, দোহা: লিওনেল মেসির দল এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালে না উঠলে কাতার সরকারের কয়েক হাজার কোটি টাকা লোকসান হত। এই তথ্য খোদ সে দেশের অর্থমন্ত্রকের। প্রাথমিক বিশ্লেষণে তারা দেখেছে, আরব দুনিয়া-সহ ইউরোপ এবং আফ্রিকান দেশগুলির দর্শকরা যেভাবে দোহায় প্রায় এক মাস ধরে ঘুরে বেড়িয়েছে, খাওয়া-দাওয়া করেছে তাতেই সরকারের মোটা মুনাফা হয়েছে।
আরও পড়ুন-জিতে এসো লিও, চিঠি মৃত্যুপথযাত্রী শিক্ষিকার
আর ঠিক উল্টোটা হত আর্জেন্টিনা প্রাথমিক পর্ব থেকে বিদায় নিলে। সৌদি আরবের কাছে প্রথম ম্যাচে হারার পর মেসিদের নিয়ে দুশ্চিন্তার কালো মেঘ শুধু কাতারকে নয়, গ্রাস করেছিল গোটা ফুটবল দুনিয়াকে। পড়শি দেশ সংযুক্ত আরব আমিরশাহির দুবাই শহরের জুয়াড়িদের নাকি নাওয়া-খাওয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। বিশ্বকাপকে ঘিরে কাতার সরকারের পরিকল্পনার পরিচালকরাও চোখে অন্ধকার দেখতে শুরু করেছিল।
নেইমার-রোনাল্ডো-এমবাপেদের নিয়েও ফুটবল অনুরাগীদের আকর্ষণ নিশ্চয়ই ছিল। কিন্তু মেসি নিঃসন্দেহে সবার থেকে জনপ্রিয়তার প্রশ্নে কয়েক যোজন দূরে। কাতারে বিশেষ করে আরব গোষ্ঠীভুক্ত দেশগুলিতে বাঁ পায়ের জাদুকর হলেন স্বপ্নের নায়ক। আগের দিন ছিল জুম্মাবার। আজ স্থানীয় একটি কাগজে ছবি-সহ খবর বেরিয়েছে, কাতারের মসজিদে মসজিদে ফাইনালে আর্জেন্টিনার জয়ের জন্য প্রার্থনা করা হয়েছে।
আরও পড়ুন-সংখ্যালঘুদের শিক্ষার অধিকার চেয়ে বিশ বছরের লড়াই
মেসির হাতেই যেন বিশ্বকাপ ওঠে, আল্লার কাছে এটাই ছিল মানুষের আর্জি। আবেগ কোথায় পৌঁছলে এ জিনিস হতে পারে, ভাবাই যায় না। দোহায় দু’দিন ধরে দেখছি অনেক গাড়ি-বাড়িতে দুটি করে পতাকা পতপত করে উড়ছে। একটি কাতারের, অন্যটি আর্জেন্টিনার। ফ্রান্সের সমর্থকরা সেভাবে নজর কাড়তে পারছে না। সংখ্যাতেও তারা কেমন যেন নগণ্য। অথচ, ইউরোপের দেশগুলি থেকে খেলা দেখতে আসা দর্শকদের মধ্যে এমবাপে-জিরুদের সমর্থক আছে। শনিবার সকালে সমুদ্রের ধারে ভিডিও ক্যামেরায় ছবি তুলছিলেন পাওলো ফেলিক্স। পর্তুগালের লিসবন থেকে এসেছেন। পেশায় চিত্র সাংবাদিক। পাওলোর মতে, রবিবারের ম্যাচে আর্জেন্টিনা দাঁড়াতেই পারবে না। মেসি ছাড়া দলটায় আছেটা কী? ওকে রোখার মতো ক্ষমতা ফ্রান্সের ডিফেন্ডারদের ভালমতোই আছে। পাওলোর কথা শুনে সামনে দাঁড়ানো হাবড়ার অভিজিৎ মুখোপাধ্যায় আর অশোকনগরের আব্দুল হাকিম আলি রেগে লাল। বলেই দিলেন, মেসিকে এরা চেনে না।
আরও পড়ুন-বেঁচে থাকো ভাষা
ফাইনালে ফল যাই হোক না কেন, মেসিকে বিশ্বকাপের পর ভবিষ্যতের জন্য বরণ করার যাবতীয় প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে কাতার। দেশের শাসক রাজপরিবারের তরফ থেকে মেসিকে মাথা ঘোরানো অফার দেওয়া হয়েছে। প্যারিসের বর্তমান ক্লাব ছাড়ার পর আর যেন কোনও দিকে না তাকান এলএম টেন। যেরকম দুবাই আর্জেন্টিনার আর এক নক্ষত্র দিয়েগো মারাদোনাকে রাজার সম্মান দিয়ে সেখানে ঠাঁই দিয়েছিল, মেসিকেও তাই করা হবে। মেসি যা যা সুবিধা চাইবেন তাই পাবেন। অর্থেরও কার্পণ্য করবে না কাতার। ফুটবলকে জনপ্রিয় করতে তারা মেসির মতো বিস্ময় প্রতিভাকে আজীবন ধরে রাখতে চায়।