বোয়িং নিয়ন্ত্রক সংস্থার পূর্ব-সতর্কতা ঘিরে প্রশ্ন

Must read

প্রতিবেদন: বোয়িং (Boeing) নিয়ন্ত্রক সংস্থার পূর্ব-সতর্কতা ঘিরে এবার সন্দেহের মেঘ ঘনাচ্ছে। আমেদাবাদ থেকে উড়ানের কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে এয়ার ইন্ডিয়ার বোয়িং (Boeing) ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার ভেঙে পড়ে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে এই ঘটনার মাত্র চার সপ্তাহ আগে যুক্তরাজ্যের সিভিল এভিয়েশন অথরিটি (সিএএ) বেশ কয়েকটি বোয়িং বিমানের ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল এবং প্রতিদিন বাধ্যতামূলক পরীক্ষার নির্দেশ দিয়েছিল। গত ১৫ মে যুক্তরাজ্যের বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা একটি নিরাপত্তা বিজ্ঞপ্তি জারি করে বোয়িংয়ের ৭৮৭ ড্রিমলাইনার-সহ পাঁচটি মডেলের অপারেটরদের একটি ইউএস ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বিমানের উড়ানযোগ্যতা সংক্রান্ত নির্দেশিকা (এডি) পর্যালোচনা করতে নির্দেশ দেয়। বিষয়টি সামনে আসার পর আমেদাবাদের ড্রিমলাইনার বিপর্যয় নিয়ে একাধিক প্রশ্ন উঠছে।
বিমান চলাচল সংক্রান্ত এই এডি হল একটি পণ্যর সম্ভাব্য ত্রুটিপূর্ণ অবস্থা সংশোধনের জন্য আইনত বলবৎযোগ্য একটি নির্দেশিকা। এক্ষেত্রে এফএএ নির্দেশিকায় ফুয়েল শাটঅফ ভালভ অ্যাকচুয়েটরগুলিকে সম্ভাব্য নিরাপত্তা উদ্বেগ হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। সিএএ-এর বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এফএএ নিম্নলিখিত বোয়িং বিমানে (বি ৭৩৭, বি ৭৫৭, বি ৭৬৭, বি ৭৭৭, বি ৭৮৭) ইনস্টল করা ফুয়েল শাটঅফ ভালভগুলিকে প্রভাবিত করে এমন একটি সম্ভাব্য বিপজ্জনক পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিমানের উড়ানযোগ্যতা সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে। ফুয়েল শাট-অফ ভালভ একটি নিরাপত্তা যন্ত্র যা ইঞ্জিনে জ্বালানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়। এটি সাধারণত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য, ইঞ্জিনে আগুন লাগলে বা জরুরি অবতরণের সময় ব্যবহৃত হয়। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান যা জ্বালানি যাওয়ার পথে কোনও ছিদ্র রোধ করতে এবং বিমানের নিরাপদ ক্রিয়াকলাপ নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিমান সংস্থা অপারেটরদের বোয়িং ৭৮৭ সহ অন্যান্য বিমানে ফুয়েল কাট অফ ভালভ অ্যাকচুয়েটরগুলি পরীক্ষা, পরিদর্শন ও প্রতিস্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিল। এছাড়াও নিরাপত্তা বিজ্ঞপ্তিতে বিশেষভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে এডি দ্বারা প্রভাবিত বিমানে ফুয়েল কাট অফ ভালভগুলি যেন প্রতিদিন পরীক্ষা করতে হয়। ভারতের এয়ারক্রাফ্ট অ্যাক্সিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) এয়ার ইন্ডিয়া দুর্ঘটনার প্রাথমিক রিপোর্ট প্রকাশের পর বিষয়টি সামনে আসে, ওড়ার কিছুক্ষণ পরেই ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচ, যা প্রতিটি ইঞ্জিনে জ্বালানির প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ করে, অপ্রত্যাশিতভাবে কাট অফ মোডে চলে গিয়েছিল, যার ফলে দুটি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায়। রিপোর্ট অনুযায়ী, এয়ার ইন্ডিয়া বোয়িংয়ের স্ট্যান্ডার্ড রক্ষণাবেক্ষণ সময়সূচি অনুযায়ী, ২০১৯ এবং ২০২৩ সালে বিধ্বস্ত ড্রিমলাইনারের থ্রটল কন্ট্রোল মডিউল, যেখানে ফুয়েল কন্ট্রোল সুইচগুলি থাকে, তা প্রতিস্থাপন করেছিল। তবে এএআইবি-এর প্রাথমিক রিপোর্টে দেখা গেছে যে এয়ার ইন্ডিয়া ফুয়েল কাট অফ সুইচগুলির লকিং মেকানিজম পরিদর্শন করেনি, যা ২০১৮ সালের এফএএ পরামর্শেই প্রস্তাব আকারে দেওয়া হয়েছিল। আমেদাবাদ বিপর্যয়ের পর এখন বিমান সংস্থার দাবি, যেহেতু ওই পরামর্শটি বাধ্যতামূলক ছিল না, তাই তারা পরিদর্শন করেনি। এদিকে, এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও ক্যাম্পবেল উইলসন সংস্থার অভ্যন্তরীণ বার্তায় বলেছেন যে তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্ট কোনও কারণ চিহ্নিত করেনি বা কোনও সুপারিশ করেনি। ফলে এই মারাত্মক দুর্ঘটনার জন্য কে দায়ী তা নিয়ে অপ্রয়োজনীয় অনুমান করা থেকে সকলে বিরত থাকুক।

আরও পড়ুন-মুখ্যমন্ত্রীর পছন্দের তালিকাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে : সুপ্রিম কোর্ট

Latest article