সৌম্য সিংহ: দেশ জুড়ে অগ্নিগর্ভ আন্দোলন ও দেড়শো প্রাণের বিনিময়ে শেষপর্যন্ত সংরক্ষণ-সংস্কারের পথে বাংলাদেশ। রবিবার হাইকোর্টের রায় বাতিল করে দিল বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট। এদিন শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, দেশের সংরক্ষণ ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে। মেধাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই রায় কিছুটা হলেও পক্ষে গেল হাসিনা সরকারেরই। একইসঙ্গে অন্তত কিছুটা স্বস্তির কারণ হতে পারে সংরক্ষণ-বিরোধী পড়ুয়াদেরও।
আরও পড়ুন-রিচা-হরমনে জয় ও কার্যত শেষ চার
রবিবার শীর্ষ আদালতের নির্দেশ, সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে। সংরক্ষিত থাকবে কেবলমাত্র ৭ শতাংশ। এরমধ্যে ৫ শতাংশ থাকবে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য, ১ শতাংশ থাকবে পিছিয়ে পড়া জনজাতির জন্য এবং বাকি ১ শতাংশ সংরক্ষিত থাকবে প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য। রায় ঘোষণার পাশাপাশি আন্দোলনরত পড়ুয়াদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। রবিবার সুপ্রিম কোর্টের শুনানি এবং সিদ্ধান্ত জানার প্রতীক্ষায় ছিল গোটা দেশ। সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য ৩০ শতাংশ সংরক্ষণের যৌক্তিকতা এবং বৈধতার বিষয়ে এদিন সুপ্রিম কোর্টে শুনানি হয়। লক্ষণীয়, এতদিন বাংলাদেশের ৫৬ শতাংশ আসন ছিল সংরক্ষণের আওতায়। বাকি ৪৪ শতাংশ আসন ছিল সাধারণ চাকরিপ্রার্থী এবং পরীক্ষার্থীদের জন্য। ২০১৮ তে জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ ছাড়া বাকি সংরক্ষণ-ব্যবস্থা পুরোপুরি বাতিল করে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। কিন্তু রবিবারের তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল, সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কিন্তু পুরোপুরি বাতিল করা হয়নি সংরক্ষণ ব্যবস্থা। ৭টি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার ২০১৮ তে হাসিনার সংরক্ষণ বাতিলের বৈধতাকে চ্যালেঞ্জ করে ২০২১-এ হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন। গত ৫ জুন হাইকোর্ট রায় দেয়, সংরক্ষণ বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ। যার অর্থ পুরনো সংরক্ষণ-ব্যবস্থা ফিরে আসা। এরই প্রতিবাদে বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে বাংলাদেশ জুড়ে। হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে অবশ্য পাল্টা সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার। তারই ভিত্তিতে রবিবার সংরক্ষণ-ব্যবস্থার সংস্কারের নির্দেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ততক্ষণে আন্দোলনের জেরে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ১৫০ জনের।
আরও পড়ুন-বিহার সম্পর্ক ক্রান্তি এক্সপ্রেসে ফেটে গেল অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, আতঙ্কে যাত্রীরা
চলবে কার্ফু
এদিকে শুক্রবার রাত থেকেই বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয়েছে কার্ফু। নামানো হয়েছে সেনাও। শনিবার ঢাকার রামপুরা এলাকায় সেই কার্ফু অমান্য করে কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী পথে নামে। পুলিশের সঙ্গে বেধে যায় সংঘর্ষ। গুলি চালায় পুলিশ। কার্ফু সত্ত্বেও শনিবারও বেশ কয়েকটি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। দুপুর ১২টা নাগাদ ঘণ্টা দুয়েকের জন্য কার্ফু শিথিল করা হয়। রবিবার সকাল ১০টা নাগাদ পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে বেলা ৩টে থেকে ৫টা পর্যন্ত আবার শিথিল করা হয় কার্ফু। তবে প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, পরবর্তী নির্দেশিকা না আসা পর্যন্ত ৫টা থেকে জারি থাকবে কার্ফু। দেখামাত্র গুলির নির্দেশ নিয়ে অবশ্য কিছুই আর বলা হয়নি সরকারিভাবে। এদিকে ২৩ জুলাই আপ এবং ডাউন মৈত্রী এক্সপ্রেস বাতিল করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ রেলসূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন-‘দিল্লির সরকারের আয়ু বেশিদিন নয়’ সাফ কথা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের
সীমান্তে উদ্বিগ্ন মুখের ভিড়
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পড়ুয়ার ঢল। বাংলাদেশের অগ্নিগর্ভ পরিবেশে আতঙ্কিত হয়ে দেশে ফিরে আসার জন্য অস্থির হয়ে উঠেছেন ভারতীয় পড়ুয়ারা। পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং ত্রিপুরার ইমিগ্রেশন চেকপোস্টে তারই প্রতিফলন। শেষ পাওয়া খবর, রবিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত চ্যাংরাবান্ধা ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলায় ফিরেছেন ৫৫০ জন পড়ুয়া। ভারতীয় পড়ুয়ারা ছাড়াও রয়েছেন নেপাল, ভুটান এমনকী মালদ্বীপের বাসিন্দারাও। আছেন ৩৩৮ জন ভারতীয়, ১৮৬ জন নেপালি, ২৫ জন ভুটানি ও ১ জন মালদ্বীপের বাসিন্দা। পড়ুয়াদের অধিকাংশই মেডিক্যাল পড়ুয়া বলে জানা গিয়েছে।
আন্দোলন চলবে?
সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরেও আন্দোলনকারীদের একটা বড় অংশ আন্দোলনের পথ থেকে সরতে নারাজ। মূল দাবিগুলো পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। জেলবন্দি আন্দোলনকারীদের অবিলম্বে মুক্তির পাশাপাশি পড়ুয়া-নির্যাতনের জন্য দায়ী সমস্ত প্রশাসনিক আধিকারিকদের ইস্তফা দাবি করেছেন তাঁরা। নিখোঁজ আন্দোলনকারীদের খুঁজে বের করারও দাবি জানিয়েছেন পড়ুয়ারা। অ্যাটর্নি জেনারেল
এ এম আমিনুদ্দিন অবশ্য দৃঢ়তার সঙ্গে জানিয়ে দিয়েছেন, আন্দোলনের নামে যারা হিংসায় উসকানি দিয়েছে তাদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।