সঞ্জয় রাই অপরাধী। কিন্তু এই ঘটনা বিরলের মধ্যে বিরল ঘটনা নয়। সেই কারণে আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ- খুনে দোষী সঞ্জয় রাইয়ের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা ঘোষণা করলেন শিয়ালদহ কোর্টের বিচারক অনির্বাণ দাস। যেহেতু সরকারি হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছে, সেই কারণে মৃতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দিতে হবে রাজ্য সরকারকে- নির্দেশ আদালতের। যদিও মৃতার বাবা-মা এই টাকা তাঁরা চান না।
৯ অগাস্ট আর জি কর মেডিক্যালে কর্তব্যরত চিকিৎসক-পড়ুয়ার দেহ উদ্ধার হয় হাসপাতালের সেমিনার হলে। ধর্ষণ করে খুনের অভিযোগ ওঠে। তদন্তে নেমে ১০ অগাস্ট এই ঘটনায় অভিযুক্ত সন্দেহে সিভিক ভলান্টিয়ার সঞ্জয় রাইকে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশ। ঘটনায় উত্তাল হয় কলকাতা। রাজ্যজুড়ে শোরগোল পড়ে। রাজ্য এমনকী দেশের সীমা পেরিয়ে যায় আন্দোলনের আঁচ। প্রথম থেকেই এই কাণ্ডে কড়া অবস্থান নেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ১২ অগাস্ট নির্যাতিতার বাড়িতে যান তিনি। পরিবারকেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। এদিকে সিবিআই তদন্তের দাবির প্রেক্ষিতে ১৩ অগাস্ট CBI তদন্তের নির্দেশ দেয় কলকাতা হাই কোর্টে। এই ঘটনায় ১৮ অগাস্ট সুপ্রিম কোর্টে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের হয়।
আরও পড়ুন- রাতে মদ্যপ যুবকদের তাণ্ডব! কুলতলিতে আক্রান্ত পুলিশ কর্মীরা
এই ঘটনার পর থেকেই কর্মবিরতি ও অবস্থান আন্দোলনে নামেন জুনিয়র ডাক্তাররা। কলকাতা পুলিশের তৎকালীন কমিশনার বিনীত গোয়েলের পদত্যাগের দাবিতে সরব হন তাঁরা। ২ ও ৩ সেপ্টেম্বর জুনিয়র চিকিৎসকরা লালবাজার অভিযান করেন। ১০ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্যভবনের সামনে জুনিয়র চিকিৎসকরা অবস্থান আন্দোলন শুরু করেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর নবান্নে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে ডাকা হয়। কিন্তু দুদিনই বৈঠক ভেস্তে যায়। ১৯ অক্টোবর মুখ্যসচিবের মাধ্যমে অনশনকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গত ২১ অক্টোবর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের ফের বৈঠক হয়। অনশনকারীরা তাঁর লাইভ সম্প্রচার দেখেন। বৈঠকের পর ওইদিনই অনশন প্রত্যাহার করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা।
এদিকে ৭ অক্টোবর সঞ্জয় রাইকেই মূল অভিযুক্ত নাম উল্লেখ করে চার্জশিট পেশ করে সিবিআই। ৪ নভেম্বর সঞ্জয় রাইয়ের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। ১১ নভেম্বর থেকে শিয়ালদহ আদালতে টানা বিচার প্রক্রিয়া চলে। ১৮ জানুয়ারি সঞ্জয়কে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। ২০ তারিখ বিচারক জানান এটা বিরলের মধ্যে বিরলতম অপরাধ নয়। সেই কারণেই ফাঁসি নয়। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসক-পড়ুয়ার ধর্ষণ- খুনে দোষী সঞ্জয় রাইয়ের আমৃত্যু কারাবাসের সাজা ঘোষণা করলেন বিচারক অনির্বাণ দাস। একই সঙ্গে মৃতার পরিবারকে ১৭ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দিতে হবে রাজ্য সরকারকে- নির্দেশ আদালতের।