সুমন করাতি হুগলি: আপাতদৃষ্টিতে দেখতে ঘন জঙ্গলে ঢাকা ছায়া সুনিবিড় পথ। এই পথের উত্তর পাড়ে রয়েছে বাঘটি গ্রাম। সেখানেই বাস ছিল রঘু ডাকাতের। আর এই রাস্তার পাশেই রয়েছে তার পত্তন করা ডাকাত কালীমন্দির। ৫০০ বছর আগের ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, এই বিশিষ্ট ডাকাত কালীমন্দিরের আসল প্রতিষ্ঠাতা রঘু ডাকাতের ভাই বুধো ডাকাত। কিন্তু বর্তমানে সেই বিগ্রহের কোনও অস্তিত্ব নেই। বরং এখন সাত ফুট উচ্চতার এই মূর্তিকে নতুন ভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এই মূর্তি রঘু ডাকাতের কালী নামেই জনমুখে প্রচারিত এবং সিদ্ধেশ্বরী কালী হিসেবে পূজিতা।
আরও পড়ুন-বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকেই শুরু হয়েছে ‘বিচার’ নিয়ে স্পষ্ট কথা দলের
এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে আছে শিহরন জাগানো ইতিহাস। জনশ্রুতি, বুধো এবং তার দাদা রঘু ঘোষ দিনের বেলা খেতমজুরের কাজ করে রাতে ধনী ও প্রভাবশালীদের বাড়িতে ডাকাতি করত। এছাড়াও রাতের বেলা জঙ্গলের ভেতর দিয়ে যারা যাতায়াত করত তাদের দড়ি দিয়ে গাছে বেঁধে রেখে ঢাকঢোল পিটিয়ে নরবলি দেওয়া হত। সেই সময় ল্যাটামাছ পোড়া দিয়ে আরাধনা করা হত দেবীর। কালের নিয়মে নরবলি বন্ধ হয়ে গেলেও ল্যাটামাছ পোড়া দেওয়ার রীতি আজও রয়ে গিয়েছে। এই কালীকে রঘু নাকি খুঁজে পেয়েছিল এক পুকুর থেকে। বিপ্রদাস পিপলাই-এর মনসামঙ্গলে রঘু ডাকাতের কালীবাড়ির উল্লেখ আছে। জনশ্রুতি বলে, প্রায় সাড়ে ৫০০ বছর আগে এখানে শ্মশান কালীর উপাসনা শুরু করে রঘু ডাকাত। তারপর কালীতলায় মন্দির প্রতিষ্ঠা করে দেবীর।
আরও পড়ুন-এনআরএসে সদ্যোজাতর পেটে ভ্রূণ
রঘুর হাতে দেবী পুজাে পেতেন ‘সর্বমঙ্গলা’ নামে। নামে অভিনব হলেও মূর্তি প্রথানুগ। খড়্গ ও মুণ্ডধারিণী এবং অভয়া বরদা! ডাকাতের দেবী হলেও এবং তাঁর প্রসাদে বহু পরিবারের রঘু সর্বনাশ করলেও কালী কিন্তু সত্যই সর্বমঙ্গলা। রঘু লুঠপাট করত গরিবকে সুখে রাখার জন্য— নিজস্ব স্বার্থ তার প্রায় ছিল না বললেই হয়। সেই জন্যই তৎকালের পূর্ববঙ্গের রামশরণ সিমলাই নামে এক বণিক যখন বাণিজ্যপথে বজরা থামিয়ে এই দেবীর পুজো দেন— তখন রঘু তার গায়ে আঁচড়টিও না কেটে তাঁকে ফিরে যেতে দিয়েছিল।
১৯৯৮ সালে এক ভয়ঙ্কর ডাকাতির পর ফের নতুন মূর্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যদিও তার বহুকাল আগেই কালীবাড়ি দু’ভাগে ভাগ হয়ে যায়। এক ভাগ গেরস্ত কালীবাড়ি আর দ্বিতীয়টি পরিচিত কুখ্যাত কালীবাড়ি হিসেবে। এই কুখ্যাত কালীবাড়ির সদস্যরা পেশায় ডাকাত আর নেশায় কালীর উপাসক।