ব্রজর বাড়ির রাসে দুই মন্ত্রী
শান্তিপুশহরের ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব দেখতে শুক্রবার মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস ঘুরে গেলেন নবনির্বাচিত বিধায়ক ব্রজকিশোর গোস্বামীর বাড়ি। আসেন মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামীর বাড়ির ঐতিহ্যমণ্ডিত শ্যামসুন্দর মন্দিরের রাধাকৃষ্ণ বিগ্রহ পরিদর্শন করেন মন্ত্রী। ব্রজকিশোরও তাঁর বাড়ির এই রাস উৎসবে মেতে ওঠেন। বাড়ির রাধাকৃষ্ণের মূর্তি সামনে পুজোপাঠও করেন বিধায়ক। মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাস বলেন, শান্তিপুরের ভাঙা রাসকে কেন্দ্র করে একাধিক উৎসব হয়। ভাঙা রাস দর্শনার্থীদের কাছে খুব আনন্দের। শুক্রবারই শুরু হয় ভাঙা রাস। একদিকে নবদ্বীপ, অন্যদিকে শান্তিপুরের ভাঙা রাস দর্শনার্থীদের মন কেড়েছে। কুমারী মেয়েদের সাজিয়ে পরিক্রমা করানো হয় সারারাত। ব্রজকিশোর জানান, মানুষের কাছে রাস উৎসবের গুরুত্ব অনেক। প্রতি বছর এই দিনটির জন্য অপেক্ষা করে থাকেন এলাকার মানুষ। আমাদের গোস্বামী বাড়িতে বৈষ্ণব রীতি অনুসারে রাস উৎসব পালিত হল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে দর্শনার্থীরা প্রাণভরে দেখলেন ।
রাজবাড়ির রাস ইতিহাস
পঁচেটের রাজবাড়ির রাস উৎসব প্রায় ৫০০ বছরের প্রাচীন। ইতিহাস বলছে, একসময় রাস দুর্গাপুজোর চেয়ে কোনও অংশে কম ছিল না। করোনা আবহে রীতি মেনে পালকি চড়ে বিগ্রহ বেরোলেও অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি সাধারণ মানুষ। রাজপরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ওড়িশার আটঘর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন বাড়ির আদি পুরুষ কালামুরারি দাস মহাপাত্র। জগন্নাথ দেবের সামনে নিত্যদিন সংগীত পরিবেশন করতেন তিনি। সেই সংগীতেই মুগ্ধ হয়ে রাজা তাঁকে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দিয়েছিলেন। মন্দিরের পাশে পেয়েছিলেন জমি। পরবর্তী সময় জাহাঙ্গীরের নজরে পড়ে যান। তাঁকে বাংলা, বিহার ও তাম্রলিপ্ত বন্দর পরিচালনার দায়িত্ব দেন মোঘল সম্রাট। কাজটি তিনি সুচারুভাবে করেন এবং পটাশপুর এলাকার খাঁড়ে বিশাল গড় নির্মাণ করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে উদ্ধার হয় শিবলিঙ্গ। শিবলিঙ্গের চারপাশে বেনারস থেকে আনা আরও চারটি শিবলিঙ্গ বসানো হয়। ওই শিবলিঙ্গ দিয়েই কালামুরারি দাস মহাপাত্র তৈরি করেন পঞ্চেশ্বর মন্দির। ধীরে ধীরে পঞ্চেশ্বর নামটি প্রচার হতে থাকে। এখানেই তিনি তৈরি করেন পঁচেটগড় রাজবাড়ি। শ্রীচৈতন্যদেব যখন পটাশপুর হয়ে পুরী গিয়েছিলেন তখন জমিদার বাড়ির সদস্যরা শৈব থেকে বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষা নেন। পরে জমিদার বাড়ির কুলদেবতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন কিশোররাই জিউ। যাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর কার্তিক পূর্ণিমা থেকে শুরু হয় রাস উৎসব। আর তা থেকেই পঁচেটগড় রাজবাড়ির রাস উৎসব এখন সর্বসাধারণের উৎসব।
আরও পড়ুন : এমিরেটস টি-২০ লিগে ম্যান ইউ-সহ ছয় দল
কাঁথিতে ঐতিহ্যের রাস
পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি ১ নং ব্লকের প্রায় পাঁচশো বছরের পুরনো কাঁথি বড়মঠের আয়োজনে মদনগোপাল জিউ মন্দির প্রাঙ্গণে রাসযাত্রা ও অন্নভোগ বিতরণের সূচনা করলেন মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি। বড়মঠের মোহন্ত কেশবচন্দ্র দাস অধিকারী সকলকে স্বাগত জানান। ওড়িশা থেকে আগত মোহান্ত হরিদাস গোস্বামী প্রতিষ্ঠা করেন বর্তমানে মঠের। প্রাচীন কাঠামো ও নিদর্শ ধ্বংসের প্রহর গুনছে। শুক্রবার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রাক্তন সহকারী সভাধিপতি মামুদ হোসেন এই প্রাচীন মঠকে হেরিটেজ ঘোষণা করে সংস্কারের দাবি রাখেন। মৎস্যমন্ত্রী অখিল গিরি হেরিটেজ কর্তৃপক্ষকে সদর্থক ভূমিকা গ্রহণের জন্য জানানোর আশ্বাস দেন। ছিলেন মলয় সামন্ত, শেখ আনোয়ার উদ্দিন, রত্নদীপ মান্না প্রমুখ।
রাসে জমজমাট দাঁইহাট
নবদ্বীপ, শান্তিপুরের মতো বহুল প্রচারিত না হলেও দাঁইহাট শহরের রাস উৎসব সাবেকিয়ানা ও ঐতিহ্যে নজরকাড়া। ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ সূচনা হয়। ইতিহাস-গবেষক রণদেব মুখোপাধ্যায় জানালেন, রাস উৎসবের সূচনার সময়ে মূর্তি গড়ে পুজো হত না। তান্ত্রিক সাধকরা কালীঠাকুরের পট তৈরি করে পূর্ণিমার দিন শোভাযাত্রা করতেন। শোভাযাত্রার আলো ছিল পাট, পাটকাঠি, শন, ঘি ও মোম। পট নিয়ে দাঁইহাটে শেষ শোভাযাত্রা বের হয় ১৯৫১ সালে। নেতৃত্ব দেন স্থানীয় পাতাইহাটের কবিরাজ ও সাধক পূর্ণচন্দ্র আচার্য। এই রাস শাক্ত-বৈষ্ণবের মিলনোৎসব। দাঁইহাটবাসী শবশিবকে খুবই জাগ্রত মনে করেন।