অলোক সরকার: পণ্ডিতরা বলছিলেন আরসিবি দলটা নাকি একজনের উপর দাঁড়িয়ে। যেটা খুব বিপজ্জনক। যেদিন কোহলি রান পাবে না, সেদিন দল দাঁড়িয়ে যাবে!
রাতের ইডেন যখন প্রবল কোহলিয়ানায় আচ্ছন্ন, তখন মনে হয়নি এসব তত্ত্বে কারও আগ্রহ আছে। লোকে দুচোখ ভরে দেখছে আধুনিক ক্রিকেট গ্রেটকে। রান তাড়া যাঁর অভ্যেস। ফিল সল্ট, রজত পতিদাররা রান করলেন। কিন্তু আরসিবি জিতল বিরাটের ব্যাটে। ম্যাচ জিতিয়ে তিনি যখন ফিরছেন, তখনও খেলার বাকি ২২ বল। ৩৬ বলে ৫৯ নট আউট। চারটে চার, তিন ছক্কা। গতবার এই ইডেনে হেরে ফিরেছিল আরসিবি। শনিবার জিতল ৭ উইকেটে।
অদ্ভুত এক ম্যাচ হল ইডেনে। যেখানে সবাই আরসিবি। শাহরুখ খান টেম্পো তৈরি করে দিয়েছিলেন। একসঙ্গে নাচলেন। তার রেশ ধরে সারাক্ষণ গ্যালারি কোহলি-কোহলি করে গেল। বলা ভুল হল। সে তো কিং কোহলি শহরে পা দেওয়ার পর থেকেই। বিকেলে ধর্মতলা থেকে ময়দানের বটতলা, সবাই একেকজন কোহলি। সবার গায়ে আরসিবির জার্সি। সবার পিঠে ১৮। এই ছবি দু-বছর আগে ধোনি ম্যাচে দেখেছে কলকাতা। ইডেন জুড়ে সেদিন ছিল হলুদ বসন্ত। শনিবারের ছবিটা সামান্য আলাদা। গ্যালারি বেগুনিই থাকল, শুধু হৃদয়ে কোহলি।
২০ ওভারের ক্রিকেটে পাওয়ার প্লে-র ভূমিকা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ফিল্ডিং রেস্ট্রিকশনের মধ্যে যত পারো রান তুলে নাও। আরসিবি ৬ ওভারে ৮০/০ করে ফেলার পর নাইট ভক্তদের রাগ গিয়ে পড়ল কেকেআর কর্তাদের উপর।। সল্ট (৫৬) যত মারছেন, তত বুকফাটা আর্তনাদ বেরিয়ে আসছে। ওকে কেউ ছেড়ে দেয়! আমরা তৈরি করলাম, আরসিবি নিয়ে গেল! ২৫ বলে হাফ সেঞ্চুরি, সল্ট ততক্ষণে আরসিবিকে ড্রাইভিং সিটে বসিয়ে দিয়েছেন।
বিপদ বুঝে রাহানে বরুণকে নিয়ে আসেন। লাভ হল এই যে ঝড়ের মুখে এক ওভারে ২১ রান দিয়ে গেলেন! কিন্তু সেই বরুণই সল্টকে ফেরালেন। আরসিবি তখন ৯৫/১। দাঁড়ান, উল্টোদিকে বিরাট এতক্ষণ চুপচাপ দেখছিলেন। এবার ইডেন জুড়ে শুরু হল কোহলির শাসন। অদ্ভুত নিয়ন্ত্রণ নিজের উপর। যে অফ স্ট্যাম্পের বল নিয়ে এত কথা, গেলেনই না সেদিকে। মোটামুটি ভি শেপের মধ্যে খেলে ম্যাচ নিয়ে গেলেন। শুধু মাঝে মাঝে উইথ দ্যা টার্ন মিড উইকেটে খেললেন। বাকিটা নিরাপদ ব্যাটিং। এত সহজে কেকেআর ম্যাচ ওরা নিয়ে যাবেন কে ভেবেছিল?
আরও পড়ুন-মা দুর্গাকে টিপ পরিয়ে প্রণাম করে লন্ডনযাত্রা শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী
আগের ছবিটা ছিল অন্যরকম। দশমীর ঠাকুর ভাসানের পর খালি মণ্ডপ ঘিরে যে শূন্যতা তৈরি হয়, কুইন্টন ডি’ককের আউটের পর সেটাই মনে হল। একটু আগেও শাহরুখের সঙ্গে রিঙ্কু আর বিরাটের নাচ দেখেছে ইডেন। দিশা পাটনি তরুণ হৃদয়ে ঝড় তুলে দেন। শ্রেয়া ঘোষাল সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু ডি’ককের (৪) আউটে উৎসবের আবহে হঠাৎ বেসুরো গান বাজতে শুরু করল। কে জানত, ম্যাচের শেষেও এই ছবি দেখা যাবে!
অথচ একটু আগেও মনে হচ্ছিল, পিকচার আভি বহুত বাকি হ্যায়! যে কেকেআর প্রথম ৩ ওভারে ৯ রান করেছিল, তারাই ৬ ওভারের শেষে ৬০/১। আরসিবি টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিল। পাতিদার ডি’ককের লোপ্পা ক্যাচ ফেলে দেওয়ার পর ধাক্কাটা লম্বা হয়নি উইকেটটা দ্রুত চলে যাওয়ায়। কিন্তু রাহানে এরপর যে ব্যাটিং করলেন সেটা চোখ কচলে দেখার মতো। নারিনকে দাঁড় করিয়ে রেখে হাফ সেঞ্চুরিতে পৌঁছে গেলেন ২৫ বল খেলে।
আগের দিন বৃষ্টি হওয়ায় উইকেটের নিচে যে আর্দ্রতা ছিল, সেটা কাজে লাগাতে দুটো দলই এদিন তিন পেসার, দুই স্পিনারে গেল। কিন্তু আরসিবি শুরুতে ডি’কককে তুলে নেওয়ার পর রাহানে ও নারিনের ১০৩ রানের পার্টনারশিপ কেকেআরকে ভদ্রস্থ জায়গায় পৌঁছে দেয়। সিমাররা তখন সুবিধা পাননি। কিন্তু আইপিএল এমন এক টুর্নামেন্ট যেখানে কেউ জানে না কখন হাওয়া ঘুরবে। ঠিক যেমন নাইটরা ১০৭/১ থেকে দুম করে ১৪৫/৫ হয়ে গেল। নারিন ৪৪, রাহানে ৫৬, ভেঙ্কটেশ আইয়ার ৬, রিঙ্কু ১২। উইকেট পরের দিকে শুকিয়ে আসার ফলে ক্রুণাল পান্ডিয়া টার্ন পেলেন। ৪ ওভারে ২৯ রান দিয়ে ৩ উইকেট নিয়ে গেলেন।
অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার আগের দিন প্রেসকে বলেছিলেন, ক্রুনাল আর সুয়শ শর্মার উপর তাঁদের প্রচুর ভরসা। ক্রুনাল ভাল বল করলেন। সুয়শ অবশ্য রাসেলের (৪) উইকেট নিলেও ৪৭ রান দিয়েছেন। একসময় কেকেআরে খেলে গিয়েছেন সুয়শ। মাঝে অস্ত্রোপচারের জন্য খেলার বাইরে ছিলেন। রিহ্যাব সেরে সোজা আইপিএলে নেমেছেন। নাইটরা যে শেষপর্যন্ত ১৭৪/৮ করতে পেরেছে সেটা শেষদিকে অঙ্গকৃশ রঘুবংশী ৩০ রান করে যাওয়ায়। রাহানে, নারিন আর রঘুবংশীকে বাদ দিলে কেকেআর ব্যাটিং এদিন ক্লিক করেনি। তবে বিরাট যেভাবে ব্যাট করলেন তাতে কোনও রানই বোধহয় নিরাপদ ছিল না এদিন।