যে কারণে নয়াদিল্লি স্টেশনের দুর্ঘটনা

রেল সুরক্ষা দূর অস্ত। মানুষের এখন আতঙ্কের রেলযাত্রা। করমণ্ডল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ঘা শুকোতে না শুকোতেই নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে।

Must read

প্রতিবেদন : রেল পরিষেবা শিকেয়। যাত্রী নিরাপত্তা শূন্য। রেল সুরক্ষা দূর অস্ত। মানুষের এখন আতঙ্কের রেলযাত্রা। করমণ্ডল থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনার ঘা শুকোতে না শুকোতেই নয়াদিল্লি রেলস্টেশনে। এতদিন রেলগাড়িতে নিরাপত্তা না থাকার প্রশ্ন উঠেছে। এবার স্টেশন চত্বরেও সেই প্রশ্ন উঠল। স্টেশনে হুড়োহুড়ি, ঠেলাঠেলিতে পদপিষ্ট এবং ১৮ জনের মৃত্যু। এমন অপদার্থ রেলমন্ত্রক আগে কোনওদিন আসেনি। শনিবারের দুর্ঘটনার ময়নাতদন্ত থেকে যে রিপোর্ট এসেছে তাতে দেখা যাচ্ছে— ১. প্ল্যাটফর্মে দুটি ট্রেন আসার কথা ছিল। একটি প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেস, অন্যটি প্রয়াগরাজ স্পেশাল। যাঁরা ঘোষণা করছিলেন তাঁরা এই বিষয়টি পরিষ্কার করেননি। ফলে কয়েক হাজার মানুষ বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।

আরও পড়ুন-উন্নয়নের কর্মযজ্ঞে আরও বেশি করে থাকবেন অধ্যাপকরা: ব্রাত্য

প্রয়াগরাজ স্পেশাল ১৬ নম্বরে আসছে শুনে প্রয়াগরাজ এক্সপ্রেসের যাত্রীরাও সেদিকে ছুটতে থাকেন। অথচ তখন ১৪ নম্বরে দাঁড়িয়ে সেই ট্রেন। অপদার্থ রেল প্রশাসন ঘোষণা করে এই বিভ্রান্তি দূর করেনি। আর তার ফলেই বিশৃঙ্খলা। পদপিষ্ট এবং মৃত্যু।

২. একাধিক ট্রেন দেরিতে এসেছে নয়তো বাতিল হয়েছে। একের পর এক যাত্রী প্ল্যাটফর্মে হাপিত্যেশ করে বসে থেকেছেন। অপদার্থ রেল প্রশাসন প্রতি ঘণ্টায় দেড় হাজার অসংরক্ষিত টিকিট বিক্রি করেছে। ফলে স্টেশনে কম করে ২০ হাজার মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিল। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাচ্ছে জেনেও কেন রেল প্রশাসন টিকিট বিক্রি বন্ধ করেনি এবং প্ল্যাটফর্মে যাতে দুর্ঘটনা না ঘটে তার জন্য বাহিনীকে নামায়নি?

৩. দুর্ঘটনার ভিডিও যাঁরা দেখেছেন তাঁরা দেখতে পাবেন, কোনও নিরাপত্তারক্ষী বা জওয়ানকে দেখতে পাওয়া যায়নি। অথচ রেল চত্বরে সুরক্ষার দায়িত্ব তাদেরই। মাইকের ঘোষণা শুনতে না পেয়ে মানুষ এদিক-ওদিক ছুটোছুটি করছে, এই পরিস্থিতি বোঝার জন্য রেলের কোনও স্বেচ্ছাসেবকও উপস্থিত ছিল না স্টেশনে। কুম্ভমেলায় রেলের সংরক্ষিত আসনেও সাধারণ টিকিট কেটে যাত্রীরা যাতায়াত করেছেন। এদৃশ্য দেখার পরেও চেতনা ফেরেনি রেলমন্ত্রকের।

আরও পড়ুন-আতঙ্কের রেলযাত্রা, প্রাণহানি-বিশৃঙ্খলা

৪. ক্রাউড ম্যানেজমেন্ট সম্বন্ধে ন্যূনতম ধারণা নেই রেল পুলিশের। মৃত্যুর পর এদের লাঠি উঁচিয়ে এগোতে দেখা যায়। কিন্তু আসলে এরা নিতান্তই নিষ্কর্মা। ৫. রেলকে সুষ্ঠুভাবে চালানোর জন্য ঘোষকদের একটা বড় ভূমিকা আছে। কিন্তু বর্তমান রেলের অধিকাংশ ঘোষকের অর্ধেক কথা বোঝা যায় না। এবং মানুষকে বোঝানোর জন্য যেভাবে বলা উচিত সেটাও কেউ শিখে আসেননি। ৬. রেলমন্ত্রের অবস্থা এখন ভাগের মা গঙ্গা পায় না’র মতো। রেলে পৃথক বাজেট তুলে দিয়েছে সরকার। রেল দুর্ঘটনা এড়াতে অ্যান্টি কলিশন ডিভাইস ১৫ বছরেও বসাতে পারেনি মোদি সরকার। রাস্তার উপর রেলগেটও নেই। রেলের পরিষেবা নিয়ে সর্বত্র প্রশ্ন। রেলের কামরায় নিরাপত্তা এখন আতঙ্ক। এই পরিস্থিতিতে রেল দুর্ঘটনা এখন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

Latest article