সরকারি ও বেসরকারি ব্যাঙ্কে রেকর্ড ঋণ মকুব মোদি জমানায়

অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ৮,৮৬৫ কোটি টাকা ঋণ মকুব করলেও ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১,৮৩৩ কোটি টাকা।

Must read

প্রতিবেদন : একদিকে অনাদায়ী ঋণখেলাপিরা সরকারি ব্যাঙ্কগুলিকে পথে বসিয়ে দেশ ছেড়ে পালাচ্ছেন, অন্যদিকে কোটিপতি শিল্পপতিদের হাজার হাজার কোটির ঋণ মকুব করছে কেন্দ্র। মোদি জমানায় এটাই এখন চেনা ছবি। দেখা যাচ্ছে, ভারতের ব্যাঙ্কিং খাতে ঋণ মকুবের পরিমাণ ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। দেশের বৃহত্তম ঋণদাতা স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (এসবিআই) ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে যেখানে ১৭,৬৪৫ কোটি টাকা ঋণ মকুব করেছিল, সেখানে ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে তা বেড়ে হয়েছে ২৬,৫৪২ কোটি টাকা। এই বৃদ্ধির হার এক বছরে প্রায় ৫০ শতাংশ। পাশাপাশি বেসরকারি খাতের অন্যতম প্রধান ঋণদাতা আইসিআইসিআই ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রেও একই প্রবণতা দেখা গিয়েছে। ২০২৩- ২৪ আর্থিক বছরে ৬,০৯১ কোটি টাকা থেকে ঋণ মকুবের অঙ্ক ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯,২৭১ কোটিতে। অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরে ৮,৮৬৫ কোটি টাকা ঋণ মকুব করলেও ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১১,৮৩৩ কোটি টাকা।

আরও পড়ুন-জ্যোতি-কাণ্ডের জেরে ছবি তোলায় নিষেধাজ্ঞা মনে করিয়ে দিল রেল

দেশ জুড়ে ঋণমকুবের এই ঊর্ধ্বগামী প্রবণতা শুধুমাত্র বৃহৎ ব্যাঙ্কগুলির মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। একাধিক মাঝারি আকারের বেসরকারি ব্যাঙ্কও এই জমানায় একই ধারা অনুসরণ করছে। যদিও সরকারি খাতের ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক কাঠামো তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল, তবে ঋণ মকুবের সামগ্রিক উত্থানকে বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতের জন্য একটি অর্থনৈতিক সতর্ক সংকেত হিসেবে দেখছেন। এসবিআই-এর চেয়ারম্যান সি এস শেঠি জানান, ঋণমকুব মূলত ছোট অঙ্কের ঋণের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ, বিশেষ করে এসএমই এবং কৃষি খাতে। তিনি বলেন, যখন কোনো অ্যাকাউন্ট ১০০% প্রভিশন কভারেজে পৌঁছে যায়, তখন সেটিকে হিসাব থেকে বাদ দিয়ে পুনরুদ্ধার টিমের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এটি একটি চলমান প্রক্রিয়া। অন্যদিকে, অ্যাক্সিস ব্যাঙ্কের এক্সিকিউটিভ পুনীত শর্মা বলেন, তাদের ঋণ মকুবের পদ্ধতি পুরোপুরি নিয়মভিত্তিক এবং এতে কোনও বিচক্ষণতা প্রয়োগ করা হয় না। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই)-এর ডিসেম্বর ২০২৪ সালের আর্থিক স্থিতিশীলতা রিপোর্টেও ঋণমকুবের এই প্রবণতার প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, সম্পদের গুণমানের অবনতি এবং দুর্বল আন্ডাররাইটিং মান ঋণমকুব বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হতে পারে। ২০২০ থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে সরকারি খাতের ১২টি ব্যাঙ্ক প্রায় ৭ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করেছে, যা পরিস্থিতির গভীরতাকে স্পষ্ট করে তোলে। এই তথ্য ২০২৪ সালে সংসদে অর্থ প্রতিমন্ত্রী পঙ্কজ চৌধুরী এক লিখিত উত্তরে প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ব্যাঙ্কগুলি আরবিআই-এর নির্দেশিকা ও নিজ নিজ বোর্ড-অনুমোদিত নীতিমালার ভিত্তিতে এমন সব সম্পদ মকুব করে যেগুলিতে চার বছর পূর্ণ হয়ে গেছে এবং পুরোপুরি প্রভিশন করা হয়েছে। তবে ঋণ মকুবের এই চিত্র নিয়ে সমালোচনার অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে স্বচ্ছতার অভাব। বড় কর্পোরেটদের কতটা ঋণমকুব হয়েছে, সে বিষয়ে কোনও বিশদ তথ্য সামনে আসেনি। অথচ কৃষকদের ছোট অঙ্কের ঋণমকুব সংক্রান্ত তথ্য প্রায়শই প্রকাশ পায়, যা আর্থিক ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন তোলে। পাল্টা ব্যাঙ্কগুলির যুক্তি, ঋণমকুব একটি হিসাবনিকাশ সংক্রান্ত প্রক্রিয়া এবং এতে ক্ষতির কিছু নেই। কিন্তু জনগণের অর্থে পরিচালিত এই প্রতিষ্ঠানগুলির ক্ষেত্রে বৃহৎ অঙ্কের ঋণ মকুবের পেছনে যেসব কর্পোরেটদের নাম লুকিয়ে থাকে, তা সামনে না আনা হলে জন আস্থার সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে।
এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঋণমকুব প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিশ্চিত না করা হলে ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থার প্রতি জনসাধারণের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Latest article