ওবিসি সংরক্ষণে ধর্মের যোগ নেই, বিধানসভায় সাফ জানালেন মুখ্যমন্ত্রী

Must read

রাজ্য সরকারের ওবিসি সংরক্ষণ নীতিতে আদালতের নির্দেশ মেনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনা হয়েছে, যা মন্ত্রিসভায় পাশ হয়েছে। বিধানসভার বাদল অধিবেশনের দ্বিতীয় দিন সেই সংশোধনী নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় (CM Mamata Banerjee) বক্তব্য পেশ করতে উঠলেই হট্টগোল করে তা বাতিল করে দেওয়ার চেষ্টা চালায় বিরোধীরা। বিজেপি বিধায়করা বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে ওবিসি সংরক্ষণে বিশেষ ধর্মকে প্রাধান্যর ভুয়ো দাবি তুলে বিধানসভায় অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা চালায়। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেন, ওবিসি সংরক্ষণ নীতির সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে সমীক্ষার মধ্যে দিয়ে এই তৈরি হবে ওবিসি তালিকা। বিজেপির হট্টগোলের জেরে সাময়িকভাবে স্থগিত হয়ে যায় বিধানসভার মঙ্গলবারের অধিবেশন।

ওবিসি সংরক্ষণের ফলে পঠন পাঠন থেকে চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা পাবেন রাজ্যের মানুষ। সেই উদ্দেশ্যেই রাজ্য সরকার নতুনভাবে ওবিসি তালিকা তৈরির কাজ শুরু করলে বারবার বিরোধীদের মামলার জেরে সেই প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। বর্তমানেও কলেজে ভর্তি সংরক্ষণের জটিলতায় আটকে রয়েছে। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তাই দ্রুত সেই সমস্যার সমাধানের জন্য আদালতের নির্দেশ মেনে শুরু হয়েছে সমীক্ষার কাজ। সেই প্রসঙ্গেই মঙ্গলবার বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) জানান, ওবিসি নিয়ে কলকাতা হাইকোর্ট একটি রায় দেয়। তার ফলে অনেকেই ওবিসি তালিকা থেকে বাদ পড়েন। এর ফলে বিপদে পড়েন রাজ্যের চাকরি প্রার্থীরা। কলকাতা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে রাজ্য। সেই মামলা বিচারাধীন। সেই নির্দেশ অনুযায়ী সমীক্ষা চলছে। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সমীক্ষা শেষ হবে।

মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে রাজ্যের উন্নয়নের বার্তা স্পষ্ট হতেই বিরোধিতার পথে বিজেপি বিধায়করা। ধর্মের জিগির তুলে বক্তব্যকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যান বিজেপি বিধায়করা। সেখানেই মুখ্যমন্ত্রী ফের স্পষ্ট করে দেন, ওবিসি সংরক্ষণের সঙ্গে ধর্মের কোনও সম্পর্ক নেই। এই সমীক্ষা আর্থিক অনগ্রসরতার ভিত্তিতে হয়েছে। যাঁরা আর্থিকভাবে খুব পিছিয়ে পড়েছেন তাঁদের ওবিসি-এ তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এবং যাঁরা কম পিছিয়ে তাঁদের ওবিসি-বি তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। মোট ১৪০টি সম্প্রদায়কে তালিকার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। ওবিসি এ বিভাগে ৪৯টি এবং ওবিসি বি বিভাগে ৯১টি শ্রেণি রয়েছে। এর মধ্যে ৬১টি শ্রেণি রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের এবং ৭৯টি শ্রেণি রয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। আরও ৫০টি শ্রেণি এই তালিকাভুক্ত হবে। সমীক্ষা চালানো হচ্ছে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া এতদিন বন্ধ ছিল। এবার সার্টিফিকেট পাওয়া শুরু হবে।

আরও পড়ুন- বেআইনিভাবে বাংলার ২২ হাজার কোটি পেল বিজেপির তিন রাজ্য

দীর্ঘদিন বাম আমলে রাজ্যের এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যে কোনও কাজ হয়নি তা স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী জানান, আইন অনুযায়ী এটা করা হয়। যা আমি আজ বিধানসভায় জমা রাখছি। প্রচারের ব্যবস্থা করা হয় ব্যাপক ভাবে। কমিশন বেঞ্চমার্ক দেওয়ার কাজ শুরু করেছে। কমিশন সমীক্ষার কাজে হাত দিয়েছে। বাম আমলে সমীক্ষা হয়নি। ২০১২-২০২৪ অবধি সমীক্ষার ব্যাপারে কথা বলা হয়। সম্ভবত সেই সময়ে উপেন বিশ্বাস ছিলেন কমিশনের মাথায়। যথাযথ পদ্ধতি মেনেই কাজ করা হচ্ছে। এখানে হাইকোর্টের নির্দেশ প্লেস করলাম, যাতে কারও সন্দেহ না থাকে। হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ বিধানসভায় পেশ করছি।

তথ্য পেশের পাশাপাশি বিরোধিদের মিথ্যা প্রচারকে এদিন বিধানসভায় ধুয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, কমিশন রেকমেন্ডশন জানিয়ে দিলাম। অনেকে ভুল প্রচার করছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় আজকাল ফেক নিউজ, ভেক নিউজ ভরে গেছে। তাই সঠিক তথ্য আমরা বিধানসভায় পেশ করলাম। আশা করি বিভ্রান্ত ছড়ানো, বা মানুষের মধ্যে ভাগাভাগি করবেন না।

Latest article