রিমেল-মুক্ত বাংলা

দুর্যোগের রাত কাটিয়ে ফের স্বস্তিতে রাজ্যবাসী। সুন্দরবন-সহ দুই ২৪ পরগনা ছুঁয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে গেল ঘূর্ণিঝড় রিমেল।

Must read

প্রতিবেদন : দুর্যোগের রাত কাটিয়ে ফের স্বস্তিতে রাজ্যবাসী। সুন্দরবন-সহ দুই ২৪ পরগনা ছুঁয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে গেল ঘূর্ণিঝড় রিমেল। তবে রিমেলের দাপটে লন্ডভন্ড হয়ে গেল সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। কলকাতা ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলিও সাক্ষী হল রেকর্ড বৃষ্টির। রাজ্যের দক্ষিণে এমন ভয়ঙ্কর দুর্যোগের হাত থেকে দ্রুত নিষ্কৃতি মিলল প্রশাসনের দুরন্ত তৎপরতায়। রাজ্য ও জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি রাতভর অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে বিদ্যুৎ দফতর, পুরসভা, দমকল ও বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। নির্বাচনী ব্যস্ততার মধ্যেও এবার আগে থেকেই দুর্যোগ মোকাবিলায় সর্বস্তরে প্রস্তুত ছিল প্রশাসন। মুখ্যসচিব থেকে শুরু করে রাজ্যের সম্পূর্ণ সচিবালয়, জেলা থেকে ব্লক প্রশাসন, দুর্যোগের মোকাবিলায় সবাই এককাট্টা হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল। প্রায় ২ লক্ষ মানুষকে ১৪০০টি নিরাপদ শিবিরে সরানো হয়েছিল। এ-জন্য রাজ্য ও স্থানীয় প্রশাসনকে ধন্যবাদও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-জন-আবেগে ভাসলেন অভিষেক

আমফানের পর ফের আরও এক বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছিল রাজ্য। এখনও ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত হিসাব করা হয়নি। তবে প্রাথমিক সমীক্ষাতেই বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আভাস মিলেছে। ২৪টি ব্লক এবং ৭৯টি ওয়ার্ডে তাণ্ডব চালিয়েছে রিমেল। ৩০ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ২৫০০টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত। রাস্তাঘাট, বাঁধ-সহ অন্যান্য পরিকাঠামো, শস্যহানির সঠিক অঙ্ক এখনও অজানা। কারণ, এখনও জলের তলায় অনেক এলাকা। ক্ষয়ক্ষতির পর্যোলোচনা চলছে। রাজ্য সরকার ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় দ্রুত ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এদিনও মুখ্যসচিব ভগবতীপ্রসাদ গোপালিকার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলে ত্রাণের কাজ কতটা এগোচ্ছে তা জানতে চান। রাজ্য সরকারের তরফে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকতে কোনও ত্রুটি হবে না বলেও তিনি আশ্বাস দিয়েছেন। কিন্তু আশঙ্কা রয়েছে কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে। আমফানের ক্ষতিপূরণের টাকা এখনও দেয়নি কেন্দ্র। ক্ষতিপূরণ বাবদ রাজ্যের তরফে যে দাবি করা হয়েছিল মেলেনি তার সিকিভাগও। এবারের ওই ঘূর্ণিঝড়ের পর পরই প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ভিডিয়ো বার্তায় কথা বলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পর তিনি জানিয়েছিলেন, আমফানে ৩৫ হাজার কোটি টাকার আর্থিক সাহায্য চাওয়া হয়েছে। কিন্তু কেন্দ্র এখনও পর্যন্ত ১ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। আমফানের কারণে কত ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা সরেজমিনে দেখতে বাংলায় টিম পাঠিয়েছিল কেন্দ্র। কিন্ত সেইটুকুই। এরপর মেলেনি এক পয়সাও।

আরও পড়ুন-জনপ্লাবন-আবেগ-উচ্ছ্বাস

মঙ্গলবারই আকাশপথে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যেতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার কারণে বুধবার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনে যাবেন তিনি। তবে রিমেলের তাণ্ডবে ক্ষয়ক্ষতির মোকাবিলা ও দুর্গতদের উদ্ধারে রাজ্য প্রশাসন যেভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছে, পুলিশ থেকে উদ্ধারকারী দল যেভাবে উপকূলবর্তী এলাকায় লাগাতার কাজ করেছে, তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী। মঙ্গলবার সকালে তিনি এক্স হ্যান্ডেলে লেখেন, আমি ঘূর্ণিঝড় রিমেলের থেকে সবার নিরাপত্তার জন্য প্রার্থনা করছি এবং মৃতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। ত্রাণকাজে সতর্ক নজর রাখার পাশাপাশি যাঁরা এই ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করছেন আমি আমার সেই ভাই-বোনদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আমরা করব জয়!

Latest article