দেবযানী বসু কুমার: আজ সকালে সূর্য উঠবো উঠবো করেও উঠলো না। অসময় আঁধার নেমে এলো বাঙালির মনে। আপামর বাঙালি দেখলো একটা তারা খসে পড়লো। হ্যাঁ চলে গেলেন বাঙালির প্রিয় সংগীত শিল্পী প্রতুল মুখোপাধ্যায়। সামনে বসে আর কোনোদিন শোনা হবেনা ওনার কণ্ঠে— ‘আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই।’ এই গান ছাড়া দেশপ্রিয় পার্কার ভাষা দিবসের মঞ্চ যেন আলুনি। এই গান ছিল ওনার signature song। এই গান যেখানেই বাজে ভেসে উঠে ওনার মুখ। শুধু আমার নয়। মনে হয় সবাই একই কথা বলবেন। যবে থেকে দেশপ্রিয় পার্কে ভাষা মঞ্চ তৈরী হয়েছে আর বর্তমান সরকার একুশে ফেব্রুয়ারীতে ভাষা শহীদদের কথা স্মরণ করে অনুষ্ঠানের সূচনা করেছেন তবে থেকে দর্শকাসনে বসে প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে শুনে আসছি— আমি বাংলায় গান গাই, আমি বাংলার গান গাই। ওনার এই গান উনি শুধু কথা, সুর, তাল লয় দিয়ে গাইতেন না, উনি গাইতেন হৃদয় দিয়ে তাই কোনও বাদ্যযন্ত্রের প্রয়োজন হতো না। উনি গাইতেন খোলা গলায় উদাত্ত কণ্ঠে। যতদিন বাংলা ভাষা থাকবে ততদিন এ গানের কদর থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন এ গান লোকের মুখে মুখে ফিরবে যতদিন বাংলা গান থাকবে। আর এই গানের সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে উনি বেঁচে থাকবেন সংগীতপ্রেমীদের হৃদয়।
আরও পড়ুন-পঞ্চানন বর্মা কে ছিলেন সেটা বোঝা ও জানা জরুরি
গায়ক গীতিকার সুরকার প্রতুল মুখোপাধ্যায় জন্মেছিলেন অবিভক্ত বাংলার বরিশালে ২৫ সে জুন ১ ৯ ৪২ সালে। দেশভাগের সময় পরিবারের সঙ্গে চলে আসেন পশ্চিম বাংলায়। খুব সাধারণ ছাপোষা জীবন যাপন ছিল ওনার। দীর্ঘ রোগভোগের পর আজ অর্থাৎ ১৫ ই ফেব্রুয়ারি নিজের গানের পঙক্তি মেনেই যেন উনি আজ অচেনা সাগরে ডিঙা ভাসালেন ৮৩ বছর বয়সে। শোকস্তব্ধ বাংলার সংগীত দুনিয়া। ওনার মতো গুণী মানুষের জন্য বাংলা গর্বিত। বাংলার সংগীত জগতের যে অপূরণীয় ক্ষতি হলো তা আর পূরণ হবার নয়।বর্তমান সরকার তাঁকে সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত করে নিজেরাই সম্মানিত হয়েছেন। প্রতুল মুখোপাধ্যায় ছিলেন মনে প্রাণে অসাম্প্রদায়িক। ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের উনি ছিলেন এক সক্রিয় কন্ঠ। যে কোনো গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মোকাবিলা করতেন গানা গানে। আর কদিন পর ভাষা দিবস। ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে ভাষা শহীদ মঞ্চে আর ওনার সেই গান শুনতে পাব না সামনে বসে। মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি প্রতুল মুখোপাধ্যায়ের মত মানুষের শরীরী মৃত্যু হলেও ওনারা বেঁচে থাকেন জনগণের মনে।