প্রতিবেদন : শনিবার দুপুরে অভিভাবকোচিত আন্তরিকতায় জুনিয়র ডাক্তারদের ধরনায় পৌঁছে গেলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। বেনজির এই পদক্ষেপে রাজ্য জুড়ে চাঞ্চল্য ছড়ায়। বৃষ্টি মাথায় করেই মুখ্যমন্ত্রী আন্দোলনকারীদের আবেদন জানিয়ে বলেন, আমার উপর আস্থা রাখুন, কাজে ফিরুন। আপনাদের সব দাবি বিবেচনা করব। আমাকে একটু সময় দিন। সামনেই সুপ্রিম কোর্টের শুনানি। কথা দিচ্ছি আপনাদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হবে না। মুখ্যমন্ত্রী (CM Mamata Banerjee) নয়, দিদি হিসাবে এটাই আমার শেষ চেষ্টা।
সারা রাত ঘুমোইনি : শুরুতেই জুনিয়র ডাক্তারদের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কাল সারা রাত ঝড়-বৃষ্টি হয়েছে। আপনারা জেগে। কষ্ট পাচ্ছেন। আপনারা রাস্তায় থাকলে পাহারাদারকে জেগে থাকতে হয়। আপনাদের আন্দোলনকে কুরনিশ জানাই। আমার নিরাপত্তাজনিত নানা নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবু ছুটে এসেছি। আমিও ছাত্র আন্দোলন থেকে উঠে এসেছি। তাই ৩৪ দিন আমিও ভাল করে ঘুমোতে পারিনি। মুখ্যমন্ত্রী ফিরে যাওয়ার পর জুনিয়র ডাক্তাররা মেইল পাঠিয়ে বৈঠকে বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আজ সন্ধ্যা ৬টায় কালীঘাটে ডেকে নেন বৈঠকের জন্য।
কাজে ফিরুন : মুখ্যমন্ত্রী আবারও স্পষ্ট ভাষায় জানান, তিলোত্তমা বিচার পাক আমিও চাই। আমরা চাই, অপরাধীদের তিন মাসের মধ্যে ফাঁসি হোক। আমার ওপর আস্থা, ভরসা রাখুন। আপনারা কাজে ফিরুন। আপনাদের দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে খতিয়ে দেখব। ভাবব, চিন্তা করব। বললেই তো ব্যবস্থা নেওয়া যায় না! তদন্ত করে যদি কেউ দোষী সাব্যস্ত হন, তিনি শাস্তি পাবেন। এটুকু বলতে পারি, আপনাদের উপর কোনও অবিচার হবে না। সময় দিন, আমি সাধ্যমতো সাহায্য করব। আমি মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে নই, আপনাদের কাছে দিদি হিসাবে বলছি, অনেক মানুষ মারা যাচ্ছেন, আপনারা দয়া করে কাজে যোগ দিন।
ডাক্তারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নয় : জুনিয়র ডাক্তারদের বিরুদ্ধে আমি কোনও অ্যাকশন নেব না। ধরনা মঞ্চে দাঁড়িয়ে বলে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর কথায়, আপনাদের আন্দোলনে আমার সহানুভূতি রয়েছে। আমিও তিলোত্তমার বিচার চাই। সিবিআই দ্রুত এর বিচার দিক। ১৭ তারিখ মঙ্গলবার আবার সুপ্রিম কোর্টে শুনানি রয়েছে। আমি চাই না আপনাদের কোনও ক্ষতি হোক। আপনারা কাজে ফিরুন এটাই আমি চাই। আমি আপনাদের প্রতি কোনও অবিচার করব না। হাসপাতালের উন্নতি, পরিকাঠামোর উন্নয়ন সব কাজ আমরা শুরু করে দিয়েছি এবং করবও। ভরসা রাখুন।
আরও পড়ুন: ট্রলারডুবি, ১২ জন বাংলাদেশি মৎস্যজীবীকে বাঁচাল ভারতীয়রা
রোগী কল্যাণ সমিতি ভাঙলেন : আরজি কর-সহ রাজ্যের সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং মাল্টি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, এই রোগী কল্যাণ সমিতির কাজ সম্পর্কে আমার জানার কথা নয়। এরপরে আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হবেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অধ্যক্ষই। সঙ্গে থাকবেন জুনিয়র ডাক্তারদের একজন, পুলিশ, একজন জনপ্রতিনিধি, একজন নার্স। তাঁরাই হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে আলোচনা করবেন।
আমার বন্ধু নয় : মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যাদের আমার বন্ধু বলে মনে করছেন, তাদের আমি চিনিই না। তারা আমার বন্ধুও নয়-শত্রুও নয়। আইনি পথে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে আইন তার মতো করে ব্যবস্থা নেবে। এরা সব একটি নির্দিষ্ট নিয়মের মধ্য দিয়ে জায়গা পায়। সমস্তটা চূড়ান্ত হওয়ার পর আমার কাছে আসে। আমার পক্ষে আগে থেকে জানা সম্ভব নয়। আমাকে যাদের বন্ধু বলে ভাবছেন, তারা আমার কেউ নয়। মাত্র এক মাস যারা এসেছে তাদের কেউ যদি খুন, দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত থাকে সাধ্যমতো ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করব।
যে যা দেবে খাবেন না : ডাক্তারদের ধরনা মঞ্চে গিয়ে খাবার নিয়ে সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখানে অনেক মানুষ খাবার নিয়ে হাজির হচ্ছেন। ধরনা মঞ্চের সকলে সেগুলোই খাচ্ছেন। ফলে যে কোনওরকম বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতেই আগাম সতর্ক করলেন মুখ্যমন্ত্রী। কারণ তিনি এই বাংলার প্রত্যেকটি মানুষের পাহারাদার।