ওটিটি প্ল্যাটফর্মে ডেবিউ করলেন বলিউড অভিনেত্রী অনন্যা পান্ডে। ওয়েব সিরিজ ‘কল মি বে’র (Call me Bae) মাধ্যমে। গতকাল, ৬ সেপ্টেম্বর অ্যামাজন প্রাইমে মুক্তি পেয়েছে সিরিজটি। শ্যুটিং শুরু হয়েছিল ২০২৩ সালে। ৫৫ দিন পর ২০২৩-এর অক্টোবরে শ্যুটিং শেষ হয় এবং পোস্ট-প্রোডাকশন জুলাই ২০২৪-এ শেষ হয়। ট্রেলার সামনে আসার পর থেকেই আগ্রহ তৈরি হয়েছিল। বিশেষত জেন ওয়াই দর্শকদের মধ্যে।
নির্ভেজাল কমেডি ড্রামা। সেই অর্থে কোনও সিরিয়াস স্টোরি নেই। ধর্মা প্রোডাকশনের ব্যানারে প্রযোজনা করেছেন করণ জোহর। তাঁর ছবি যেমন মুচমুচে মশালাদার, বিনোদন-প্রধান হয়, সিরিজটিও তেমনই। ঝকঝকে। স্টাইলিস্ট। স্মার্ট। উপস্থাপনায় নতুনত্ব থাকলেও, ঈশিতা মৈত্র, সামিনা মোটেকার, রোহিত নায়ার রচিত সিরিজটি একেবারেই ফাঁপা। অন্তঃসারশূন্য। পরিচালনা করছেন কলিন ডি’কুনহা।
গল্পটা কীরকম? অনন্যা পান্ডে অভিনীত চরিত্রের নাম বেলা চৌধুরী বা বে। আপাতদৃষ্টিতে তাঁর জীবনটি নিখুঁত। রীতিমতো রূপকথার মতো। পরিবার অত্যন্ত ধনী। বিত্তশালী। সোনার চামচ মুখে বেলার জন্ম। অভাব নেই না কিছুর। আপদমস্তক ব্র্যান্ডে মোড়া তিনি। জীবন লড়াই সম্পর্কে কোনও জ্ঞান নেই। যাপন করেন বিন্দাস জীবন। সমস্যা হল তাঁর পরিবারের সদস্যদের মাটির সঙ্গে কোনও যোগ নেই। তাঁরা অর্থ দিয়ে সবকিছু কিনতে চান। এমনকী মনও! প্রথম প্রথম সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। তবে একটা সময়ের পর বদলে যায় পরিস্থিতি। বেলাকে ঘিরে ধরে চরম একাকিত্ব। তখন তাঁর জীবন অন্য দিকে বাঁক নিতে চায়। আইডেন্টিটি তৈরি করতে চায় বেলা। স্বাধীনভাবে দাঁড়াতে চান নিজের চেষ্টায়। সম্পূর্ণ নতুন শহরে শুরু হয় তাঁর একক লড়াই। তিনি সাংবাদিকতা পেশার প্রতি আকৃষ্ট হন এবং মিডিয়া হাউসের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পাশে পেয়ে যান কয়েকজন বন্ধুকে। তাঁরা বাড়িয়ে দেন সহযোগিতার হাত। অনেক চেষ্টার পর বেলা একটি মিডিয়া হাউসে চাকরি পায়। তারপর মধ্যবিত্ত জীবনের সঙ্গে পরিচয় ঘটতে থাকে তার। জানতে পারে অটোরিকশা, স্ট্রিটফুড ইত্যাদি সম্পর্কে। ধীরে ধীরে বদলে যায় বেলার জীবন।
আরও পড়ুন: হোটেলে ধর্ষণ, কীর্তি টিডিপি বিধায়কের! বিজেপির শরিক দলের কাণ্ড প্রকাশ্যে
এই সিরিজে জীবনে অর্থের চেয়ে ভালবাসার গুরুত্বকে বোঝাতে চেয়েছেন পরিচালক। কিন্তু গল্পকে অত্যাধুনিক করতে গিয়ে, আসল কথাটি পেড়েছেন একেবারে শেষে। ফলে তাঁর উদ্দেশ্য খুব একটা পূরণ হয়নি। এই সিরিজে রয়েছে কিছুটা ‘এমিলি ইন প্যারিস’, কিছুটা ‘আয়েশা’, কিছুটা ‘স্টুডেন্ট অফ দি ইয়ার’-এর ছায়া।
‘স্টুডেন্ট অফ দি ইয়ার টু’ ছবির মাধ্যমে অভিনেত্রী হিসেবে বলিউডে পা রেখেছেন অনন্যা পান্ডে। ছবিটি একেবারেই চলেনি। তবে প্রশংসিত হয়েছিল তাঁর অভিনয়। এই সিরিজে অনন্যা পান্ডে আন্তরিকতার সঙ্গে বে চরিত্রটি ফুটিয়ে তুলেছেন। উজাড় করে দিয়েছেন নিজেকে। কোথাও চোখে পড়েনি সূক্ষ্মতার অভাব। বলা যায়, সিরিজটি তাঁকে প্রোমোট করার জন্যই তৈরি করা হয়েছে। সেটা প্রতিটি এপিসোডে স্পষ্ট। কারণ, এমন কোনও দৃশ্য রচিত হয়নি, যেখানে অনন্যা পান্ডে নেই। সে-কারণেই গল্প অনেকটাই অনন্যা-নির্ভর হয়ে গেছে।
সায়রার চরিত্রে অভিনয় করা মুসকান জাফরি ‘অমিল’-এর পর আবারও প্রমাণ করলেন, তিনি বড় মাপের অভিনেত্রী। মুম্বইয়ে তিনি বে-এর প্রিয় বন্ধু হয়ে ওঠেন। অচেনা অজানা শহরে তাঁকে নানাভাবে সাহায্য করেন। লিসা মিশ্রের অভিনয় প্রশংসার দাবি রাখে। নীহারিকা দত্তকে দেখা গেছে তামমারাহ চরিত্রে। মন ছুঁয়ে গেছে তাঁর অভিনয়। বরুণ সুদ অভিনয় করেছেন চিন্তাশীল এবং নির্দোষ প্রিন্স ভাসিনের চরিত্রে। গুরফতেহ পিরজাদা সাংবাদিক নীলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ফাটিয়ে দিয়েছেন বীর দাস। তাঁর অভিনীত চরিত্রের নাম সত্যজিৎ দাস। তিনি টিআরপি-ক্ষুধার্ত সাংবাদিকের ভূমিকায় অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তাঁর কাছে ‘সত্য সবসময় গুরুত্বপূর্ণ নয়’। খবর বেচার জন্য যা খুশি তাই করতে পারেন। কিছুটা নেগেটিভ শেড রয়েছে তাঁর চরিত্রে। তবে বিপজ্জনক নন।
সিরিজের সংলাপ রীতিমতো উপভোগ করার মতো। কিছু সংলাপ বেশ মজার। অনন্যা পান্ডে চমৎকারভাবে পরিবেশন করেছেন।
আগেই বলা হয়েছে, ত্রুটিহীন নয় সিরিজটি। তবে মন ভরপুর বিনোদন পেতে চাইলে দেখে নেওয়া যায় ‘কল মি বে’ (Call me Bae)। চোখের সামনে ভেসে উঠবে ঝাঁ-চকচকে লোকেশন, উজ্জ্বল পোশাক, রঙিন ফ্রেম, ঝলমলে আলো। এসব দেখতে মন্দ লাগবে না। তবে তার জন্য বন্ধ রাখতে হবে মস্তিস্ক! পেশ করা যাবে না কোনও প্রশ্ন। কারণ এই সবকিছু দেখলে কোনও ভাবেই আপনি দুইয়ে দুইয়ে চার করতে পারবেন না। ঘটনা হল, করণ জোহর অ্যান্ড কোং কবে অঙ্ক মেলাতে চেয়েছেন? বিনোদনই তাঁর কাছে শেষ কথা। সেটা এই সিরিজে দারুণভাবেই মজুত রয়েছে। ফলে আপাত অন্তঃসারশূন্য মধ্যমমানের এই সিরিজটি বাজারে হিট করে গেলে বিন্দুমাত্র অবাক হওয়ার কিছু নেই।