চালচিত্র

চার বছরের লম্বা বিরতির পর আবার বাংলা সিনেমা নিয়ে ফিরলেন পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্ত। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহেই মুক্তি পেয়েছে তাঁর সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার ছবি ‘চালচিত্র’। এ ছবির আনাচ-কানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আলো-আঁধারি রহস্য, রক্তপাত এবং নৃশংসতা, অ্যাকশন, পুলিশি রাজ্যপাট। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

বছরের শেষ আর শুরুর সন্ধিক্ষণ মানেই সেলিব্রেশন, নতুন ঝলমলে ক্রিসমাস ইভ, থার্টি ফাস্ট, শীতের রোদ গায় মেখে পিকনিক— এই পর্ব এখন চলতেই থাকবে গোটা জানুয়ারি মাস জুড়ে— সেই সঙ্গে নতুন ছবি। নতুন বছরে নতুন নতুন ছবি দেখাটাও আমজনতার কাছে সেলিব্রেশনই। গত ডিসেম্বরের শেষে একইদিনে মুক্তি পেয়েছে চার চারটে ছবি যার মধ্যে প্রথমেই বলতে হয় দেব অভিনীত ‘খাদান’ আর প্রতিম ডি গুপ্ত পরিচালিত ‘চালচিত্র’র (Chalchitra) কথা। সঙ্গে আরও দুটো ভিন্ন স্বাদের ছবিও মুক্তি পেয়েছে ‘৫ নং স্বপ্নময় লেন’ এবং ‘সন্তান’। সব ক’টা ছবি ঘিরে দর্শকদের আলাদা আলাদা প্রতিক্রিয়া। ভালই টক্কর ছিল। দেব তো সফল হয়েছেনই, প্রতিমও সফল হয়েছেন দর্শকদের দরবারে। দর্শকদের চাহিদা মেনে শো-এর সংখ্যা বেড়েছে ‘চালচিত্র’র। কেমন হল এই ছবিটি।

‘চালচিত্র’র (Chalchitra) আনাচেকানাচে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আলো-আঁধারি রহস্য-রোমাঞ্চ, ঘুম-ছোটানো রক্তপাত এবং নৃশংসতা, অ্যাকশন, পুলিশি রাজ্যপাট। থ্রিলার তো অনেকেই তৈরি করেন কিন্তু সেই থ্রিলারধর্মী ছবির শর্ত পূরণ করতে পারেন ক’জন? প্রতিম কিন্তু তা যথাযথভাবেই পেরেছেন। চার বছর লম্বা বিরতির পর বাংলা সিনেমা নিয়ে ফিরলেন পরিচালক। ২০২০ সালে তাঁর সিনেমা ‘লাভ আজ কাল পরশু’ মুক্তি পায়। নেটফ্লিক্সে ‘টুথ পরী’, ‘হোয়েন লাভ বাইটস’ পরিচালনা করেন। এরপর আবার মেনস্ট্রিম বাংলা ছবিতে।

ছবির গল্পের শুরু হয় কলকাতার বুকে হয়ে চলা একের পর এক ধারাবাহিক নৃশংস খুন দিয়ে। এই কেসের সমাধানে নামেন কলকাতা পুলিশের হোমিসাইড বিভাগের চার অফিসার কণিষ্ক চট্টোপাধ্যায়, নাসির রহমান, ঋতেশ কুমার এবং বিশ্বরূপ অধিকারী। এঁরা চারজন স্বভাব এবং হাবেভাবে চার ধরনের মানুষ। তাই পুলিশি তদন্তের পাশাপাশি তাঁদের পারিবারিক জীবনটা এমনভাবে বুনেছেন প্রতিম যা একটা অন্যটার থেকে আলাদা। একের পর এক হত্যা করে চলা সেই সিরিয়াল কিলারের খুনের উদ্দেশ্য পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। খুনি ধরতে পুলিশ মরিয়া। অদ্ভুত যেটা— বারো বছর আগে এমনই এক সিরিয়াল কিলিংয়ের ঘটনায় এরাই তদন্তের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সেই খুনিও একলা মেয়েদেরকে টার্গেট করত, আর খুনের পর লাল পাড় সাদা শাড়িতে সাজিয়ে চালচিত্র ফ্রেমে ঝুলিয়ে রেখে যেত। দুটোর ঘটনায় কী কোথাও কোনও যোগসূত্র রয়েছে? ছবি যত ক্লাইম্যাক্সের দিকে এগোয় ততই কৌতূহল বাড়তে থাকে। আদৌ কি সেই সিরিয়াল কিলার ধরা পড়বে? অমন সাঙ্ঘাতিক খুনিকে ধরতে কতটা কাঠখড় পোড়ালেন পুলিশ অফিসাররা? তা জানতে হলে যেতে হবে প্রেক্ষাগৃহে। মেদহীন পেলব একটি ছবি হল ‘চালচিত্র’ (Chalchitra)। এতটুকু অতিরঞ্জিত করা হয়নি। সংলাপ দুর্দান্ত, মনে থেকে যাবে বহুদিন। টানটান প্লট। প্রত্যেকটা চরিত্র নির্মাণ এতটাই যত্ন নিয়ে করা হয়েছে যে এতটুকুও অবিশ্বাস্য লাগে না। এই প্রসঙ্গে পরিচালক প্রতিম সংবাদমাধ্যমকে বললেন, ‘‘সিরিয়াল কিলারকে নিয়ে ছবি বানানোর ইচ্ছে আমার চিরকালের। ভাবলাম এবার বানিয়ে ফেলি। ছবিটা একটু লার্জার দ্যান লাইফ হোক চেয়েছিলাম। সিরিয়াল কিলার বিষয়টা কলকাতায় নেই। আর এই ধরনের বিষয় মানেই অবধারিতভাবে থ্রিলারই হবে। এই ছবিতে সকলেই অনবদ্য অভিনয় করেছেন। তবে অপূর্বকে একেবারে অন্যভাবে ব্যবহার করার কথাই ভেবেছিলাম প্রথম থেকেই। আমি ওঁকে অতি-নাটকীয়ভাবেই ব্যবহার করতে চেয়েছি। ওঁর নাটক আমি দেখেছি। ওঁর মধ্যে শাহরুখ খানের মতো একটা চার্ম আছে। সেটাকে ধরার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাস দর্শক ছবিটা দেখতে বসে বলবেনই এটা অন্যরকম থ্রিলার দেখলাম।’’

আরও পড়ুন: জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণে উদ্যোগ পার্থ ভৌমিকের

ছবিতে যে চারজন পুলিশ অফিসার রয়েছেন সেই চরিত্রে অভিনয় করেছেন টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী, শান্তনু মাহেশ্বরী এবং ইন্দ্রজিৎ বসু। এক মাড়োয়ারি পুলিশ অফিসারের চরিত্রে হাজির হয়েছেন শান্তনু মাহেশ্বরী। এই ছবি দিয়েই বাংলা চলচ্চিত্রে শান্তনুর অভিষেক হল। সঞ্জয় লীলা বনশালির ‘গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি’তে আলিয়া ভাটের বিপরীতে তাঁর অভিনয় প্রশংসিত হয়েছিল। ‘টুথ পরী’ সিরিজে প্রতিমের সঙ্গে জুটি বেঁধেছিলেন তিনি। শান্তনু কলকাতার বাসিন্দা এবং সাবলীল বাংলা বলতে পারেন। অনেকেই তাঁর চরিত্রটির সঙ্গে আইপিএস অনুজ শর্মার মিল খুঁজে পেয়েছেন। এছাড়া এই ছবিতে অভিনয় করেছেন বাংলাদেশের নামকরা অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব এবং অনির্বাণ চক্রবর্তী প্রমুখ। অনেকেই ভেবেছিলেন আরজি করের ঘটনা তুলে ধরতে চেয়েছেন— কিন্তু একেবারেই তা নয়। এই কথা নিজের মুখেই বলেছেন পরিচালক। ছবিটা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র একটি থ্রিলার। ছবির অন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় রয়েছেন ব্রাত্য বসু। রাইমা সেনকে দেখা যাবে টোটা রায়চৌধুরীর স্ত্রীর ভূমিকায়। রয়েছেন স্বস্তিকা দত্ত এবং তানিকা বসু। একদিকে এপার বাংলার টোটা রায়চৌধুরী, অনির্বাণ চক্রবর্তী। অন্যদিকে ওপার বাংলার অভিনেতা জিয়াউল ফারুক অপূর্ব৷ সঙ্গে বলিউড অভিনেতা শান্তনু মাহেশ্বরী৷

এই ছবির মাধ্যমে বাংলার শিল্পীদের পাশাপাশি বলিউড ও বাংলাদেশের অভিনেতাকে একই ছাতার তলায় নিয়ে এলেন পরিচালক প্রতিম ডি গুপ্ত। এই ছবি প্রযোজনা করেছেন ফিরদৌসুল হাসান ও তাঁর সংস্থা ফ্রেন্ডস কমিউনিকেশন।

Latest article