চন্দ্রবিন্দু

জীবিত আর মৃতের মাঝে এক সুন্দর মেলবন্ধনের গল্প নিয়ে সদ্য বড় পর্দায় মুক্তি পেল পরিচালক রাজা চন্দের ছবি ‘চন্দ্রবিন্দু’। হরর কিন্তু কমেডি ঘরানার এই ছবিতে মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন অঙ্কুশ হাজরা, ঐন্দ্রিলা সেনগুপ্ত এবং সাহেব ভট্টাচার্য। লিখলেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

ওয়েলকাম হ্যাপি আফটার লাইফ। আচ্ছা মারা যাবার পরে যদি কেউ এসে আমাদের এই কথাটা বলে ওয়েলকাম জানায়! যাঁরা এই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান মৃত্যুর পরে তাঁদের সঙ্গে কী হয়? মৃত্যুতেই শান্তি— এই কথাটা আমরা খুব শুনি। এত ঝঞ্ঝাটের পৃথিবীতে বেঁচে থাকাটাই ঝকমারি তাই না! সত্যি কি মৃত ব্যক্তিরা পরম শান্তি পান? সত্যি কি মৃত্যু মানে চিরঘুম? তাঁদের মধ্যে কি তখন কোনও দুঃখ-কষ্ট থাকে না? আমাদের প্রিয়জনেরা কি মারা যাবার পরেও আমাদের দেখতে পান? আমাদের আশেপাশেই থাকেন? এইসব প্রশ্ন কিন্তু সবার মনের মধ্যেই রয়েছে। যার খুব সহজ, সুন্দর এবং মজার উত্তর হল পরিচালক রাজা চন্দের সদ্যমুক্তি প্রাপ্ত ছবি ‘চন্দ্রবিন্দু’ (Chandrabindoo)। না এই চন্দ্রবিন্দু হল বর্ণমালার শেষ বর্ণ যা অনেক শব্দেই লাগে তবে পরলোকগতকে বোঝাতে তার নামের ওপর বিশেষ করে চন্দ্রবিন্দু ব্যবহার হয়। কাজেই এই ছবিতে যে অশরীরীরা থাকবেনই এটা বোঝাই যাচ্ছিল।

‘চন্দ্রবিন্দু’ (Chandrabindoo) তবে কীসের ছবি? ভীষণ ভয়ের? গা-ছমছম করবে ছবিটা দেখলে? এই ছবিতে রয়েছেনও তিন ভূত। এরাও আবার মুখ্যচরিত্রে। তবে আত্মারা থাকলেও ‘চন্দ্রবিন্দু’ আসলে কোনও হরর ছবি নয়। বরং একটু স্পষ্ট করে বললে একে হরর কমেডি বলা যেতে পারে। তবে তেমন হরর কমেডিও কিন্তু নয়। আসলে ‘চন্দ্রবিন্দু’ হল বেশ কতকগুলো চরিত্রের এক ইমোশনাল জার্নি। যাঁদের মধ্যে কেউ এপারে রয়েছেন কেউ-বা পরপারে চলে গেছেন। মানুষ এবং অশরীরীর মাঝের মেলবন্ধনের গল্প ‘চন্দ্রবিন্দু’।
পোস্টারে দেখেছিলাম অন্ধকার গা-ছমছমে গোরস্থানে ছবির নায়ক এবং নায়িকা অঙ্কুশ আর ঐন্দ্রিলা। ‘মৃতের মর্ত্যে আগমন’ নামের একটা ছবি ছিল না! যেখানে মৃতেরা মর্ত্যে চলে এসেছিলেন সটান। এখানেও খানিক এমনটাই ঘটতে দেখা যাবে। মর্ত্যে নেমে আসবে মৃত মানুষ। প্রশ্ন হল কোন মর্ত্যে? ভারতের মর্ত্যে নয়। কিন্তু তারা আসবে একেবারে বিলেতের মর্ত্যে। বিলেতের মাটিতে বাঙালি ভূত। ছবির গল্পটা কিন্তু বেশ কঠিন। এত কঠিন বিষয়কে খুব সুন্দর করে ধরেছেন পরিচালক রাজা চন্দ। কিছুটা পুনর্জন্মেরও ছায়া রয়েছে। গল্পে অরূপের বাবা লন্ডন শহরে ‘বুক ওয়ার্ম’ নামের একটি বিশাল বইয়ের দোকানের মালিক। ছেলে অর্ণব নিজেও লেখালেখি করে, করতে চায়। এহেন অর্ণবের বাবা-মা একটি পথ দুর্ঘটনায় হঠাৎ মারা যায় এবং তারপর তাদের আত্মা ফিরে আসে। এই দম্পতি অনন্ত ও পার্বতী মার্টিন। এছাড়া আরও একটি চরিত্র রয়েছে জয়ন্ত নামের এক বাঙালি তরুণের। সেও ঘটনাচক্রে মৃত। একই সমাধিস্থলে এদের তিনজনেরই পাশাপাশি কবর। অন্যদিকে যারা ছবিতে বেঁচে রয়েছে তারা হল অর্ণব, তার ফ্রেন্ড ফিলোজফার গাইড এক আঙ্কল আর সদ্য বিধবা তরুণী মীরা। মীরা মৃত জয়ন্তের স্ত্রী। গোটা ছবিটা এই ছ-জনকে ঘিরেই আবর্তিত। স্বামী জয়ন্ত স্ত্রীকে অনেক কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু পারেনি মৃত্যুর পর সে অধীর সেই কথা বলার জন্য। কিন্তু এদিকে মীরার পরিচয় হয় অর্ণবের সঙ্গে। দুম করেই আসে প্রেমের নয়া মোড়। মীরা-অর্ণবের নতুন ভালবাসার আঁচ পেয়ে জয়ন্ত খুব জেলাস হয়ে পড়ে। অনন্ত-পার্বতী ছেলেকে নিয়ে ইনসিকিওরিটিতে ভুগতে শুরু করেন। ভাবলেন ছেলে বুঝি ভুলেই গেল তাদের! মৃত্যুর পরেও সম্পর্কের টানাপোড়েনের ভোগে তারা। এরাই হল ছবির আসল কুশীলব। এদের বাকবিতণ্ডা, অভিমান, কষ্ট, প্রেম, মজার সংলাপ— সব নিয়ে এক অন্য রকম হরর কমেডি ‘চন্দ্রবিন্দু’। তবে ‘চন্দ্রবিন্দু’তে ডিটেলিং একটু কম। ছবির মুখ্যভূমিকায় রয়েছেন সাহেব ভট্টাচার্য, অঙ্কুশ হাজরা, ঐন্দ্রিলা সেন, অনির্বাণ চক্রবর্তী, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, তুলিকা বসু-সহ আরও অনেকে। ছবিটি প্রসঙ্গে অভিনেতা অঙ্কুশ হাজরা বললেন, ‘আসলে আমরা বাঙালিরা সবসময় খুব ইমোশনাল হই। আমাদের প্রিয়জন চলে গেলে আমরা তাঁদের নিয়ে আবেগতাড়িত হয়ে পড়ি। তাঁদের কথা ভাবি। যেমন অনেককে বলতে শোনা যায় আমার স্বর্গত বাবা আমার পাশেই রয়েছেন, আমাকে দেখছেন। ‘চন্দ্রবিন্দু’ ঠিক এটাই দেখিয়েছে। আমরা মৃত প্রিয়জনকে নিয়ে যা ভাবি সেটাই এই ছবির বিষয়। দর্শক ছবিটার সঙ্গে নিজেকে রিলেট করতে পারবে।’

আরও পড়ুন-ওহে সিঁদুরের ফেরিওয়ালা! শুনতে কি তুমি পাও?

ঐন্দ্রিলা সেনগুপ্তর এই ছবির সূত্রেই প্রথম লন্ডন সফর, তিনি বললেন ‘প্রথমবার লন্ডনে শ্যুটিং করলাম এবং পরিচালক রাজা চন্দের সঙ্গে এটা আমার দ্বিতীয় কাজ। খুব সুন্দর অভিজ্ঞতা হয়েছে। ছবিটা একেবারে অন্যরকম। আপাতদৃষ্টিতে দেখে মনে হবে বিষয়টা ভৌতিক কিন্তু আসলে তা নয়। গোটা ছবিটা একটা ইমোশনাল জার্নির ওপর দাঁড়িয়ে। ছবিতে যাঁরা মারা গেছেন তাঁদের একটা ইমোশনাল জার্নি রয়েছে এবং যাঁরা বেঁচে রয়েছেন তাঁদেরও একটি ইমোশনাল জার্নি রয়েছে। এই মেলবন্ধনটা খুব ভাল লাগবে সবার।’
অনেকেরই ছবির ট্রেলার দেখে মনে হয়েছিল হয়তো খুব দুঃখের ছবি। কিন্তু আসলে সেটা নয় একটা গভীর আবেগকে মজার ছলে, হাসির ছলে উপস্থাপন করেছেন পরিচালক তার ‘চন্দ্রবিন্দু’তে (Chandrabindoo)। ছবিতে যেমন কমেডি রয়েছে, ড্রামা রয়েছে আবার টুকটাক অ্যাকশনও রয়েছে। এই ছবি যেমন ভৌতিক তেমনই পারিবারিক, আবার তেমনই সম্পর্কের এবং প্রেমের।

অভিনেতা সাহেব ভট্টাচার্যকে ছবিতে দেখা যাবে একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায়। তিনি এই প্রসঙ্গে বললেন, ‘ছবির গল্পটাই ভীষণ ইন্টারেস্টিং। কারণ আমাদের প্রতিটা মানুষের মনে এই প্রশ্নটা থাকে যে মৃত্যুর পর আমরা কোথায় যাই। কী হয় আমাদের। তো সেই প্রশ্নেরই একটা সহজ উত্তর আমরা খোঁজার চেষ্টা করেছে এই ছবি। রাজাদার সঙ্গে আগে কাজ করেছি, এটা দ্বিতীয়বার। খুব এনজয় করেছি আমরা ছবিটা করতে গিয়ে।’
ছবির কাহিনি এবং চিত্রনাট্য আদিত্য সেনগুপ্তের। প্রযোজনায় অশোক ধানুকা, হিমাংশু ধানুকার এসকে মুভিজ।
সিনেমাটোগ্রাফি সৌম্যদীপ্ত গুইন। সম্পাদনায় শুভজিৎ সিং। ছবির গানগুলো খুব সুন্দর। সঙ্গীত পরিচালনায় অনুপম রায়।

Latest article