গার্লস উইল বি গার্লস

মার্কিন মুলুকে সম্প্রতি আয়োজিত সানডেন্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪-এর বিশ্ব সিনেমা বিভাগে বিশেষ জুরি সম্মান পেলেন ‘গার্লস উইল বি গার্লস’ ছবির অভিনেত্রী প্রীতি পাণিগ্রাহী। কিছু মাস আগেই পায়েল কাপাডিয়ার ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’ ছবির মাধ্যমে ভারতের ঝুলিতে এসেছে গ্রাঁ পি সম্মান। এবার পরিচালক শ্রুতি তালাতির এই ডেবিউ ছবির হাত ধরে ভারত আবার শ্রেষ্ঠ আসনে। প্রথম ছবিতেই কামাল করলেন প্রীতি। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

যখন নয়ডার আমেঠি ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে ছাত্রী ছিলেন প্রীতি তখন থেকেই বুঝি জীবনের লক্ষ্য স্থির হয়ে গিয়েছিল। স্কুলের সেরা ছাত্রী ছিলেন তিনি। ছিল অনেক গুণ। ছিলেন সুগায়িকা, নৃত্যপটীয়সী, ফটোগ্রাফার সমাজসেবী এবং সুবক্তাও। অভিনয় প্রতিভাও শৈশব থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই একটা ফিল্মও তৈরি করেন অনেক ছোট বয়সে। যদিও প্রীতির পরিবারের সঙ্গে দূরদূরান্তে সিনেমা জগতের সঙ্গে কোনও যোগসূত্র ছিল না। কিন্তু ভবিতব্য খণ্ডাবে কে! প্রথম ছবিতে অভিনয় করে আজ জগৎজোড়া খ্যাতি অভিনেত্রী প্রীতি পাণিগ্রাহীর। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আয়োজিত সানডান্স ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ২০২৪-এ বিশ্ব সিনেমার ড্রামাটিক বিভাগে অভিনেত্রী হিসেবে স্পেশ্যাল জুরি অ্যাওয়ার্ড জিতে নিয়েছেন প্রীতি। তাঁর অভিনীত ছবি ‘গার্লস উইল বি গার্লস’ বিশ্ব সিনেমা বিভাগে ষোলোটি নির্বাচিত ছবির অন্যতম একটি ছবি হিসেবে স্থান পেয়েছে। নিঃসন্দেহে যা গর্বের।
কেন প্রীতি আজ উচ্চকিতভাবে প্রশংসিত তা বলতে গেলে ছবির গল্পে একটু ঢুকতেই হয়। শুচি তালাতির লেখা এবং নির্দেশিত এই ছবির পটভূমিকা উত্তর ভারতে হিমালয়ের পাহাড়ি এক শহর। সেখানকার এক আবাসিক স্কুলের শিক্ষিকা যিনি মনে-প্রাণে পুরুষতান্ত্রিক অনুশাসনকেই লালন করেন। চেষ্টা করে চলেন ছাত্রীদের সহবত শেখাতে। ‘মেন উইল বি মেন’ বা ‘বয়েজ উইল বি বয়েজ’ এই চিরাচরিত ইংরেজি প্রবাদগুলোই যেমন আমরা শুনে অভ্যস্ত। এই স্কুলটিও এই ধ্যানধারণার বাইরে নয়। আসলে যুগ যুগ ধরে শুধুমাত্র মেয়েদের নিয়মের বেড়াজালে বেঁধে ফেলতে চায় এই সমাজ। এমন বেড়াজালেই বিশ্বাসী এই আবাসিক স্কুলেরই এক কৃতী ছাত্রী মীরা। তার মধ্যে সহবতের অভাব নেই। শিক্ষকদের চোখে আদর্শ সে। কিন্তু যতই নিয়মনিষ্ঠভাবে সে চলুক না কেন, তার বয়সটা তো সেই নিয়মের জালে আটকে থাকে না! তাই একটা সময় কিছু প্রশ্ন তার মাথায় খোঁচা দিতে শুরু করে। কেন মেয়েদেরই পোশাকের ঝুল বড় করতে হবে ইত্যাদি নানা প্রশ্ন সরাসরি জিজ্ঞাসা করে বসে শিক্ষিকাকে। নিশ্চুপ প্রতিবাদ জানায় সে। অন্যদিকে, তার মন প্রেমের রোমাঞ্চের আস্বাদও পেতে চায়। গোপনকে জানতে চায়। আসলে ‘গার্লস উইল বি গার্লস’ (Girls Will Be Girls) ছবিটা কোথাও যেন পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। নারীর অবদমিত প্রেম, যৌন আকাঙ্ক্ষা, কামনার একটা প্রচ্ছন্ন সংক্ষিপ্ত চিত্র। শৈশব কাটিয়ে পরিণতির দিকে এগিয়ে চলা এক মেয়ের সঙ্গে তার মায়ের সম্পর্কের টানাপোড়েনের গল্প। মীরা ও তার মা অনিলা— পুরুষতান্ত্রিক সমাজে দুই প্রজন্ম দুই নারী। দু’রকম তাদের অভিজ্ঞতা। কিন্তু আসলে বছর গড়ালেও যে নারীর অবস্থানের কোনও পরিবর্তন সমাজে আসেনি, তারই দৃষ্টান্ত তারা। সেই সঙ্গে পাশাপাশি টিন-এজ রোমান্সের এক বাস্তব ছবি ছবিতে তুলে ধরেছেন পরিচালক।

ভারত- ফ্রান্স যৌথ অর্থাৎ ফ্রেঞ্চ প্রোডাকশন হাউস ডলস ভিটা ফিল্মস এবং ক্রলিং অ্যাঞ্জেল ফিল্মস এবং ভারতের রিচা চাড্ডা এবং আলি ফজলের পুশিং বাটন স্টুডিওস নির্মিত ছবি ‘গার্লস উইল বি গার্লস’ নিঃসন্দেহেই মৌলিক। প্রীতি ছাড়াও ওই ছবিতে অভিনয় করেছেন কানি কুশ্রুতি এবং কেশব বিনয়। কানি কুশ্রুতি ইতিমধ্যেই বেশ পরিচিত তাঁর ছবি ‘অল উই ইমাজিন অ্যাজ লাইট’ ছবিটির জন্য। এই ছবি বিগত বছরের সর্বশ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের তালিকায় ছিল। সেই মুকুটের আরও একটি পালক জুড়ল।

আরও পড়ুন- ৩০ জানুয়ারির মধ্যে শিল্পের সমাধান

দুর্ভাগ্যবশত এই পুরস্কার ঘোষণার সময় প্রীতি সশরীরে মঞ্চে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাঁর অনুপস্থিতিতে পরিচালক তাঁর হয়ে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন। ‘গার্লস উইল বি গার্ল’  (Girls Will Be Girls)ছবিটির সেক্সুয়াল কনটেন্ট নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। প্রীতির প্রথম ছবিতেই এমন দৃশ্য— এই নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করলে অভিনেত্রী জানান, এই ছবিতে বেশ কিছু ঘনিষ্ঠদৃশ্য রয়েছে, যেটা নিয়ে প্রসঙ্গ উঠছে হয়তো কিন্তু আমি মনে করি না সেইসব দৃশ্য উত্তেজক, আমার মনে হয় দৃশ্যগুলোকে লঘু করে না দেখে এর ঊর্ধ্বের ভাবনাটাকে গুরুত্ব দিলে বেশি ভাল হয়। এই ছবির মধ্যে যে এক ভিন্ন অনুভূতির রসদ রয়েছে তা অনুভব করতে পারবে সবাই।

এই ছবির প্রথম দিনের শ্যুটিংয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে গিয়ে অভিনেত্রী প্রীতি পাণিগ্রাহী জানালেন, শীতের খুব সকালে কলটাইম ছিল। আমার রেডি হবার সময় মনে হচ্ছিল আমি যেন সত্যিই স্কুলের জন্য তৈরি হচ্ছি। এর আগে আমি ছোটখাটো কিছু বিজ্ঞাপনের কাজ করেছি কিন্তু ছবির অভিজ্ঞতা এই প্রথম ফলে যখনই অ্যাকশন শব্দটা শুনতাম ঘাবড়ে যেতাম। যদিও আশ্চর্যজনকভাবে খুব সহজেই উতরে গেছি, সমস্যা হয়নি। পরিচালক শ্রুতি তালাতির ডায়রেক্টরিয়াল ডেবিউ ‘গার্লস উইল বি গার্লস’ (Girls Will Be Girls) ফেলে আসা মেয়েবেলার প্রতিবিম্ব। মেদহীন, ঝরঝরে। যেখানে নেই এতটুকু অতিনাটকীয় উপস্থাপনা। এই ছবি করতে গিয়ে দু-বছরের সফর শেষ করেছেন প্রীতি। মাঝে গ্যাপ ছিল কিন্তু এই সময়টায় চুপচাপ বসে থাকেননি প্রীতি। ইতিমধ্যেই একটা অ্যানিমেশন কোর্স করে ফেলেছেন। এই ছবিটা করতে করতে নিজের একটা আলাদা সেট-আপ তৈরি করে ফেলেছেন। স্বাবলম্বী হয়েছেন। আমূল বদলে গেছে প্রীতির জীবনদর্শন। আরও বড় কিছুর জন্য প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়েছে তাঁর, নিরন্তর শিখেছেন, শিখতে থেকেছেন।

Latest article