হাঙ্গামা ডট কম

মুক্তি পেয়েছে পরিচালক ডাঃ কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের নির্ভেজাল হাসির ছবি ‘হাঙ্গামা ডট কম’। রোমান্টিক কমেডি ঘরানার এই ছবিতে প্রথমবার স্ক্রিন শেয়ার করলেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, ওম সাহানি, বনি সেনগুপ্ত ও কৌশানী মুখোপাধ্যায়। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

বাঙাল-ঘটি, ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান, ইলিশ-চিংড়ি নিয়ে বাঙালি চিরটাকাল ঝগড়ুটে। তাদের এই স্বভাব যাবে না মলে। দরকারে ঘটি, বাঙাল পায়ে পা বাধিয়ে ঝগড়া চালিয়ে যাবেন। এক থালা ভাত বা সাধের এক প্লেট বিরিয়ানিও ছেড়ে দিতে পারেন কিন্তু এ লড়াই ছাড়ার পাত্র নন তাঁরা। ছুতোনাতায় প্রসঙ্গ তুলে পুরোদস্তুর হাঙ্গামা বাধিয়ে ফেলবেনই— ইতিহাস সাক্ষী আছে। বাঙালির এমন সেনসিটিভ অথচ মজাদার বিষয় নিয়েই সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে পরিচালক ডাঃ কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের ছবি ‘হাঙ্গামা ডট কম’ (hangama dot com)। নামটা শুনতে যেমন, ছবিটাও কিন্তু ঠিক তেমনই। রোমান্টিক কমেডি ঘরানার এই ছবিতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুঃখ-কষ্টের কোনও জায়গা নেই, দেখতে বসলে হাসতে হাসতে দর্শক হাঁসজারু হবেনই, এটা হলফ করেই বলা যায়।

অনেকদিন ধরেই ছবিটি মু্ক্তির অপেক্ষায় ছিল। পরিকল্পনা থাকা সত্ত্বেও একাধিকবার পিছিয়েছে ‘হাঙ্গামা ডট কম’-এর (hangama dot com) মুক্তির তারিখ। ছবির মহরত হয়েছিল সেই ২০২২ সালে। শুটিং শেষ হয় পরের বছর। তার পর কেটে গিয়েছে আরও অনেকটা সময়। ২০২৪ সালে পুজোয় ঠিক হয়েছিল ছবিটি মুক্তি পাবে কিন্তু বিশেষ কারণে সেই পরিকল্পনা বাতিল হয়। তারপর শীতের সময়ও একবার ছবি মুক্তির কথা ভাবা হয়। ইতিমধ্যে নভেম্বরে মুক্তি পেয়ে যায় কৃষ্ণেন্দুর আরও একটি ছবি ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’। সেই সময় বেশ কয়েকটি ব্লকবাস্টার হিন্দি ছবিও মুক্তি পায় পরপরই। ফলে ‘হাঙ্গামা ডট কম’-এর রিলিজ পিছোতে হয়েছিল। তারপর শোনা গিয়েছিল ২০২৫ সালে মার্চে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পাবে ‘হাঙ্গামা ডট কম’। অবশেষে সেই মতো মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। বেশ খানিকটা দেরি হলেও ছবি যে দর্শকদের ভাল লাগবেই সেই নিয়ে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন পরিচালক। তিনি জানালেন, আমি ছবিটা নিয়ে আশাবাদী ছিলাম, কারণ এটা সবাই মিলে দেখার, সপরিবারে দেখার ছবি। কোনও নির্দিষ্ট বয়সের সীমা নেই। একসঙ্গে এই ছবি দেখার মজাটাই আলাদা। নির্ভেজাল হাসির গল্প, কান্নার, দুঃখের কোনও জায়গা নেই। ফলে ছবি নিয়ে প্রত্যাশাও একটু বেশি ছিল। সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়েছে।

আরও পড়ুন-টানা ৩ দিন বন্ধ হাওড়া ময়দান-এসপ্ল্যানেড রুটের মেট্রো পরিষেবা! ভোগান্তি যাত্রীদের

কমেডি গল্প লিখতেই বরাবর ভালবাসেন পরিচালক ডাঃ কৃষ্ণেন্দু চট্টোপাধ্যায়। তাঁর আগের দুটো ছবি ‘ক, খ, গ, ঘ’ এবং ‘যমালয়ে জীবন্ত ভানু’ সেই কথাই বলে। ‘হাঙ্গামা ডট কম’ও (hangama dot com) তার ব্যতিক্রম নয়। ছবির গল্প পুরোটাই রোমান্টিক কমেডি ঘরানার। গল্পে দুই পরিবার। এক পরিবার দক্ষিণ কলকাতার কাঠ বাঙাল। পরিবারের কর্তা বিরাট, যার পূর্বপুরুষ এখনও বাংলাদেশেই থাকেন। আরেক পরিবারের কর্তা বঙ্কিম, যিনি উত্তর কলকাতার ঘটি। স্বাভাবিকভাবেই দুই বাড়ির দুই কর্তাদের একজন মোহনবাগান এবং অপরজন ইস্টবেঙ্গলের সমর্থক। সেই নিয়ে লড়াই তো রয়েছেই দু’জনের। আর এমনিতেও দুই পরিবারের কেউই একে অপরকে সহ্য করতে পারে না। বাজারে রোজ দেখা আর রোজ ঝগড়া হয় তাদের। অথচ কাকতালীয়ভাবে এই দুই পরিবারের ছেলে-মেয়ের মধ্যেই প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হয়ে যায়! এক ভাই-বোন জুটি অপর দিদি-ভাই জুটির প্রেমে পড়ে যায়। সম্রাট পূজাকে ভালবাসে, যে অভিমন্যুর বড় বোন। অন্যদিকে অভিমন্যু অর্চনাকে ভালবাসে, সে আবার সম্রাটের বোন। দুই পরিবারের কর্তারা যখন তা জানতে পারেন, ব্যস, মাছ বাজারের সেই ঝগড়া সোজা উঠে আসে বাড়ির দালানে। শুরু হয় হাঙ্গামা। জল এতদূর গড়ায় যে, হবু শ্বশুররা পরস্পরকে হমকি দেন, গলায় দড়ি দিয়ে একে অপরের বাড়িতে ভূত হয়ে থাকার। সেই হাঙ্গামা সামাল দেবে কী করে বাড়ির ছোট প্রেমিক যুগলেরা? কী করবে তারা? কীভাবে এগোবে এবার গল্প? এত শত্রুতা থামিয়ে হবে কি মধুরেণ সমাপয়েৎ? প্রেম কখনও সোজা পথে সফল হয় না। কাজেই কতটা চ্যালেঞ্জ নেবে তারা প্রেম সফল করতে? এইসব উত্তর পেতে গেলে যাঁরা এখনও যাননি তাঁদের যেতেই হবে ‘হাঙ্গামা ডট কম’ দেখতে।

ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রে রয়েছেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, ওম সাহানি, বনি সেনগুপ্ত ও কৌশানী মুখোপাধ্যায়। এই চারজন অভিনেতা প্রথমবার একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করলেন এই ছবিতে। ছবিটি প্রসঙ্গে অভিনেতা বনি সেনগুপ্ত জানালেন, বাঙাল-ঘটি খুব রিলেটেডল একটা বিষয়। বিশেষ করে শহর কলকাতায়। এখানে এমন অনেক ঘটি-বাঙাল আছেন যাঁরা খুব ছোট ছোট বিষয় নিয়ে ঝগড়া করেন, তর্ক করেন। ইলিশ না চিংড়ি, ইস্টবেঙ্গল না মোহনবাগান ইত্যাদি। যেগুলো তুলে ধরা হয়েছে ছবিতে। এখানে আমি বাঙাল পরিবারের ছেলে। আমি নিজেও জন্মসূত্রে বাঙাল। ফলে ভাষাটাও জানি। সংলাপ বলেছি ওইভাবে। খুব এনজয় করেছি ছবিটা করতে গিয়ে। কৃষ্ণেন্দুদার সঙ্গে আমি আগেও কাজ করেছি, খুব ভাল অভিজ্ঞতা।’’

এছাড়াও এই ছবির অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে রয়েছেন রজতাভ দত্ত, খরাজ মুখোপাধ্যায়, লাবণী সরকার, তুলিকা বসু, বিশ্বনাথ বসু, ইমন চক্রবর্তী, কৃষ্ণ বন্দ্যোপাধ্যায়, সাহেব মাঝি এবং ঋষিরাজের মতো অভিনেতারা। পরিচালনার পাশাপাশি, ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন কৃষ্ণেন্দু নিজেই। কর্মব্যস্ত জীবনে মানুষকে নির্ভেজাল আনন্দ দিতে কলকাতা টু কালিম্পং দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। ছবির শুটিং হয়েছে মূলত এই দুটি লোকেশনেই। ক্যামেরার দায়িত্বে রয়েছেন মানস গঙ্গোপাধ্যায়। পঙ্কজ শীলের সিনেমাটোগ্রাফি খুব সুন্দর। সম্পাদনায় সংলাপ ভৌমিক। ছবিতে সুরারোপ করেছেন স্যাভি, অমিত মিত্র। গান গেয়েছেন সোনু নিগম এবং অন্তরা মিত্র ও অন্যরা। এস এস উদ্দিনের উপস্থাপনায় ছবির প্রযোজনা করেছে এসএসথ্রি এন্টারটেইনমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড।

Latest article