তুফান

সম্প্রতি বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েই ঝড় তুলল পরিচালক রায়হান রাফির অ্যাকশন প্যাক ছবি 'তুফান'। ছবিতে মেগাস্টার শাকিব খান আর টলিউডের মিমি চক্রবর্তী জুটির নজরকাড়া রসায়নে মুগ্ধ বাংলাদেশের দর্শক। প্রথম দিনেই এই ছবির আয় পেরিয়েছে এক কোটির ঘর। ভারত-বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় তৈরি এই ছবি আজ মুক্তি পাচ্ছে এপার বাংলায়। মুখিয়ে দর্শক। লিখছেন শর্মিষ্ঠা ঘোষ চক্রবর্তী

Must read

মেগাস্টার শাকিব খানের ‘তুফান’ (Toofan) ছবির ট্রেলার দেখে কয়েক সেকেন্ডের জন্য মনে হয়েছিল সাউথের কোনও ছবির ট্রেলার দেখছি। কেজিএফ, সালারের মতো একটা বিধ্বংসী ছাপ রয়েছে এই ছবিতে। দুর্দান্ত মাফিয়া নায়কের চমকদার এন্ট্রি। প্রবেশের পরেই শুরু অ্যাকশন। নায়কের এক-একটা পাঞ্চে তিনবার পাল্টি খেয়ে এক মাইল দূরে ছিটকে পড়ছে শত্রুপক্ষের লোকজন। দৃশ্যগুলো স্লো মোশনে। সিনেমাটোগ্রাফির জবাব নেই। দারুণ উপভোগ্য। ছবির পর্দায় আজকাল হিরো কেউ নেই সবাই সুপার হিরো! আগেও অ্যাকশন থাকত কিন্তু এখন সুপার অ্যাকশন। যা সাধারণের কল্পনার অতীত। এমন একজন হিরো যে লন্ডভন্ড করে দিতে পারে সব, আইন নিজের হাতে তুলে নিতে পারে, গরিবের মসীহা হয়ে উঠতে পারে, পুলিশ, প্রশাসনকে ঘোল খাওয়াতে পারে, আবার দুর্দান্ত এক চরিত্রবান প্রেমিকও হয়ে উঠতে পারে। স্বপ্নের একটা চরিত্র। গল্পের মালমশলায় আর কী চাই। ‘তুফান’ এমনই এক ট্রেন্ডি ছবি। বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির পালে নতুন হাওয়া।

ইদানীং ভারত আর বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে ছবি তৈরি শুরু হয়েছে যেটা একটা পজিটিভ আপ্রোচ। সেই ট্রেন্ড ধরেই সম্প্রতি ইদের দিন বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে ‘তুফান’। মুক্তি পেয়েই শোরগোল ফেলে দিয়েছে এই ছবি। ওদেশে প্রথমদিনেই ছবির আয় ১ কোটি ২০ লাখ টাকা পেরিয়ে গেছে। একাধিক শো হাউজফুল। এমনকী হল-এ ঢুকে ছবি দেখার জন্য রাজধানী ঢাকার বেশকিছু প্রেক্ষাগৃহে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন দর্শক। বক্স অফিসের এই আলোড়নের মাঝেই এখানেও রিলিজ করছে ছবিটি।
শুরু থেকেই এই ছবি নিয়ে দর্শদের উত্তেজনা তুঙ্গে ছিল। এর প্রথম কারণ মেগাস্টার শাকিব খান। শাকিব বাংলাদেশের আইকন। এই প্রথম তিনি আর টলিউডের মিমি চক্রবর্তী একসঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করলেন এই ছবিতে। মিমিও বাংলা ইন্ডাস্ট্রির বলিষ্ঠ একজন অভিনেত্রী। দ্বিতীয় কারণ হল পরিচালক রায়হান রাফি। ‘সুড়ঙ্গ’খ্যাত রায়হান খুব ভাল গল্প বলতে পারেন এবং দর্শকদের পালসটা দারুণ বোঝেন। কাজেই রায়হান আর শাকিব ধামাকা করবে বোঝাই যাচ্ছিল।

আরও পড়ুন- ভারতে ধর্মীয় স্বাধীনতার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক, ফের বলল আমেরিকা

এই ছবির গানগুলো ইতিমধ্যেই বেশ জনপ্রিয় হয়েছে। লাস্যময়ী মিমিকে দেখে মুগ্ধ বাংলাদেশের দর্শক। ‘দুষ্টু কোকিল’ এবং কোন দেশের মাইয়া গো… লাগে উরা ধুরা গানদুটো নাচিয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাদেশকে। এই বঙ্গের মানুষও গুনগুনিয়ে উঠেছে গানগুলো শুনে। ‘দুষ্টু কোকিল’ গানটি গেয়েছেন দিলশাদ নাহার কণা এবং আকাশ সেন। গানের কথা, সুর, পরিচালনা আকাশেরই। ছবি প্রযোজনা এবং পরিবেশনায় ওপার বাংলার আলফা-আই-স্টুডিও, চরকি এবং এপার বাংলার শ্রী ভেঙ্কটেশ ফিল্ম। কাহিনি রায়হান রাফি, চিত্রনাট্যে আদনান আদিব খান। ছবির অন্যতম সঙ্গীত পরিচালক আরাফাত মোহাসিন, নাভেদ পারভেজ, প্রীতম হাসান। সিনেমাটোগ্রাফি তাহসিন রহমান। মুখ্যভূমিকায় শাকিব আর মিমি ছাড়াও রয়েছেন আরও এক বাংলাদেশি অভিনেত্রী মাসুমা রেহমান নাবিলা, অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী, শহিদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, গাজি রাকায়েত, মিশা সওদাগর প্রমুখ।
আশি-নব্বইয়ের দশকে বাংলাদেশে এক মাফিয়ার ভয়ে কাঁপত পুলিশ থেকে প্রশাসন। তাকে নিয়ে এই ছবি। কিন্তু জন্মেই তো কেউ গুন্ডা হয় না। তাহলে?
সিনেমা-অন্ত-প্রাণ এক যুবক শান্ত। তার ধ্যান-জ্ঞান অভিনয় করা। সামান্য একটা ছোট দৃশ্যেও অভিনয় করার কী চেষ্টা তার। সে তার অভিনয়ের গল্প বলে তার মহল্লার পরিচিতজনদের। শান্তকে সাহায্য করতে চায় ছবির এক কস্টিউম ডিজাইনার। শান্ত খুব গর্ব নিয়ে বলে সে একটা সিনেমায় অভিনয় করেছে, যার নাম ‘শেষ খেলা’। সবাইকে সে ছবি দেখতে নিয়ে যায়। হলে গিয়ে দর্শকরা দেখতে পায় সিনেমার কোথাও শান্ত নেই। তাকে সবাই ধিক্কার জানায়। মিথ্যাবাদী বলে। শান্ত আত্মহত্যা করতে চায়। কিন্তু পারে না। ছবির শুরু হয় এখান থেকেই।
শান্ত আর তুফান (Toofan) এই দুই চরিত্রে রয়েছেন শাকিব। ছবিতে অভিনয় প্রসঙ্গে মেগাস্টার শাকিব জানিয়েছেন, তুফান ছবিতে কাজ করা সত্যিই দারুণ অভিজ্ঞতা। এর গল্পটা খুবই টানটান আর গোটা টিম প্রচুর পরিশ্রম করেছে তাকে সিনেমার রূপ দেওয়ার জন্য। এমন কলাকুশলীদের সঙ্গে কাজ আমি সত্যিই খুবই খুশি আর আমার বিশ্বাস দর্শকও এই নিষ্ঠা, পরিশ্রম আর গভীরতা অনুভব করতে পারবে।

পরিচালক রায়হান রাফি যে এই ছবিতে নিজের মুনশিয়ানার পরিচয় রেখেছেন তা বাইরের সিনেমা দেখে যাঁরা অভ্যস্ত তাঁরা কেউই অস্বীকার করবেন না। দৃশ্যগুলোর বুনন নিখুঁত। শাকিব খান তুফানি জোশ তুলেছেন ছবিতে। নজর কেড়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরী। নাটক, সিনেমায় আমরা সচরাচর যে চঞ্চল চৌধুরীকে দেখে অভ্যস্ত এখানে তিনি সম্পূর্ণ ভিন্নভাবে উপস্থিত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, যে দৃশ্যে চঞ্চল চৌধুরীর আবির্ভাব, ওই দৃশ্য থেকেই কিন্তু গল্পের প্রতি আকর্ষণ বহুগুণে বেড়ে গেছে। দক্ষ অভিনেতাই পারেন প্রতিটা চরিত্রের মতো করে নিজেকে গড়ে নিতে যেটা চঞ্চল চৌধুরীর অভিনয় দর্শক দেখতে পাবে। এই ছবির বাড়তি পাওনা তিনিই নিঃসন্দেহে বলা যায়। মিমি চক্রবর্তী স্বভাবসিদ্ধভাবেই সাবলীল। গান, অভিনয়, সাউন্ড, চরিত্রের লুক, সেট ডিজাইন— সব মিলিয়ে ‘তুফান’-এর (Toofan) নির্মাণ অনবদ্য বলাই যায়।। আজ সর্বভারতীয় স্তরে মুক্তি পাচ্ছে এই ছবি। এখানকার দর্শকমনে শাকিব-মিমি কতটা ঝড় তোলে এবার সেটাই দেখার।

Latest article