অ্যান্টার্কটিকা নামটি শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে দিগন্ত বিস্তৃত বরফ আর বরফ, পৃথিবীর সেই সুদূর দক্ষিণে বিশাল আর নির্জন এক মহাদেশ অ্যান্টার্কটিকা। যেখানে ৬ মাস আকাশে থাকে সূর্য আর বাকি ৬ মাস থাকে অন্ধকার। এ-সময়ে অ্যান্টার্কটিকার তাপমাত্রা থাকে প্রায় -৮০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। অথচ একসময় এই মহাদেশে প্রাণহীন বরফের মোড়ক পড়েনি। এই মহাদেশ ছিল ঠিক আমাজনের মতোই সবুজে ঘেরা একটি রেইনফরেস্ট। সবুজ গাছপালা ও প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর। কিন্তু তারপর এমন কী হল যে এক বিশাল সবুজে ঘেরা অরণ্য একেবারে ছেয়ে গেল সাদা বরফের চাদরে?
আরও পড়ুন-খরস্রোতা নদীর পাশে তাঁবু, নিবু-নিবু আলোয় রাত্রিযাপন
ইতিহাসের সারণি বেয়ে
গল্পের শুরুটা হয়েছিল সেই পাঁচ কোটি বছর আগে। তবে গল্পটা অ্যান্টার্কটিকাকে নিয়ে হলেও সেটি শুধু অ্যান্টার্কটিকাতেই সীমাবদ্ধ ছিল তেমনটা নয়। যে যুগের কথা বলছি সেই যুগে পৃথিবীর সব ভূমিই কেবল দুটো মহাদেশে বিভক্ত ছিল। সময়ের সারণি ধরে একেবারে উল্টো পথে হাঁটলে হয়তো বিষয়টিতে আরেকটু আলোকপাত করা যাবে। প্রমাণ বলে, একসময় পৃথিবীর সব ভূমি একত্রিত হয়ে তৈরি করেছিল এক অখণ্ড মহাদেশ। বিজ্ঞানীদের প্রদত্ত নামানুসারে তাকে আমরা চিনি প্যানজিয়া নামে। তবে এই মহাদেশটি একসময় ভেঙে যায় এবং সৃষ্টি হয় দুটো (অতি) মহাদেশ, নাম লরেশিয়া ও গন্ডোয়ানাল্যান্ড। এই গন্ডোয়ানাল্যান্ড নামের মহাদেশেরই অংশ ছিল অ্যান্টার্কটিকা। সেইসঙ্গে এর সাথে ছিল দক্ষিণ আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। একসময় আমাদের ভারত ভেঙে ভেসে আসে পৃথিবীর অন্যপাশে, ধাক্কা খায় ইউরেশিয়ার সঙ্গে; যার ফলে গড়ে ওঠে হিমালয়। তবে সে-এক অন্য গল্প। ভারত ভেঙে যাওয়ার কিছুকাল পরেই ঘটে আরেক বিপত্তি। সাড়ে পাঁচ কোটি বছর আগে সেই সময়ে ঘটা মারাত্মক জলবায়ু পরিবর্তনের ভয়ঙ্কর ফল টের পায় গোটা পৃথিবী। পুরো বিশ্বের তাপমাত্রা বেড়ে যায় প্রচণ্ডভাবে। সে-সময়ের গড় তাপমাত্রা ছিল এখনও পর্যন্ত ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। এই সময়টাকে বিজ্ঞানীরা বলেন, প্যালিওসিন-ইওসিন থার্মাল ম্যাক্সিমাম। বলাবাহুল্য প্যালিওসিন আর ইওসিন হল দুটো যুগের নাম। তখনও অ্যান্টার্কটিকা, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আমেরিকা রয়েছে একসঙ্গে। এ সময় দক্ষিণ আমেরিকা থেকে ক্যাঙারুর মতো প্রাণীরা শত-সহস্র মাইল পাড়ি দিয়ে চলে আসে অ্যান্টার্কটিকায়। পরে আবার জলবায়ু তুলনামূলক শীতল হয়ে এলে এগুলো ধীরে ধীরে চলে যায় অস্ট্রেলিয়ায়। এরপর শুরু হয় অ্যান্টার্কটিকার ভাঙন। আর ক্রমাগত এই ভাঙনের ফলে ভারতের মতোই অ্যান্টার্কটিকাও ভেঙে অস্ট্রেলিয়ার পাশ থেকে সরে আসতে থাকে, আর সরে যেতে যেতে একসময় এই ভূমি চারপাশে সমুদ্রবেষ্টিত হয়ে আর সব আশপাশের স্থলভাগ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। পরের প্রায় আড়াই কোটি বছরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। একসময় এর মাত্রা গিয়ে দাঁড়ায় ১৫ ডিগ্রি। অ্যান্টার্কটিকা ধীরে ধীরে ঢাকা পড়তে থাকে পুরু বরফের আচ্ছাদনে। এর সঙ্গে যুক্ত হয় অ্যান্টার্কটিক সারকামপোলার কারেন্ট বা এসিসি যার বাংলা তর্জমা করলে দাঁড়ায়, অ্যান্টার্কটিক ঘূর্ণিস্রোত। আগেই বলেছি যে, মূল ভূখণ্ড থেকে অ্যান্টার্কটিকা যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তখন তার চারপাশ ঘিরে ছিল মহাসমুদ্র। এই মহাসমুদ্রে অ্যান্টার্কটিকার চারদিকে বয়ে যেতে থাকে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ঘূর্ণিস্রোত। সেকেন্ডে প্রায় ১৪ কোটি ঘনমিটার জল প্রবাহিত হয় এর চারপাশে। এই ভয়ঙ্কর তীব্র ঘূর্ণিস্রোত উষ্ণ জলকে বয়ে নিয়ে যায় উত্তরদিকে। পাশাপাশি সমুদ্রের গভীর গহীন থেকে তুলে আনে লবণাক্ত শীতল জল। যার সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়তে থাকে অ্যান্টার্কটিকাতেই। একদিকে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে যাওয়া, আরেক দিকে এই স্রোতের প্রভাব— দুইয়ে মিলে অ্যান্টার্কটিকা পরিণত হতে থাকে সাদা বরফমেরুতে। এক সময়কার গ্রীষ্মমণ্ডলীয় গাছ, পশু-পাখি শীতের প্রকোপে মরতে থাকে। ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হতে থাকে সবাই, শুধু টিকে যায় শীত সহ্য করতে পারে, এমন কিছু উদ্ভিদ ও প্রাণী। এভাবে ধীরে ধীরে অ্যান্টার্কটিকা পরিণত হয় প্রায় প্রাণহীন এক মহাদেশে। শেষ প্রায় ২৫ লাখ বছর আগে এই বরফমেরু পুরোপুরি হারিয়ে ফেলে জীবন ধারণের সমস্ত রসদ। বর্তমানে পৃথিবীর ১০ শতাংশ বরফ রয়েছে গ্রিনল্যান্ডে। বাকি প্রায় ৮৯ শতাংশই রয়েছে অ্যান্টার্কটিকায়। তবে পুরো অ্যান্টার্কটিকার সবটা কিন্তু বরফ নয়। ৯৮ শতাংশের মতো বরফে ঢাকা। বাকি অংশটুকু বরফহীন, শুষ্ক।
আরও পড়ুন-তৃণমূলের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চে যোগ বিজেপি-র ২ বুথ সভাপতির
অ্যান্টার্কটিকা সম্বন্ধীয় তথ্য প্রমাণ
অ্যান্টার্কটিকার ব্যাপারে যে গল্পটি বলা হল সেটি গল্পের ছলে বলা হলেও আদৌ এসব নেহাতই মনগড়া কথা নয়। এর পেছনে আছে বৈজ্ঞানিক তথ্য ও প্রমাণ। এ ছাড়াও আমরা যদি একটু নিজেদের মাথা খাটিয়ে সবগুলো মহাদেশের কিনারাকে ভালভাবে নিরীক্ষণ করি তাহলে দেখব যে একটি আরেকটির সঙ্গে কী নিখুঁতভাবে ঠিক জিগস অব পাজলের মতো মিলে যায়। এ ছাড়াও, অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদর খুঁড়ে বিজ্ঞানীরা ডাইনোসর, ক্যাঙারু থেকে শুরু করে এমন সব প্রাণীর ফসিল পেয়েছেন, যেগুলো আজকের বরফ-মোড়া অ্যান্টার্কটিকায় পাওয়ার কথা ভাবাও দুষ্কর। আর এরকমই একটি খোঁড়াখুঁড়িতে উঠে এসেছে আরেকটি চমকপ্রদ তথ্য— সেটি হল বরফে মোড়া অ্যান্টার্কটিকার নিচে পাওয়া গেছে এক নদীর সন্ধান।
কীভাবে পাওয়া গেল এই তথ্য?
এই প্রসঙ্গে জানিয়ে রাখা দরকার যে এত তথ্য এত খুঁটিনাটি আমরা জানছি কীভাবে? আসলে বিজ্ঞানীরা বরফ বিশ্লেষণ করেই এইসমস্ত তথ্যাদি আমাদের সামনে উপস্থাপন করেন। এই বিষয়ে একটু সংক্ষেপে আলোকপাত করা যাক। বরফের সিলিন্ডারকে ইংরেজিতে বলে কোর। এ ধরনের কোর সংগ্রহ করেন বিজ্ঞানীরা, তাঁরা এসব কোর নিয়ে গবেষণা করেন এবং জমিয়ে রাখেন সংরক্ষণাগারে। প্রতি স্তর বরফ যেন এক-একটি টাইম ক্যাপসুল। এই বরফের স্তরে যত নিচের দিকে যাওয়া যায় ততই পাওয়া যায় অতীতের সন্ধান। এতে থাকে নানা ধরনের গ্যাস, বিভিন্ন ধরনের পদার্থ— যারা সাক্ষ্য বহন করে যে এরা কখন মাটির বুকে জায়গা করে নিয়েছিল, ঠিক কেমন ছিল সে সময়কার তাপমাত্রা ও বায়ুমণ্ডল।
এর থেকেই জানা যায়, আজকের বরফমেরু অ্যান্টার্কটিকা এককালে ছিল সবুজ, প্রাণচাঞ্চল্যে ভরপুর রসদে পূর্ণ এক মহাদেশ।
নদীর সন্ধান ও তার পরিচিতি
বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার রহস্য অনুসন্ধান করে আসছেন তবে এই বরফ গলার পেছনের আসল রহস্যটা তাঁদের অধরাই ছিল। তাই আজ এতদিনের পরিশ্রমে সেই সত্য ঘটনা সবার সামনে আসে। গলনের কারণ, একটা নদী। আজ্ঞে হ্যাঁ ২৮৫ মাইলের একটা নদী যা কিনা দীর্ঘকাল যাবৎ অ্যান্টার্কটিকার বরফের স্তরের নিচে বয়ে চলছে আর সেইসঙ্গে ক্ষয় করে চলেছে বরফের স্তরের তলদেশ।
এই তথ্যের সত্যতা যাচাই করতে বিজ্ঞানীরা অ্যান্টার্কটিকার ওপর দিয়ে একটি বিমান উড়িয়ে রহস্যময় নদীটি আবিষ্কার করেছেন, যা তদের প্রস্তাবিত মডেলের সাথে একেবারে মিলে গেছে। তাদের বিশ্লেষণ থেকে উঠে আসা তথ্য বলছে, যে নতুন আবিষ্কৃত এই লুকানো নদীটি লন্ডনের টেমস নদীর তিনগুণ হারে প্রবাহিত হয় (ওয়্যার্ডের ম্যাট সাইমন রিপোর্ট)। পূর্ব এবং পশ্চিম অ্যান্টার্কটিকায় থাকা বরফের পুরু চাদর থেকে— ফ্রান্স এবং জার্মানির মতো বিশাল এলাকা জুড়ে বিস্তৃত বরফের স্তূপ ধীরে ধীরে গলে যাচ্ছে যা কিনা নদীতে জলের পরিমাণ বাড়াচ্ছে আর বাড়াচ্ছে তার গতিও। নেচার জিওসায়েন্সেস-এ প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে যে তথ্যটি প্রকাশিত হয়েছে, তার সহজ সরল মানে করলে দাঁড়ায়, অ্যান্টার্কটিকার বরফের নীচের অংশে বিজ্ঞানীরা আগে যা বুঝেছিলেন তার চেয়ে বেশি সক্রিয় জলপ্রবাহ রয়েছে যা মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য আরও সক্রিয় ও সংবেদনশীল হয়ে উঠতে পারে।
ইংল্যান্ডের ইম্পেরিয়াল কলেজ লন্ডনের একজন প্রাকৃতিক বিজ্ঞানী, মার্টিন সিগার্ট তাঁর নিজস্ব গবেষণার ভিত্তিতে বলেন, ‘যে অঞ্চলে এই গবেষণাটি করা হয়েছে সেখানে বিশ্বব্যাপী সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ৪.৩ মিটার [১৪ ফুট] বাড়ানোর জন্য যথেষ্ট বরফ রয়েছে। এই বরফের কতটা গলবে এবং কত দ্রুত তা গলবে তা নির্ভর করে, বরফের ভিত্তি কতটা পিচ্ছিল তার ওপর। তবে নতুন আবিষ্কৃত নদী এই প্রক্রিয়াটিকে দৃঢ়ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।’
আরও পড়ুন-জীবনবিমা-স্বাস্থ্যবিমায় জিএসটি প্রত্যাহারের সুপারিশ মন্ত্রিগোষ্ঠীর
নদী আবিষ্কারের সপক্ষে কিছু যুক্তি
অ্যান্টার্কটিকার দূরবর্তী রুক্ষ এবং বিশাল ভূমি অধ্যয়ন করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। যদিও বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যেই সাবগ্লেসিয়াল নদী আবিষ্কার করতে অসমর্থ হয়েছেন এবং তার কারণও এই রুক্ষ, শুষ্ক ভূমিরূপ। তবে তাঁরা আর এই নদী খুঁজে পাওয়ার আশাও করেননি। গ্রিনল্যান্ডে, গ্রীষ্মের উষ্ণ তাপমাত্রায় ওপরের থেকে বরফ গলে যায়, যার ফলে বরফের ওপরের পৃষ্ঠ থেকে প্রচুর পরিমাণে জল প্রবাহিত হয় এবং গভীর খাতের (ক্রেভাসের) মাধ্যমে পরিস্রুত হয়। তবে অ্যান্টার্কটিকায়, গ্রীষ্মকাল শীতল এবং বরফের পৃষ্ঠ বেশি গলে না। এই কারণে, বিজ্ঞানীরা ধরেই নিয়েছিলেন যে বরফের স্তরের নীচে খুব বেশি জল থাকবে না। পরিবর্তে, গবেষণায় দেখা গেছে যে অ্যান্টার্কটিকার বরফ নিচ থেকে গলে যাচ্ছে, ঘর্ষণের কারণে, সেইসাথে প্রাকৃতিক ভূ-তাপীয় তাপের কারণে। বিজ্ঞানীরা নির্ধারণ করেছেন যে যদিও গলে যাওয়া বরফের পরিমাণ বিশাল নয়— প্রতি বছরে কয়েক মিলিমিটারের মতো। কিন্তু যেহেতু বরফের পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফল এত বিশাল, তাই এক মিলিমিটার গলিত জলও দ্রুত চলমান নদীতে জলের পরিমাণ বাড়িয়ে তার গতিকে আরও দ্রুত করে তুলতে পারে। আর এই গতিসম্পন্ন নদীর ফ্রিকশনাল ফোর্স আন্টার্টিকার তলদেশের বরফকে আরও আরও ক্ষয় করবে।
নদীটির সম্ভাব্য গতিপথ
সাধারণত এই সমস্ত স্বাদু জলের নদী ওয়েডেল সাগরে গিয়ে মেশে, যেখানে অ্যান্টার্কটিকার বরফের চাদরগুলি টুকরো টুকরো হয়ে ভূ-ভাগ থেকে জলের ওপর ভাসতে থাকে। একে আবার ট্রানজিশন জোন বা গ্রাউন্ডিং লাইনও বলা হয়, বিশেষ করে উষ্ণতা বৃদ্ধিতে এই অংশটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। এই সংবেদনশীল অঞ্চলটি কীভাবে সমুদ্রের জলতল বৃদ্ধিকে প্রভাবিত করছে সে সম্পর্কে জানা থাকলে তা ভবিষ্যতে গবেষকদের সমুদ্রস্তরের বৃদ্ধি অনুমান করার জন্য আরও সঠিক মডেল তৈরি করতে সহায়তা করবে।
আরও পড়ুন-আজ আইএসএল ডার্বিতে মুখোমুখি মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গল
বরফ গলনের অন্যতম কারণ
প্রকৃতপক্ষে, নদীর আবিষ্কার; উপগ্রহের পরিমাপ এবং বরফ গলনের কারণের মধ্যে একটি বিস্ময়কর অমিল ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করে। স্যাটেলাইটগুলি সুপারিশ করেছিল যে প্রচুর পরিমাণে বরফের ক্ষয় ঘটছে তবে তার কোনও প্রমাণ বিজ্ঞানীরা হাতে পাননি। অবশেষে এই নদীর আবিষ্কার তাদের এই ধাঁধার রহস্য উদ্ঘাটনে সাহায্য করেছে। এই প্রসঙ্গে পিয়েত্রো মিলিলো, হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন পদার্থবিদ যিনি গবেষণায় জড়িত ছিলেন না, তিনি ওয়্যার্ডকে বলেন যে, ‘এই পেপারটি গ্রাউন্ডিং লাইনে আসলে কী ঘটছে তা বোঝার ধাঁধায় একটি অংশ যুক্ত করে।’
এরপরে, নদীটি সন্ধান করা বিজ্ঞানীদের, অ্যান্টার্কটিকার সাবগ্লেসিয়াল হাইড্রোলজি সম্পর্কে সামগ্রিক তথ্যদি বোঝার জন্য উল্লেখযোগ্য উত্সাহ প্রকাশ পায়। এর ফলে, তাঁরা আরও ভালভাবে অনুমান করতে পারেন যে, যদি গ্লোবাল ওয়ার্মিং অনিয়ন্ত্রিত থাকে, তাহলে অ্যান্টার্কটিকায় বরফের স্তরগুলি ভবিষ্যতে কীভাবে আচরণ করতে পারে।
একটি বিবৃতিতে কানাডার ওয়াটারলু ইউনিভার্সিটির গ্ল্যাসিওলজিস্ট ক্রিস্টিন ডাও বলেছেন, ‘এই আবিষ্কারটি (নদী) আমাদের মডেলগুলির একটি মিসিং লিঙ্ক হতে পারে। শুধু এই নদী ব্যবস্থার প্রভাবের জন্য নয়, বরফ কেন দ্রুত হারিয়ে যাচ্ছে তা জানার মাধ্যমেই আমরা যথাযথ মডেল তৈরি করতে পারি এবং ভবিষ্যদ্বাণী করতে পারি যে ভবিষ্যতে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে বরফের স্তর কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখাবে এবং তা বিশ্বব্যাপী সমুদ্রের স্তরকে কতটা বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়াও আমরা একটা আশঙ্কার কথা একেবারেই বাদ দিতে পারি না যে, বরফের চাদরে চাপা পড়া কোটি কোটি বছরের পুরনো ভাইরাস যার হদিশ কিনা তাবড় তাবড় বিজ্ঞানীদের কাছেও নেই— ক্রমাগত এই বরফ গলনের ফলে অচিরেই মানুষকে নিজের শিকার বানাবে।’