রোহিঙ্গাইটিসে আক্রান্ত সেরে উঠুন তাড়াতাড়ি

রাজ্যের বিরোধী দলনেতা, গদ্দার কুলের পোদ্দার, বাংলার জয়গান শুনলেই অগ্নিশর্মা হয়ে উঠছেন। আবোল তাবোল আওড়ানোতে ডক্টরেট করে ফেলেছেন বলেও শোনা যাচ্ছে। কেন এমন হল শিশিরবাবুর (থুড়ি, মোদির) ছেলেটার? তাঁর এই রোগের কারণ অনুসন্ধান ও পরিণতি বিশ্লেষণ করলেন পার্থসারথি গুহ

Must read

কোভিড-১৯-য়ের স্মৃতি এখনও যথেষ্ট টাটকা জনমানসে। বিশ্বব্যাপী এমন অতিমারির আগমন তো আর সবসময় হয় না। ফলে ওই সময়টা (বলা ভাল দুঃসময়) ভোলা অসম্ভব। তবে এই মুহূর্তে বাংলা জুড়ে ফের আরও এক ভাইরাস মাথাচাড়া দিয়েছে। যথারীতি নামকরণ নিয়েও হুড়োহুড়ি পড়ে গিয়েছে। কেউ কেউ বলছেন বাংলাতঙ্ক হয়েছে গদ্দার অধিকারীর। আবার কেউ-বা ইংরেজিতে কেতাবি ঢঙে বলছেন, তিনবাটির রোহিঙ্গাইটিস হয়েছে। উল্লেখ্য, কোলাইটিস, মেনিনজাইটিস ইত্যাদি রোগ থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে এমনতর নাম দেওয়া।

আরও পড়ুন-ঘুরে আসুন পেনাং

বলবে নাই বা কেন? কোনও মানুষ যদি নিজের রাজ্যের, মাতৃভূমির জয়ধ্বনি শুনে খেপে যায়, তেড়ে আসে তবে তাকে পাগলামি ছাড়া আর কীইবা বলা হতে পারে! তবে গদ্দার অধিকারী কিন্তু আর পাঁচটা পাগলের মতো নয়। রীতিমতো সেয়ানা পাগল। লোকে বলে শান্তিকুঞ্জে টিম গদ্দারের এমন কেউ নেই যে ভরপুর গুছিয়ে নেয়নি। একাধিক পেট্রোল পাম্প থেকে অগণিত ট্রলার-সহ হরেক রকম ব্যবসার মালিক এই অধিকারী পরিবার। যার মধ্যে প্রভূত অসাধু কারবারও রয়েছে। তার ওপর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক— সব কিছু পেয়েছে এই নিমকহারাম পরিবারটি। তারপরেও বেইমানি করছে। একেই হয়তো বলে গদ্দারের রক্ত। তুমি তাকে যতই সম্মান দাও না কেন, সুযোগ পেলে সবার আগে তোমাকেই আঘাত করবে। ডিএনতেই গন্ডগোল। সেজন্যই পুরশুড়ার মইদুল জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ার পর তাঁর দিকে তেড়ে গিয়ে ভাড়াটে বাহিনী দিয়ে মার খাওয়ায় এই পাষণ্ড বকধার্মিক। রোহিঙ্গার বাচ্চা বলে গালিগালাজ করে।
মইদুল হলেন বাংলার সরলসিধা সেই মানুষটি যিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে প্রথমদিন থেকে দলের ঝান্ডা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। নেত্রীর হয়ে লড়াই করতে গিয়ে সিপিএমের চরম অত্যাচার সহ্য করেছেন। আর হ্যাঁ, অধুনা বিরোধী দলনেতার মতো ঝোপ বুঝে কোপ মেরে তৃণমূলে আসেননি। বিন্দুমাত্র সুযোগসুবিধাও নেননি। এহেন দিন-আনি-দিন-খাই পরিবারের মইদুল সরল ভাষায় জয় বাংলা বলেছিলেন একদা তাঁর নেতাকে দেখে। হয়তো কয়েক মুহূর্তের জন্য ফ্ল্যাশব্যাকে তৃণমূল নেতা ভেবে বসেছিলেন শুভেন্দুকে। ভাবতেও পারেননি একটা লোক এমন আমূল পাল্টে যেতে পারে। অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ বোধহয় একেই বলে। এই তো বছর কয়েক আগেও ঈদ, বকরিদ উপলক্ষে সংখ্যালঘু পরিবারে দাওয়াতে আপত্তি করতেন না। খেয়ে আসতেন আজকের গদ্দার। সঙ্গ দোষে সেই মানুষটা কি না জয় বাংলা শুনে খেপে যাচ্ছে! সব পাড়াতেই এমন কিছু মানুষ আছেন, কিছু বিশেষ কথা শুনলেই খেপে যান।
আমাদের পাড়াতে এক বয়স্ক ব্যক্তি বলহরি শুনলে বেজায় খেপে যেতেন। লাঠি নিয়ে তাড়া করতেন আর গালিগালাজ করতেন। আর ছেলেছোকরাগুলোও তো কম যায় না। মানুষটি রেগে যাচ্ছেন দেখে তাঁকে আরও খ্যাপাত। বিষয়টা এড়িয়ে গেলে কোনও সমস্যাই থাকে না। কিন্তু, বলহরি দাদুর মতো মানুষ রেগে গিয়ে রি-অ্যাক্ট করেন। আর তাতেই ছেলেপুলেরা দ্বিগুণ উৎসাহে লেগে পড়ে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল এক বয়স্ক ভদ্রমহিলা আছেন ৬৩ বললে খেপে যান। সেই থেকে ওনার নাম হয়ে গিয়েছে ৬৩ বুড়ি। কিন্তু নিজের রাজ্যের সুনাম শুনে কেউ যদি রেগে যায় তাহলে তাঁর মানসিক সুস্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে বাধ্য। কেউ যদি তাঁকে রোহিঙ্গা অধিকারী ডেকে বসে তাহলে অবাক হওয়ার কিছু নেই।

আরও পড়ুন-বড় পর্দা থেকে পার্টির বড় পদে

গদ্দারের পাগলামি আরও প্রকট হয়েছে হঠাৎ ‘খায় না মাথায় মাখে’ এমন এক রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে নাচনকোঁদন করায়। বলাবাহুল্য, রাষ্ট্রপুঞ্জর তথ্য অনুযায়ী সারা বিশ্বে রোহিঙ্গা জনসংখ্যা ১৫-২০ লাখের মধ্যে। অথচ শুভেন্দু অধিকারী হঠাৎ করে বলতে শুরু করেছেন আমাদের রাজ্যে নাকি দেড় কোটি রোহিঙ্গা আছে। এসব কথা শুনলে স্পষ্ট বোঝা যায় কতটা গর্দভ, অশিক্ষিত, আহাম্মক এই গদ্দার অধিকারী। আসল কথা হল নিজের ছায়াকেও ভয় পাচ্ছেন শুভেন্দু। কার্যত সেই পাগলামির বহিঃপ্রকাশ ঘটছে সব কিছুতে রোহিঙ্গা দেখায়। সুদূর বার্মার রোহিঙ্গাদের নিয়ে শুভেন্দুর এই টানাটানি দেখলে হয়তো নতুন করে কোনও লেখায় হাত দিতেন শরৎবাবু। বলাবাহুল্য, ভাঁড়ের চরিত্র আলোকিত করতেন শুভেন্দু। বাগাড়ম্বর বহুরূপী নাম হত হয়ত সেই চরিত্রের।
স্বপনকুমারের লেখা পড়ে আমাদের অনেকেরই ছোটবেলা অতিবাহিত হয়েছে। তাঁর গল্পের হিরো গোয়েন্দা দীপক চ্যাটার্জি এক হাতে উদ্যত পিস্তল আর এক হাতে জ্বলন্ত টর্চ নিয়ে পাইপ বেয়ে ধাওয়া করতেন বাজপাখি, কালনাগিনী, ড্রাগনদের। ধরুন কলকাতা থেকে ধাওয়া শুরু হল পরক্ষণেই দেখা যেত রেঙ্গুন পৌঁছে গিয়েছে বাজপাখি, কালনাগিনীরা। পিছনে পিছনে দীপক চ্যাটার্জি! তার মানে সাহিত্যিক স্বপন কুমার হয়তো তাঁর গল্পে বাজপাখিদেরই রোহিঙ্গা বলতে চেয়েছিলেন। অর্থাৎ গল্পের গরু গাছে ওঠার মতো অবস্থা এখন শুভেন্দুর। যেখানে পারছেন, যাঁকে পারছেন রোহিঙ্গা বলে দিচ্ছেন। মইদুল দীর্ঘদিন এ রাজ্যের অধিবাসী। শুভেন্দুর চেয়ে তাঁর বাঙালিয়ানা অনেক বেশি। ফলে গদ্দারের গাঁজাখুরি দেখে তিনি ভোলেননি। সাফ জয় বাংলা বলে প্রতিটা বাঙালির হৃদয় জয় করেছেন। মইদুলকে শুধু রোহিঙ্গা বলে ক্ষান্ত হননি বাংলার ইতিহাসের অপদার্থতম বিরোধী দলনেতা। এই মুহূর্তে বঙ্গ বিজেপির জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী লাইনের বিরুদ্ধে গিয়ে ফের গোবলয়ের জয় শ্রীরাম বলেছেন। উনি হয়তো ভুলে গিয়েছেন দুর্গাপুরে এসে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জয় মা দুর্গা, জয় মা কালী বলেছেন। যাঁর অব্যবহিত পরেই তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, রাজ্যে আগামী বিধানসভা নির্বাচনের পর ওনারা জয় বাংলাও বলবেন। আর কী আশ্চর্য!
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নাড্ডার গলায় জয় বাংলা শোনা গিয়েছে। অথচ শুভেন্দু থেকে গিয়েছেন বহিরাগতসম চিন্তা ভাবনাতেই, চিন্তাগত দীনতা ঘোচেনি। জয় বাংলা শুনলে ওর শরীর কেঁপে উঠছে,বুক ধড়ফড় করছে, পালস রেট তুঙ্গে উঠছে। আরও অনেক কিছু ঘটছে শারীরিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গে যা সভ্য সমাজে লেখা যায় না।
অথচ দেশ জুড়ে প্রধানত বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিতে যেভাবে আপামর বাঙালির ওপর অকথ্য নির্যাতন চলছে, চরম অত্যাচার হচ্ছে, খুন করা হচ্ছে শুধুমাত্র বাংলা বলার অপরাধে সেখানে এই বাংলাদ্রোহীদের বুট পালিশ করে গদ্দার নিজেকে এ যুগের বিভীষণ, মিরজাফর, লর্ড কার্জন প্রতিপন্ন করতে ব্যস্ত। ইংরেজ যেভাবে এদেশে বাঙালি বিপ্লবীদের ওপর দমনপীড়ন চালাত, কেন্দ্রের বাঙালি-বিদ্বেষী বিজেপি সরকার ঠিক সেইভাবে বাঙালির ওপর ভয়ঙ্কর সন্ত্রাস নামিয়ে এনেছে। তাদের তল্পিবাহক হয়ে শুভেন্দুরা বাঙালির কাছে চির কলঙ্কিত হয়ে থাকবেন। ইতিহাস কোনওদিন ক্ষমা করবে না এই দুর্বিনীত, বিকৃত মস্তিষ্কের গদ্দারকে।

Latest article