নকীবউদ্দিন গাজী, বারুইপুর: জমিদারি না থাকলেও, কোনও অংশে বনেদিয়ানাতে খামতি নেই দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুরের রায়চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজোয়। এই জেলার অন্যতম পুরনো দুর্গাপুজো এটি। একসময় জেলার বাবুদের বাড়ির পুজো বলতে এই পুজোটিকেই সকলে জানত। তিনশো বছরের বেশি সময় ধরে এই পুজো চলছে বারুইপুরে রায়চৌধুরী বাড়িতে। ব্রিটিশ শাসক লর্ড কর্নওয়ালিসের সময়ে এই এলাকায় জমিদারির পত্তন হয় রায়চৌধুরীদের। আর সেই থেকেই শুরু হওয়া দুর্গাপুজো নিজস্ব জৌলুস নিয়ে আজও অমলিন। সরকারিভাবে নীলকণ্ঠ পাখি (Neelkantha Pakhi ) ধরা ও দুর্গাঠাকুর বিসর্জনের পর তা ওড়ানোর উপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও, এটাই প্রধান বিশেষত্ব এই বনেদি বাড়ির পুজোর।
দশমীতে বিসর্জনের পর নীলকণ্ঠ পাখি (Neelkantha Pakhi ) ওড়ালে, সে গিয়ে কৈলাসে ভগবান শিবকে খবর দেবে মা দুর্গা মর্ত্য ছেড়ে কৈলাসের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। এই বিশ্বাস থেকে আজও বিসর্জনের পর বারুইপুরের আদি গঙ্গার সদাব্রত ঘাট থেকে নীলকণ্ঠ পাখি উড়িয়ে আসছেন বারুইপুরের এই আদি জমিদার রায়চৌধুরীরা। তবে গতবছর পাখি পাওয়া যায়নি বলে ওড়ানো হয়নি। কিন্তু এবার পাখি পাওয়া গেলে সেই পুরনো রীতি মেনেই ওড়ানো হবে নীলকণ্ঠকে, দাবি রায়চৌধুরীদের।
আরও পড়ুন- ভূমিধসে নৈনিতালে উপড়ে গেল আস্ত দ্বিতল বাড়ি
এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম বিশেষত্ব হল, মহালয়ার পরদিন অর্থাৎ প্রতিপদ থেকেই শুরু হয়ে যায় দেবীর আরাধনা। এখনও সপ্তমী ও অষ্টমীতে পাঁঠাবলি হয়। নবমীতে হয় আঁখ ও চালকুমড়ো বলি। ১৯৫৪ সালে সরকার জমিদারি নিয়ে নিলেও এখনও দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার এই বারুইপুর এলাকায় জমিদার বাড়ির পুজো বলতে রায়চৌধুরী বাড়ির পুজোকেই জানেন সকলে। পুজোর ক’টাদিন সমস্ত আত্মীয়-স্বজন আসেন এই জমিদার বাড়িতে। তাছাড়া জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখনও বহু মানুষ আসেন এই বাড়ির পুজো দেখতে। প্রতিবছর দশমীতেই প্রতিমা বিসর্জনের রেওয়াজ রয়েছে। তবে এলাকার মধ্যে এই রায়চৌধুরীদের বাড়ির ঠাকুর প্রথম বিসর্জন দেওয়া হলে, তারপর একের পর এক বাকি পুজোগুলির প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হয়। রুপোর পাখা দিয়ে দুর্গাকে হাওয়া দিতে দিতে এবং রুপোর ঝাড়ু দিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে করতে বিসর্জন দিতে নিয়ে যাওয়া হয় এই বাড়ির দুর্গা প্রতিমাকে। বহুদিন ধরে এই রীতিই চলে আসছে। পুজো শুরুর দিন থেকেই নিজেদের বনেদিয়ানা মতো সমস্ত নিয়ম-নীতি ও নির্ঘণ্ট মেনে চলে এই পুজো। শুধু দুর্গাপুজো নয়, বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণের সবক’টিই পালিত হয় রায়চৌধুরী বাড়িতে।