পূর্ণেন্দু রায়, নয়াদিল্লি : ভারতে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের মদতে তাদের সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ প্রচার, বিভিন্ন রাজনৈতিক ইস্যুতে পরিকল্পিত ভুয়ো খবর ছড়িয়ে দেওয়ার যে সংগঠিত কাজ চালিয়েছে ফেসবুক সে সম্পর্কে অবহিত ছিল। আরএসএসের মদতে এধরনের মিথ্যা ও বিকৃত খবর প্রচার করা হয় বাংলার একাধিক সমাজ মাধ্যমেও। উগ্র হিন্দুত্ববাদী এইসব সংগঠনের প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে মুসলিম-বিদ্বেষী বিবৃতি প্রচারের বিষয়েও ভালভাবে অবগত ছিল ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। এমনই বিস্ফোরক অভিযোগ তুলে দুনিয়া জুড়ে তোলপাড় ফেলে দিয়েছেন ফেসবুকেরই প্রাক্তন কর্মচারী এবং হুইসেল -ব্লোয়ার ফ্রান্সিস হাউগেন। সম্প্রতি তিনি বিশ্বের অন্যতম জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া সংস্থা ফেসবুকের অবস্থানগত দ্বিচারিতা এবং অভ্যন্তরীণ গুরুতর ত্রুটি সম্পর্কে চমকপ্রদ তথ্য প্রকাশ করেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি এই ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) কাছে অভিযোগ দায়ের করেছেন এবং ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
আরও পড়ুন: বরুণ-মানেকাকে কমিটি থেকে ছেঁটে দিল বিজেপি
কমিশনকে ফেসবুকের প্রাক্তন কর্মী হাউগেন বলেছেন, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের ফেসবুক ব্যবহারকারী সদস্যগোষ্ঠী এবং পৃষ্ঠাগুলি দ্বারা প্রচারিত ভীতিজনক ও ভয়ঙ্কর বিদ্বেষমূলক বিষয়বস্তুর কথা ফেসবুক সংস্থার অভ্যন্তরীণ নথিতেও উল্লেখ করা হয়েছে। এই নথি কমিশনে জমা দিয়েছেন হাউগেন। উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, হাউগেন তাঁর অভিযোগপত্রের সঙ্গে প্রমাণ হিসাবে যেসব নথিপত্র দিয়েছেন, তার মধ্যে রয়েছে ভারত সম্পর্কিত ফেসবুক অপব্যবহারের একটি দীর্ঘ তালিকা এবং বিশেষ করে দক্ষিণপন্থী সংগঠন এবং রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) নাম। হাউগেন বর্ণনা করেছেন, কীভাবে ভয়ের পরিবেশ তৈরি করে এমন বিষয়বস্তু ফেসবুকের মাধ্যমে সুকৌশলে ছড়িয়ে দেওয়া হয় ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর মাধ্যমে। বিশেষ মোড়কে একইসঙ্গে চলে উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা প্রচারের কর্মকাণ্ড। পশ্চিমবঙ্গেও এধরনের ভুয়ো তথ্যভিত্তিক প্রচার চালিয়েছে আরএসএস মদতপুষ্ট গোষ্ঠীগুলি। অথচ তার পরেও রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার অজুহাতে এই ধরনের গোষ্ঠীগুলির ( আরএসএস-সংশ্লিষ্ট) বিরুদ্ধে ফেসবুক সংস্থা যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। উল্টে, বহুক্ষেত্রে আশ্চর্যজনক নরম মনোভাব দেখিয়েছে। ফ্রান্সিস হাউগেন পেশাগতভাবে একজন ডেটা বিজ্ঞানী যিনি ফেসবুকের সঙ্গে ২০২১ সালের মে মাস পর্যন্ত কাজ করেছেন। কেমব্রিজ অ্যানালিটিকার পরে এটি দ্বিতীয় বড় ধরনের তথ্য প্রকাশ, যা আবার ফেসবুককে সমস্যায় ফেলতে চলেছে। মার্কিন সংসদের সামনে হাউগেন তাঁর বিস্ফোরক তথ্যপ্রমাণ নিয়ে হাজির হতে চলেছেন।