সংসদীয় গণতন্ত্রের সবচেয়ে বেশি নিরাপদ জায়গা হল এই পার্লামেন্ট ভবন যেখানে ভারতবর্ষের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দু’জন ব্যক্তি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বসে আছেন। আর এই নতুন পার্লামেন্ট ভবনে নিরাপত্তার কঙ্কালসার গঠন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল সারা ভারতবাসী তথা বিশ্বকে। সমস্ত ভারতবাসী দেখতে পেল কতটা অব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকারের সমস্ত ইন্টেলিজেন্স পুলিশ ও প্রশাসনের। প্রথমেই একটি কথা বলে রাখা ভাল যে, যে-দু’জন সংসদ ভবনে বেআইনিভাবে প্রবেশ করেছিল তাদের কাছে যদি কার্বন মনোক্সাইড বা সায়ানাইড বা অন্য কোনও রকমের মারাত্মক কোনও গ্যাস থাকত তাহলে ওই সংসদ ভবনের সবাই কিন্তু মারা যেতেন। এবং অদ্ভুত ব্যাপার যে নতুন ভবনে অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে উদ্বোধন হল, ঐতিহ্যবাহী অনেক কিছু সেখানে রাখা হল, সেখানে আপৎকালীন কোনও দরজা নেই। অর্থাৎ যদি কেউ আপৎকালীন সময়ে বাইরে বের হতে চায় তার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন-অর্ডার আপলোড করতেই সব স্পষ্ট, সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে কী বলবেন সেই কুৎসাকারীরা
এবার আসি মূল বিষয়ে। কোনও জনপ্রতিনিধির আত্মীয়-স্বজন বা পরিচিত কেউ যদি সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে চায় তাহলে তাকে চার থেকে পাঁচটি স্তর সিকিউরিটি চেকিংয়ের মাধ্যমে প্রবেশ করতে হবে। আর যে জনপ্রতিনিধির সৌজন্যে ভিতরে দু’জন প্রবেশ করেছিল এবং বাইরে আরও চার-পাঁচজন ছিল সেই মহান ব্যক্তির নাম হল প্রতাপ সিমহা। একটু বলে রাখা দরকার, এই প্রতাপ সিমহা কিন্তু নরেন্দ্র মোদির বায়োগ্রাফি লিখেছিলেন এবং এই প্রতাপ সিমহা ২০১৫ সালে খুব উদাত্ত কণ্ঠে বলেছিলেন যে টিপু সুলতান দেশদ্রোহী। যেহেতু এই দুটি মহান কাজ এই প্রতাপ সিমহা করেছিলেন তাই তাঁর ক্ষেত্রে সম্পূর্ণরূপে ছাড় দেওয়া হল, কিন্তু রমেশ বিদুরির প্রতি ছাড় ও মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা গ্রহণ করল এথিক্স কমিটি। এবং অদ্ভুত ব্যাপার, এখনও পর্যন্ত এই প্রতাপ সিমহা কোনওরকম ভাবে দোষ স্বীকার করেননি এবং নরেন্দ্র মোদি তথা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কোনওরকম একটি কথাও খরচ করেননি এই গাফিলতির জন্য।
আরও পড়ুন-পরিবর্তনের পরামর্শ দিতে হবে ডিসেম্বরের মধ্যে, দ্রুত চালু করতে চায় সংসদ
বেশ কিছু চ্যানেলে গিয়ে আমি বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে শুনলাম যে তাঁরা বলছেন, তদন্ত হচ্ছে, তদন্ত করতে দিন। এখন সমস্যা হল, তাহলে মণিপুরের যে ভয়ানক ঘটনার ৮২ দিন পরে মাননীয় মোদিজি কয়েক সেকেন্ড সময় ব্যয় করে মণিপুর সম্বন্ধে একটি কথা বলেছিলেন আর মনে হচ্ছে এই তদন্ত মাঝপথে থেমে যাবে অথবা অনেক পরে যখন এটা থেকে মানুষের মুখ ঘুরে চলে যাবে তখন হয়তো বা একটি কথা খরচ করতে পারেন। এবং দেশবাসীর নজর ঘোরানোর জন্য পাঁচজন তৃণমূল সাংসদকে এবং ন’জন কংগ্রেস সাংসদকে এই ঘটনা ঘটার পরের দিন সাসপেন্ড করে দিলেন। কারণ, তাঁরা নাকি অসংসদীয় আচরণ করেছেন। আচ্ছা, তাহলে রমেশ বিদুরি এবং প্রতাপ সিমহা কোন সংসদীয় আচরণ করেছিলেন একটু জবাব দেবেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীজি? মাননীয় অজিত দোভালকে প্রশ্ন করতে চাই যে পশ্চিমবঙ্গে যদি কোথাও একটি বোমা ফাটে তাহলে সঙ্গে সঙ্গেই এনআইএ তদন্ত শুরু করে দেন আর এত বড় একটা ক্রিমিনাল কনস্পিরেসি হল, সেখানে প্রতাপ সিমহার বিরুদ্ধে কেন এএনআই তদন্ত করল না? যারা সংসদে এই ঘটনা ঘটিয়েছে প্রায় দেড় বছর ধরে তাদের মধ্যে কথাবার্তা চলছিল সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে। যারা সোশ্যাল মিডিয়ার উপরে নজর রাখে সেই কেন্দ্রীয় তদন্ত ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো কী করছিল?
আরও পড়ুন-দিনের কবিতা
এখন দেখা যাচ্ছে এই ক্রিমিনাল কনস্পিরেসি থেকে দৃষ্টি ঘোরানোর জন্য একটি ন্যারেটিভ সৃষ্টি করছে বিজেপি সরকার। পশ্চিমবঙ্গের একজন নাকি এর সঙ্গে যুক্ত আছে যার নাম ললিত ঝা। স্থানীয় লোকজন বলছে, বহুদিন তাকে এখানে দেখা যায়নি। অর্থাৎ নার্যেটিভ চেঞ্জ করার উদ্দেশ্য হল যে পশ্চিমবঙ্গ নাকি এরকম ধরনের উগ্রপন্থী লোকজনের ঘাঁটি। কিন্তু শুধু পশ্চিমবঙ্গ কেন? কিছুদিন আগে মহারাষ্ট্রে অ্যারিস্টোলো কাশ্মীর থেকে ছিল। সারা ভারতবর্ষে যে সমস্ত উগ্রপন্থী কাজকর্ম হচ্ছে সেগুলোর দিকে একটু দৃষ্টি নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল নরেন্দ্র মোদির। আমরা জানতাম যে ভারতের এখন অন্যতম সেরা অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন একটা সময় কলকাতায় কাজ করতেন। তাহলে কি বলব যে অমিতাভ বচ্চন বিখ্যাত হওয়ার পিছনে এই কলকাতার অবদান আছে? আসলে যে ৫/৬ জন সংসদের ভিতরে এবং বাইরে এই কাণ্ড ঘটিয়েছিল তারা প্রতিবাদের মাধ্যমে জানাতে চেয়েছিল যে ভারতবর্ষে চাকরি নেই। কারণ বছরের ২ কোটি চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই ভারতবর্ষে চাকরি নেই, সেটা নিয়ে বিজেপি সরকারের মুখে টুঁ শব্দটি শোনা যাচ্ছে না। তাই মাননীয় নরেন্দ্র মোদি বা অমিত শাহকে এটা অবশ্যই উচ্চারণ করতে হবে যে তাঁদের হাতে থাকা দিল্লি পুলিশ এবং সব ধরনের ইন্টেলিজেন্স যেগুলো আছে, সেগুলো পুরোপুরি ব্যর্থ এবং সেই ব্যর্থতার দায়ভার পশ্চিমবঙ্গে বহু আগে থাকা এক ছেলের উপরে চাপিয়ে দিয়ে দায় এড়ানোর কৌশল শোভনীয় বলে কেউ মনে করছে না।
আরও পড়ুন-ঠিক যেন কেকে’র স্মৃতি! মঞ্চে গান গাইতে গাইতেই মৃত ব্রাজিলের গায়ক
সবশেষে একটা কথা না বললেই নয়। যদি সংসদে এই অবৈধ অনুপ্রবেশকারী মুসলিম সম্প্রদায়ের একজন হত তাহলে কিন্তু বিজেপি সারা ভারতবর্ষে রাতারাতি প্রচার করে দিত যে ভারত বিপদে আছে এবং ভারতের নিরাপত্তা ভঙ্গ করছে কিছু বিচ্ছিন্নতাবাদী মুসলিম মানুষ।