প্রতিবেদন : কথায় আছে চোরের মায়ের বড় গলা! বুধবার সংসদে নির্লজ্জ আচরণে মধ্যে দিয়ে মোদি সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বরূপ আরও একবার প্রমাণ করল এই পুরনো প্রবাদের সার্থকতা৷ রাজ্যসভায় তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখলে (Saket Gokhale) ইডি-সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির অপব্যবহার প্রসঙ্গ তুলতেই এদিন তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন অমিত শাহ। এরই জেরে নির্লজ্জ আচরণ করলেন মোদি সরকারের তিন মন্ত্রী। সাকেতকে বাধা দিতে আসরে নামলেন অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা এবং কিরেন রিজিজু। তাতেও না দমে পালটা তোপ দিয়েছে তৃণমূল শিবির। সাফ জানানো হয়েছে, মোদি সরকারের দমনমূলক নীতির পরোয়া করে না বাংলার মানুষ। আগের মতোই উচিত শিক্ষা পাবে বিজেপি।
উল্লেখ্য, গোটা বিতর্কর সূত্রপাত বুধবার রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সংক্রান্ত আলোচনায়। এখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে সরাসরি মোদি সরকারকে নিশানা করেন তৃণমূল সাংসদ সাকেত গোখেল৷ ইডি, সিবিআই, এনআইএ-র মতো কেন্দ্রীয় এজেন্সির ব্যবহারের মাধ্যমে কীভাবে বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে, কীভাবে তাদের হেনস্থা করা হচ্ছে, পেগাস্যাসের মতো সফটওয়ার ব্যবহার করে কীভাবে বিরোধীদের ফোনে আড়ি পাতা হচ্ছে, তার বিবরণ তুলে ধরে মোদি সরকারের মুখোশ খুলে দেন সাকেত গোখলে৷ ৬৯০০-র মতো দুর্নীতির মামলা রুজু করেছে সিবিআই, এর মধ্যে ৩৬১টি মামলা বকেয়া পড়ে আছে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে, পরিসংখ্যান তুলে ধরে দাবি জানান সাকেত গোখলে৷ এই প্রসঙ্গেই তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রাজ্যের এক্তিয়ারভুক্ত বিষয়। সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপ করার কোনও এক্তিয়ার নেই। রাজ্যের এক্তিয়ারে হস্তক্ষেপ করা কেন্দ্রের কাজ নয়। যদিও গত ১১ বছরে কেন্দ্রীয় সরকার ভারত সরকার এবং ভারত প্রজাতন্ত্রের মধ্যে পার্থক্য ভুলে গিয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক মনে করে তারাই সমগ্র ভারত প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধি এবং রাজ্যের কোনও অংশীদারি নেই। কেন্দ্রীয় সরকার বর্তমানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রককে রাজ্য এবং নির্দিষ্ট কোনও ব্যক্তি কেন্দ্রের সঙ্গে সহমত না হলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবহারের সরঞ্জাম হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে নিজেদের শত্রু বলে মনে করছে এবং তার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ব্যর্থ অনেক ছোট রাজ্য। যদিও পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্য তাদের লড়াই চালিয়ে যাবে।
এখানেই না থেমে মহিলাদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার প্রশ্নে অপরাজিতা বিলের প্রসঙ্গ তুলে ধরে সাকেত বলেন, পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা ঐক্যবদ্ধভাবে অপরাজিতা বিল পাশ করিয়েছে মহিলাদের সুরক্ষার জন্য। সেই বিল পাঠানো হয়েছে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য। আমরা বারবার অনুরোধ করেছি এই বিলে সম্মতি দেওয়ার জন্য। যদিও সেই বিলে এখনও পর্যন্ত অনুমোদন দেওয়া হয়নি।
সাকেতের তোপের মুখে আত্মরক্ষার কোনও উপায় খুঁজে না পেয়ে একযোগে পাল্টা আক্রমণে নামেন মোদি সরকারের তিন মন্ত্রী অমিত শাহ, জে পি নাড্ডা এবং কিরেন রিজিজু৷ শাহ অভিযোগ করেন, বাংলায় ভোট-পরবর্তী হিংসা নিয়ে মামলা রুজু করা হয়েছে। বিজেপি কর্মীদের বাড়ি থেকে বের করে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন শাহ। তাঁর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ জানান তৃণমূল সাসংদরা। সাকেতের একটি মন্তব্যের প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমা চাইতে বলেন সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী। যদিও তার প্রবল বিরোধিতা করে তৃণমূল সাসংদরা প্রশ্ন করেন, কেন, কোন অপরাধে ক্ষমা চাইতে হবে সাকেতকে? এর পরে দু-পক্ষের তীব্র বাদানুবাদ হতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সাকেতের মন্তব্য রাজ্যসভার রেকর্ড থেকে মুছে দেন চেয়ারম্যান জগদীপ ধনকড়।
গোটা ঘটনায় মোদি সরকারের তিন মন্ত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূল শিবির। এই প্রসঙ্গে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে বর্ষীয়ান সাংসদ দোলা সেন বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিজেপি, মোদিবাবু ভয় পান জানি। এই জন্যই তাঁর দলের একজন যুবক সাংসদ সাকেত গোখল বক্তব্য রাখার সময় তাঁকে ৫ বার বিরক্ত করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সংসদ-বিষয়কমন্ত্রী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী তথা সভার নেতা। অসত্য ভাষণ দেওয়া হয়েছে, তাঁকে যা খুশি বলা হয়েছে। আমরা দলের তরফে এর তীব্র নিন্দা করছি।
আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ বাস্তবায়িত, টাকা বরাদ্দ সন্দেশখালি গ্রামীণ হাসপাতালে