গত ২২ ডিসেম্বর সিলভার স্ক্রিনে মুক্তি পেয়েছে ‘সালার পার্ট-১ সিজফায়ার’ (Salaar: Part 1 – Ceasefire)। আদিপুরুষের ভরাডুবির পর বাহুবলী প্রভাসের নতুন ছবি নিয়ে উৎসাহ ছিল তুঙ্গে। ভক্তেরা ভরসা হারাননি। উৎসবের মরশুম। তাই বড়দিনের আগেই ‘ডাঙ্কি’ আর ‘সালার’-এর মুক্তি যেন দর্শকদের উৎসবের আমেজটাকে আরও কয়েক গুণ বাড়িয়ে তুলেছে। এই মাস এবং আগামী মাস জুড়ে ডাঙ্কি আর সালার-জ্বরে কাঁপবে তাঁদের ভক্তকুল। ভাগ হয়েছে দুটো শিবির। কেউ দেখেছেন ‘ডাঙ্কি’ আবার কেউ ‘সালার’। বক্স অফিসে শাহরুখ বনাম প্রভাস লড়াইটা যে জমে উঠবে তা আন্দাজ করাই যাচ্ছিল। সালার মুক্তির পর সেটাই হল। হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। কেউ বলছেন ‘ডাঙ্কি’ ফাটাফাটি আবার কারও মতে ‘সালার’। যে যা-ই বলুন না কেন দুটো ছবি একেবারেই দুরকম। একটা জীবনের গল্প শোনায় অন্যটা কল্পনার ফিনিক্স পাখি হয়ে উড়ে যায়। আর কল্পনাতেই থাকে ইচ্ছেপূরণের চাবিকাঠি কাজেই সার্বিক প্রতিক্রিয়া বলছে ‘সালার পার্ট-১ সিজফায়ার’ এগিয়ে অনেকটাই।
দমদার অ্যাকশনপ্যাক মুভি ‘সালার পার্ট-১ সিজফায়ার’ (Salaar: Part 1 – Ceasefire)। সবচেয়ে বড় আকর্ষণ এই ছবির প্রভাসের স্বমহিমায় কামব্যাক। কী আছে এই ছবিতে? এটা অ্যাকশনপ্রেমীদের মনের, প্রাণের ছবি। ভায়োলেন্স, রক্ত, গোলাগুলি। দক্ষিণী পরিচালকের ছবির কিছু বৈশিষ্ট্য থাকে যেটা এর আগে শাহরুখের ‘জাওয়ান’ ছবিতে আমরা দেখতে পেয়েছি। অতীতে কেজি এফ চ্যাপ্টার-১, কেজি এফ চ্যাপ্টার-২ এবং লিও-তেও দেখা গেছে। এমন ট্রেন্ডিং অ্যাকশন দক্ষিণী পরিচালনারই ফসল। কেজি এফ-এর পরিচালক প্রশান্ত নীল ‘সালার’-এ তার ব্যতিক্রম ঘটাননি। তুমুল লড়াই, গর্জন, গুলিবর্ষণ, অ্যাকশনে ভরা এই ছবিতে গল্পের চেয়ে অ্যাকশনটাই মুখ্য। শীতের রক্ত গরম করার সব রসদই রয়েছে ছবিতে।
আরও পড়ুন- কেন্দ্রীয় প্রকল্পে ব্যবহার হচ্ছে নিম্নমানের সামগ্রী, সংসদীয় কমিটির রিপোর্টে উঠে এল তথ্য
গল্পটা তাহলে কী? দুই বন্ধুর শত্রুতার গল্প, সিংহাসন দখলের লড়াইয়ের গল্প হল ‘সালার’। দেব ও বর্ধ দুই বন্ধু। যাঁদের প্রবল বন্ধুত্ব একটা সময় শত্রুতার রূপ নেয়। ছবির একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র টাট্টো। এক কাল্পনিক শহর খানসারে এদের বাস। যেখানে শুধুমাত্র খারাপ লোকেরাই থাকে এবং একমাত্র তাঁদেরই প্রবেশাধিকার। সেই খানসারেই পা রাখে দেব। সেই খানসারের সম্রাট হওয়ার লড়াইয়ে মাতে দেব ও বর্ধ ওরফে প্রভাস ও পৃথ্বীরাজ।
এখানে ‘সালার’ ছবির গল্পে পরিচালক প্রশান্ত রেখেছেন দুটি টাইমফ্রেম, একটা ১৭৪৭, যেখানে উঠে আসবে উপজাতিদের লড়াইয়ের গল্প। আর আর একটা হল ২০২৩ সাল। ছবিতে রয়েছে জাতপাত, গরিব-বড়লোকের লড়াইয়ের কথা। রাজনীতির কথা। তবে পরিচালক এসবের ঊর্ধ্বে রেখেছেন অ্যাকশনকেই। তাই মারপিট, দাঙ্গাহাঙ্গামা ধরা পড়েছে ছবির প্রতিটা ফ্রেমেই। এই ছবির এক্স ফ্যাক্টর, ওয়াই ফ্যাক্টর সবই হলেন প্রভাস। আদিপুরুষের চূড়ান্ত অসাফল্যের পর প্রভাসের শাপমোচন করল ‘সালার পার্ট-১ সিজফায়ার’।
‘সালার’-এ যদি প্রভাস আর পৃথ্বীরাজ সুকুমারণের অভিনয়ের প্রশ্ন আসে তবে বলা যেতে পারে তাঁদের প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়নি। প্রশান্ত নীলের পরিচালনার গুণে তাঁদের বোঝা অনেকটাই হালকা ছিল। তাঁরা তাঁদের নিজেদের সেরাটুকু শুধু দিয়েছেন। জগপতি বাবুর চরিত্রটা খুব ছোট হলেও মনে রাখার মতো ছিল। শ্রেয়া রেড্ডি নজর কেড়েছেন ভীষণভাবেই।
এ ছাড়া শ্রুতি হাসান, মীনাক্ষী চৌধুরী ও অন্যরাও তাঁদের সেরাটাই দিয়েছেন। শ্রুতি হাসান বেশ সাবলীল। ছবিটা দেখলে প্রভাস-ভক্তদের একবার বাহুবলীর কথা মনে পড়বেই। গল্পের প্রথম পর্বে দানাবাঁধে চিত্রনাট্য এরপর দ্বিতীয় পর্বে মূল গল্পে প্রবেশ এবং ক্লাইম্যাক্স। দেশ জুড়ে হিন্দি, তামিল, তেলুগু, মালয়ালি আর কন্নড় ভাষায় মুক্তি পেয়েছে এই ছবি ফলে ক্ষেত্রটা অনেক বড়। অনুমান করা যাচ্ছে এটাও ‘ডাঙ্কি’কে বক্স অফিসে মাত দেওয়ার একটা বড় কারণ। প্রথমদিন থেকেই এই ছবি সুপারহিট।
এই ছবির প্রথম মুক্তি পাওয়া গান ‘সুরজ হি ছাঁও বনকে’ সাড়া ফেলে দিয়েছিল মুক্তির পরেই। মুক্তির ১১ ঘণ্টার মধ্যেই ইউটিউবে এই গানটির লিরিক্যাল ভিডিওতে ১.৪ মিলিয়ন ভিউ হয়। ছবির অন্যান্য গানও বেশ ভাল। সালারে সঙ্গীত পরিচালক রবি বাসরুর, গান লিখেছেন কৃষ্ণকান্ত, প্লে ব্যাক করেছেন ডি ভি মোহনা কৃষ্ণা, মোহন রাঠোর প্রমুখ। ছবির প্রযোজক বিজয় কিরাগান্দুর।
শাহরুখ বনাম প্রভাস-এর প্রসঙ্গে শাহরুখ খানের পাঠান থেকে জওয়ান এবং রণবীরের অ্যানিমালের প্রথম দিনের আয় নজরকাড়া ছিলই। তবে প্রভাসের সালার যেন চমকে দিচ্ছে সকলকে। ‘ডাঙ্কি’র সঙ্গে মুক্তি পেয়েও জয়জয়কার দক্ষিণী অভিনেতার। যেমন ছবির প্রতিটা দৃশ্যে চমক ঠিক তেমনই চমক রয়েছে এর আয়ের অঙ্কেও। বলিউডের ব্লকবাস্টার সিনেমাকেও ঠাঁই পেতে দেয়নি বহু জায়গায় সালার। আর প্রথমদিনে এত টাকা যে বাস্তবে বিশ্বাস করা কঠিন হচ্ছে অনেকের ক্ষেত্রেই। ছবিটি প্রথমদিনে আয় করেছে প্রায় ৯৫ কোটি টাকা। যার মধ্যে তেলেঙ্গানা এবং অন্ধ্রপ্রদেশে সবচেয়ে বেশি আয় হয়েছে— যার অঙ্ক প্রায় ৭০ কোটি টাকা। বছরের সবচেয়ে বড় ব্লকবাস্টার হয়ে উঠেছে ছবিটি। যেখানে শাহরুখের পাঠান ছবির প্রথম দিনের আয় ছিল ৫৭ কোটি এবং জওয়ান এবং অ্যানিমালের প্রথমদিনে আয় হয়েছিল ৭৫ কোটি। আরও বড় খবর, এই মুহূর্তের ‘সালার’ চারশো কোটির ঘর প্রায় ছুঁয়ে ফেলেছে। সর্বোপরি বলা যায়, এই সিনেমাতে অ্যাকশন দৃশ্য এতটাই মারকাটারি যে দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে এক লহমায়।