প্রতিবেদন : সলমন খান মানেই দারুণ সাফল্য। তুমুল জনপ্রিয়তা। তাঁর ছবি মুক্তি মানেই বক্স অফিসে ঝড়। তবে গত কয়েক বছরে কিছুটা হলেও এই জনপ্রিয়তা ফিকে হয়েছে। সকলেই জানেন, তিনি ভক্তদের একবার কথা দিলে সেই কথা রাখেন। গত ইদের আগে সলমন ঘোষণা করেছিলেন, ইদে মুক্তি পাবে তাঁর ছবি ‘রাধে ইওর মোস্ট ওয়ান্টেড ভাই’। ঠিক ছিল সিনেমা হলেই মুক্তি পাবে ছবিটি। কিন্তু করোনা মাথাচাড়া দিতেই কয়েকটি হলের পাশাপাশি অনলাইনে দর্শকদের ছবিটি দেখার সুযোগ করে দেন আত্মবিশ্বাসী বলিউড সুপার স্টার। কিন্তু তেমনভাবে সফল হননি। ছবিটি করেনি সলমন-সুলভ বাণিজ্য।
তাঁর ‘রেস থ্রি’ ছবিটি ঘিরেও ব্যাপক প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সেই ছবিও প্রত্যাশা-পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়েছিল তাঁর ‘টিউবলাইট’ও। যদিও তার মধ্যেই তিনি উপহার দিয়েছেন ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’, ‘ভারত’-এর মতো বাণিজ্য-সফল ছবি। এইভাবে সাফল্য-ব্যর্থতার আলো-আঁধারির মধ্যে দিয়েই কেটেছে সলমনের তিন-চার বছর।
ফিরে যাওয়া যাক কয়েক বছর আগে। তখন ছবিটা ছিল অন্যরকম। ‘দাবাং’ দিয়ে শুরু হয়েছিল তাঁর সাফল্যের জয়যাত্রা। সেই জয়যাত্রা অব্যাহত ছিল দীর্ঘ সময়। সেইসময় তিনি দেখেননি ফ্লপের মুখ। একটানা উপহার দিয়েছেন ‘বডিগার্ড’, ‘এক থা টাইগার’, ‘কিক’, ‘বজরঙ্গী ভাইজান’, ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’র মতো বাণিজ্য-সফল ছবি। প্রতিটি ছবিই সদস্য হয়েছে একশো কোটি ক্লাবের। কোনও কোনও ছবির নামের সঙ্গে জুড়েছে ব্লক ব্লাস্টার তকমা। সেইসময় সলমন পিছনে ফেলে দিয়েছিলেন শাহরুখ, আমির প্রমুখ সমসাময়িক নায়কদের। অস্বীকার করার উপায় নেই, তিন দশকের কেরিয়ারে প্রথম দিকে অন্য নায়কদের ছায়ায় ঢাকা পড়েছিলেন সলমন, বহু সুপারহিট ছবি উপহার দেওয়া সত্ত্বেও। তবে গত দশকটা ছিল শুধুমাত্র সলমনের। কিন্তু সেই সাফল্যেও ধীরে ধীরে থাবা বসাতে শুরু করেছে ব্যর্থতা। স্বাভাবিক কারণেই চিন্তিত তিনি। মনমরা ভক্তরাও। কোথায় সমস্যা বোঝার চেষ্টা করছেন সুপারস্টার। ছবি নির্বাচন করছেন ভেবেচিন্তে। আর অগ্রাধিকার দিচ্ছেন না বন্ধুত্বকে। এই মুহূর্তে সলমনের পাখির চোখ ‘অন্তিম দ্য ফাইনাল ট্রুথ’ ছবিটি। মহেশ মঞ্জরেকর পরিচালিত এই ছবিতে একজন শিখ পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করছেন সলমন। গালে দাড়ি, মাথায় পাগড়ি৷ নাম রাজবীর সিং। সৎ, সাহসী। দুষ্টের দমন যাঁর একমাত্র উদ্দেশ্য। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবির প্রোমো ইতিমধ্যেই সুপারহিট। সর্দারজি সলমনকে দুর্ধর্ষ অ্যাকশন করতে দেখা যাচ্ছে। হচ্ছেন শার্টলেশও। ছবিতে আছেন তাঁর ভগিনীপতি আয়ুশ শর্মা। একজন গ্যাংস্টারের চরিত্রে। সবথেকে বড় কথা, এই ছবিতে দেখা যাবে এক অচেনা সলমনকে। তাঁর পাশে থাকছেন না কোনও নায়িকা। এমনকী তাঁকে সেইভাবে দেখা যাবে না কোনও গানের তালে নাচতেও। জানা গেছে, পরিচালকের নয়, এই সিদ্ধান্ত পুরোপুরি সলমনের। নায়িকা নিয়ে নাকি নাচের দৃশ্যের শুটিংও হয়ে গিয়েছিল। তবে সুপারস্টার নিজেই সেইসব বাতিল করে দিয়েছেন। তাঁর যুক্তি, যে-ধরনের চরিত্র তিনি ফুটিয়ে তুলছেন, তার সঙ্গে নাচা-গানা-রোমান্স একেবারেই যায় না।
আরও পড়ুন : নোংরা রাজনীতি, গোয়ায় বাতিল ব্রাত্য বসুর ফিল্ম
‘অন্তিম দ্য ফাইনাল ট্রুথ’ অ্যাকশন থ্রিলার একটি মারাঠি ছবির হিন্দি রিমেক। মূল ছবিটি দেখেই নাকি পছন্দ হয়ে যায় সলমনের। সম্ভবত তখনই তিনি রিমেক বানানোর সিদ্ধান্ত নেন। অভিনয়ের পাশাপাশি ছবিটি প্রযোজনা করছেন সলমন। ছবির গানগুলোয় সুর দিয়েছেন রবি বাসরুর, হিতেশ মোদক। ইতিমধ্যেই ‘ভাই কি বার্থডে’ গানটি দারুণ জনপ্রিয় হয়েছে। গানটি মুক্তি পেয়েছে শাহরুখ খানের জন্মদিনে। পরিচালনার পাশাপাশি ছবিতে একটি বিশেষ চরিত্রে অভিনয় করছেন মহেশ মঞ্জরেকর। আছেন বাংলার যিশু সেনগুপ্তও।
২০২০-র নভেম্বরে শুরু হয়েছিল শুটিং। এইবছর ২৫ অক্টোবর সামনে এসেছে ট্রেলার। ছবিটি মুক্তি পাবে ২৬ নভেম্বর। অনলাইনে নয়, সিনেমা হলে। এর পাশাপাশি যশরাজ ফিল্মসের টাইগার সিরিজের তৃতীয় ছবিতে অভিনয় করছেন সলমন। চলছে শুটিং। সলমন ভক্তদের ধারণা, এই দুটি ছবির মাধ্যমে আবার সাফল্যের মুখ দেখবেন বলিউড ভাইজান। ফিরবেন স্বমহিমায়।
অতিমারির কারণে জোর ধাক্কা খেয়েছে বিনোদনজগৎ। সিনেমা হলের মালিক, ডিস্ট্রিবিউটরা আশাবাদী, সলমন খানের ‘অন্তিম দ্য ফাইনাল ট্রুথ’ ছবিটি হয়তো দূর করে দেবে বক্স অফিসের দীর্ঘদিনের খরা। আনবে নতুন জোয়ার। সিনেমা হলের ভিতরে এবং বাইরে ফিরবে চিরচেনা ছবি।