ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী হল কলকাতা। অন্যান্য বছরের মতো এ বছরও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের হাত ধরে শুরু হচ্ছে বাংলা সঙ্গীত মেলা (sangeet mela 2025) এবং লোকসংস্কৃতি উৎসব ২০২৫। ২৫ ডিসেম্বর থেকে শুরু হচ্ছে রাজ্য সঙ্গীত মেলা, চলবে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত, প্রতিদিন বিকেল ৫টা থেকে। অংশগ্রহণ করবেন বাংলার পাঁচ হাজার সঙ্গীতশিল্পী ও যন্ত্রশিল্পী। বুধবার এই মেলার “কার্টেন রেজার” অনুষ্ঠান অর্থাৎ মেলার শুভ সূচনা হল।
রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানাই। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি ২০১১-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত তথ্য ও সংস্কৃতি দফতর কোনো দিন টাকা পয়সা নিয়ে অনুষ্ঠান করে না। যতদিন আমি থাকব কোনো সঙ্গীত শিল্পীর থেকে এক টাকা নেওয়া হবে না। আশা করি চলতি বছর সঙ্গীত মেলা (sangeet mela 2025) সকলকে নিয়ে ভালোভাবে আয়োজিত হবে। এবছর সঙ্গীতমেলায় যারা অংশগ্রহণ করবেন তাঁদের মধ্যে ৫০০ নতুন শিল্পী। সঙ্গীতমেলায় নতুন শিল্পীরা বাংলার অনেক জায়গায় অনুষ্ঠান করছেন। মেলায় যারা স্টল দেন তার জন্য বহু মানুষ অর্থনৈতিকভাবে উপকৃত হন। প্রত্যেক বছরে আমরা কিছু নতুন দেওয়ার চেষ্টা করি। এই অনুষ্ঠান আন্তর্জাতিক জায়গায় যাওয়ার মতো। সাধারণ মানুষ যাতে মেলায় নতুন নতুন শিল্পীদের উৎসাহ দিতে পারে। এই কার্টেন রেজার অনুষ্ঠান আগামী বছর আরো ভালোভাবে করার পরিকল্পনা রয়েছে। তথ্য সংস্কৃতি আধিকারিকদের আমি আমার পরিকল্পনার কথা জানাব। আর কয়েকমাস পর রাজ্যে আবার বিধানসভা নির্বাচন। আমরা চতুর্থবারের জন্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে পাবো। ”
সংস্কৃতি অধিকর্তা কৌশিক বসাক জানান, “বাংলা সঙ্গীতমেলা মোট ১০টি মঞ্চে হবে। পৌষ উৎসব হবে তিন জায়গায়। প্রায় ৫ হাজারের বেশি সঙ্গীতশিল্পী যন্ত্রশিল্পী অংশ নেবেন।”
তথ্য সংস্কৃতি বিভাগের ডিরেক্টর কৌস্তভ তরফদার জানান, “এই কদিন সংগীতময় পরিবেশ গরে উঠবে। হচ্ছে পৌষ উৎসব। থাকবে পিঠে-পুলি।”
আরও পড়ুন-জয়পুরে প্লাস্টিকের মধ্যে কম্বলে মোড়া মহিলার দেহ উদ্ধার
সঙ্গীতশিল্পী শিবাজি চট্টোপাধ্যায় জানান, “এই কটা দিন আমরা সুন্দর পরিবেশের মধ্যে দিয়ে কাটাবো।”
গানের সুরে পুরোনো বছরকে বিদায় জানানো আর নতুন বছরের আবাহন। প্রত্যেক শীতে কলকাতার অন্যতম আকর্ষণ এই সঙ্গীত মেলা। কলকাতা ছাড়াও এই মেলায় গান গাইবেন বিভিন্ন জেলার প্রবীণ-নবীন শিল্পীরা। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের সমস্ত জেলার লোকশিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন। জানা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত বিভিন্ন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা ও কর্মশালায় অংশগ্রহণকারী প্রতিভাবান নবীন শিল্পীরাও এই মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাচ্ছেন।
২৫ ডিসেম্বর থেকে রবীন্দ্র সদন, শিশির মঞ্চ, হেদুয়া পার্ক, বাংলা অ্যাকাডেমি সভাঘর, রাজ্যসঙ্গীত অ্যাকাডেমি মুক্তমঞ্চ, একতারা মুক্তমঞ্চ,, মধুসূদন মুক্তমঞ্চ,যোধপুর প্রগতি সংঘের মাঠ (লর্ডসের মোড়), রবীন্দ্র-ওকাকুরা ভবন, দেশপ্রিয় পার্ক,এবং চারুকলা ভবন সংলগ্ন মঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে ‘বাংলা সঙ্গীতমেলা-২০২৫’ ও ‘বিশ্ববাংলা লোকসংস্কৃতি উৎসব-২০২৫’ ।
প্রতিদিন বিকাল ৫টা থেকে শুরু হবে বর্ণময় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কলকাতা ছাড়াও বিভিন্ন জেলার শিল্পীরা অংশগ্রহণ করবেন এই সঙ্গীতমেলায়। বিভিন্ন সঙ্গীত প্রতিযোগিতা অংশগ্রহণকারী নবীন শিল্পীরাও এই মেলায় অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন। থাকছে আরও চমক – বাংলা ব্যান্ডের গান।
এবারের মেলার অন্যতম বড় চমক হলো গগনেন্দ্র শিল্প-প্রদর্শশালায় আয়োজিত প্রদর্শনী। দুপুর ২টো থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কিংবদন্তি নচিকেতা ঘোষ, সলিল চৌধুরী এবং গৌরীপ্রসন্ন মজুমদারের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে একটি প্রদর্শনী চলবে- “শতবর্ষে শ্রদ্ধাঞ্জলি”।
শুধুমাত্র গান নয়, রবীন্দ্রসদন-নন্দন চত্বরে মিলবে গ্রাম বাংলার কারিগরদের তৈরি নানা শিল্পকর্ম। আর জিভে জল আনা শীতের পিঠে-পুলি তো থাকছেই! বইপ্রেমীদের জন্য থাকছে তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের বিশেষ বইয়ের স্টল। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে আয়োজিত এই মেলা সাধারণ মানুষের জন্য এক অনন্য উপহার।
বুধবারের সূচনা পর্বে বাংলার লোকসংস্কৃতির বৈচিত্র্য ফুটে ওঠে। দক্ষিণ ২৪ পরগণার শিল্পীদের ঢাক ঢোলের তালে মেতে উঠেছিল বাংলার সঙ্গীত মেলার আসর। এরপরই হুগলি জেলার লোকশিল্পীরা আদিবাসী নৃত্য পরিবেশন করেন। একতারা-খঞ্জনি হাতে বাউল সুরে “তোমায় হৃদ মাঝারে রাখব” গান গেয়ে শোনালেন দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাউল সঙ্গীত শিল্পীরা। মুর্শিদাবাদ থেকে রায়বেশে আসা শিল্পীদের মার্শাল নৃত্যের মাধ্যমে শারীরিক শক্তির প্রদর্শন ছিল অতুলনীয়। বিশেষ আকর্ষণ হিসেবে ছিল পুরুলিয়ার বিশ্বখ্যাত ছৌ নাচ এবং নাটুয়া।

