প্রতিবেদন : যত সময় যাচ্ছে ততই খারাপ হচ্ছে জোশীমঠের (Joshimath) পরিস্থিতি। স্থানীয় শঙ্করাচার্যের মঠ-সহ আরও একাধিক মন্দিরেও ফাটল দেখা দিয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দারা সকলেই বলেছেন শেষ ১৫ দিনে ফাটল অনেক বেড়েছে। শঙ্করাচার্য মঠের প্রধান স্বামী বিশ্বপ্রিয়ানন্দ বলেছেন, বিজেপি সরকারের অপরিকল্পিত উন্নয়ন ও নগরায়ণের ফলেই জোশীমঠের (Joshimath) এই পরিস্থিতি হয়েছে। সোমবারই জোশীমঠের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল। এই দলে ছিলেন ভূবিজ্ঞানীরাও। এখনও পর্যন্ত জোশীমঠে প্রায় ৬৫০টি বাড়িতে বড় মাপের ফাটল দেখা দিয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ি সম্পূর্ণ ধসে পড়েছে। পাশাপাশি রাজরাজেশ্বরী, ত্রিপুরাসুন্দরী-সহ অন্যান্য মন্দিরেও বড় ধরনের ফাটল ধরেছে। সর্তকতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে বন্ধ রাখা হয়েছে এলাকার সব দোকানপাট। স্বাভাবিকভাবেই চরম বিপাকে পড়েছেন এলাকার মানুষ। ঘটনার জেরে রাজ্যের বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা। তাঁরা স্পষ্ট বলেছেন, এনটিপিসির অপরিকল্পিত কাজের জন্যই আজ জোশীমঠের এই অবস্থা। পাশাপাশি সড়ক চওড়া করতে গিয়ে বর্ডার রোড অর্গানাইজেশন ও জোশীমঠের ব্যাপক ক্ষতি করে দিয়েছে। সুপ্রিম কোর্টে করা এক আবেদনে জোশীমঠ এলাকায় এনটিপিসির জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বন্ধ রাখার আবেদন জানানো হয়েছে। পাশাপাশি যে সমস্ত বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে সেগুলির জন্য ক্ষতিপূরণের দাবিও জানানো হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ভূবিজ্ঞানী ও ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যয়ের কমিটি গঠন করতে হবে। ওই কমিটির সুপারিশ মেনে সকলকেই এগোতে হবে। যতক্ষণ না সেই কাজ হচ্ছে ততক্ষণ জোশীমঠে সব ধরনের কাজ বন্ধ রাখতে হবে।
আরও পড়ুন-কাশ্মীর থেকে আলাদা হয়ে ক্ষতি, মত লাদাখের
শঙ্করাচার্যের মামলা : জোশীমঠের এই ঘটনাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করার দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট মামলা করেছেন জোশীমঠের শঙ্করাচার্য। তিনি দাবি করেছেন, প্রাচীন এই শহরকে বাঁচাতে অবিলম্বে উদ্যোগী হতে হবে। জোশীমঠকে বাঁচানোর ব্যাপারে রাজ্যের বিজেপি সরকার আদৌ উদ্যোগী নয়। শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড় মঙ্গলবার এই মামলাটির শুনানির জন্য তালিকাভুক্ত করার নির্দেশ দিয়েছেন। পাশাপাশি দিল্লি হাইকোর্টেও জোশীমঠ নিয়ে একটি আলাদা মামলা দায়ের হয়েছে। অন্যদিকে অভিমুক্তেশ্বরানন্দ সরস্বতী বলেছেন, জোশীমঠকে বাঁচানোর জন্য কেন্দ্র বা রাজ্যের বিজেপি সরকার কেউই চিন্তিত নয়।
জোশীমঠ বাঁচাও সমিতি ও রাজনৈতিক দলগুলির অভিযোগ : এদিকে জোশীমঠ বাঁচাও সমিতির সভাপতি অতুল সতি বলেছেন, বেশ কয়েক বছর আগেই তাঁরা এ বিষয়ে রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছিলেন। কিন্তু রাজ্যের বিজেপি সরকার তাঁদের কোনও কথাই কানে তেলেনি। তাঁরা বারবার বলেছিলেন, এনটিপিসির কাজে এই শহর অচিরেই তলিয়ে যাবে। কিন্তু তাঁদের সেই বক্তব্যকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনেনি বিজেপি সরকার। আজ তারই ফল ভুগছে জোশীমঠ। কংগ্রেস নেতা পবন খেরা অভিযোগ করেছেন, সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ কারও পরামর্শই কানে তোলে না মোদি সরকার। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ যদি বিজেপি সরকার মেনে নিত তাহলে আজ জোশীমঠ তলিয়ে যেত না। শিবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী অভিযোগ করেছেন, বিবেচনাহীন উন্নয়ন করার জন্যই আর জোশীমঠের এই ভয়াবহ পরিণতি। বাস্তুচ্যুত হওয়ার মুখে গোটা জনপদের মানুষ৷