সুমন করাতি হুগলি: প্রথমেই যে আমরা সবাই চমকে গেলাম, ওরে বাবা! পুলিশ কাকু চলে এসেছেন, দুষ্টুমি আর করব না, কিন্তু না— উনি আমাদের ক্লাস নিতে এসেছেন। এসডিপিও আরামবাগ স্যার সুপ্রভাত চক্রবর্তী। এদিন প্রথমে স্কুলে পুলিশ দেখে চমকেই উঠেছিল ছাত্রছাত্রীরা। কিন্তু এরপরেই পুলিশের ভূমিকায় খুশি পড়ুয়ারা।
আরও পড়ুন-প্রশাসনে বড় রদবদল
শিক্ষকের ভূমিকায় পুলিশ। খাকি পোশাকে ক্লাস নিলেন পুলিশ কর্তারা। আর মন দিয়ে ক্লাস করল পড়ুয়ারা। বৃহস্পতিবার এমনই ছবি ধরা পড়ল হুগলির আরামবাগ হাইস্কুলে। সবাই তখন ক্লাসরুমে বসে রয়েছে। হঠাৎ খাকি পোশাকে ক্লাসরুমের ভিতর ঢুকল একদল পুলিশ। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই ক্লাসরুমের বেঞ্চে পড়ুয়াদের সঙ্গে গিয়ে বসে পড়লেন ‘পুলিশকাকু’। যাঁর কাঁধে সমাজের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব, তাঁকে এদিন দেখা গেল একেবারে অন্য ভূমিকায়।
হুগলির আরামবাগ হাইস্কুল পরিদর্শনে গিয়ে ক্লাস নিলেন এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী ও স্থানীয় থানার আইসি রাকেশ সিং। এদিন হঠাৎ করেই স্কুলে গিয়ে কয়েকটি শ্রেণির ক্লাস নিতে দেখা গেল তাঁদের। ক্লাস নেওয়ার সময় পড়ুয়াদের জীবনের লক্ষ্য এবং সামাজিক দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে বেশ কিছু কথা বলেন এসডিপিও। পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলােরও যে প্রয়োজন রয়েছে, তাও উঠে আসে এসডিপিও-র কথায়। অনেক কঠিন বিষয়কে খুব সহজেই পড়ুয়াদের সামনে তুলে ধরেন সুপ্রভাত চক্রবর্তী। এদিন স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গে বেশ খানিকটা সময় কাটান এসডিপিও এবং আইসি।
আরও পড়ুন-পড়ুয়ার শিকল খুলে দিলেন মহকুমাশাসক
এসডিপিও সুপ্রভাত চক্রবর্তী বলেন, এরাই তো ভবিষ্যতের সম্ভাবনা। এদের কাছে আসতে পারা মানে বিশাল ব্যাপার। নিজেকে ওদের মধ্যে দেখতে পাচ্ছিলাম। আমার এমনিতেই পড়াতে ভাল লাগে। আমার বাড়িতে পড়ানোর একটা কালচার আছে। আমাদের নিজস্ব টোলও ছিল। আমার পড়াতে বেশ ভাল লাগে। কঠিন বিষয় যদি ছাত্রদের সহজে বোঝানো যায় তবেই প্রাথমিক ধারণাগুলি পরিষ্কার হবে। ছোট ছোট পড়ুয়াদের মধ্যে নিজেকে দেখতে পাচ্ছিলাম। তবে আমি অবশ্য লাস্ট বেঞ্চে বসতাম। পাশাপাশি অভিভাবকদের প্রতি তাঁর বার্তা, ছাত্র-ছাত্রীরা কী পড়ছে, কতটা পড়ছে, সেই দিকে যেন তাঁরা খেয়াল রাখেন। একইসঙ্গে পড়ুয়ারা যাতে খেলাধুলার সুযোগ পায়, সেই দিকটিও নিশ্চিত করার বার্তা দেন তিনি।
আরও পড়ুন-ভাঙড় থানার উদ্যোগে পালিত হল অকাল মাদক বিরোধী দিবস
পুলিশের এই ভূমিকায় খুশি স্কুলের অভিভাবক-সহ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও। প্রধান শিক্ষক বলছেন, ‘‘আমাদের খুব ভাল লাগছে। পুলিশ মানেই যেন ভয়ের বিষয়, ছোট ছোট পড়ুয়াও ভয় পেত। তবে আজ আমরা একটু অবাক হয়ে গিয়েছি। কারণ পুলিশ মানে আর ভয় নয়, পুলিশ মানে বন্ধু, শিক্ষা, প্রগতি, উন্নতির ধারক এবং বাহক।’’ পুলিশ যেন আগামিদিনেও এভাবেই তাঁদের পাশে থাকে, সেই আবেদনও জানান স্কুলের প্রধান শিক্ষক। স্কুলের এক ছাত্র বলে, প্রথমে ক্লাসে পুলিশ দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু পুলিশ কাকু আমাদের যেভাবে পড়াল আর সব কিছু ভাল করে বুঝিয়ে দিল আমাদের বেশ ভাল লাগল।