আরজি কর : জিডির তথ্যে লুকিয়ে রহস্য

জিডি নিয়ে ইচ্ছাকৃত তথ্য চাপা দেওয়ার পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তাররাই ময়নাতদন্তে স্বাক্ষর করেও সেই ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

Must read

প্রতিবেদন : আরজি করের ঘটনায় ডাক্তারি পড়ুয়ার নিথর দেহটি কারা প্রথম দেখেছিল? ঘিরে রেখেছিল? পুলিশের কোন কর্তা প্রথমবার দেহটি দেখেন? পুলিশের জিডি ক’টায় এবং তিনি কী লিখেছিলেন? জিডি অনেক হিসাব উল্টে দিচ্ছে। অনেক মিথ্যাচার ক্রমশ সামনে চলে আসছে।

আরও পড়ুন-পুজোয় সাবেকি রান্না

সেদিন কী ঘটেছিল? একটি তথ্য এই মুহূর্তে প্রকাশ্যে এসেছে। সেটি একটি জিডি বা জেনারেল ডায়েরি। আরজি কর আউটপোস্টে এই জিডিটি হয়েছিল। আপাতত এই জিডির তথ্যটি সিবিআই হেফাজতে।
জিডি এন্ট্রি করেন এএসআই বাবু। পুলিশের তরফে পড়ুয়ার দেহ প্রথম তিনিই দেখেন। জিডিতে যা লেখা হয়েছে সেটাই বিস্ফোরক। কত মিথ্যাচার লুকিয়ে রয়েছে তা এই জিডিটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে। রুটিন রাউন্ড সেরে বাবু সেদিন আউটপোস্টে ফিরে আসেন। এই সময় হাসপাতালের এক বেসরকারি নিরাপত্তারক্ষী ছুটে আসেন বাবুর কাছে। জানান, চেস্ট ডিপার্টমেন্টের ডাক্তাররা আউট পোস্ট থেকে একজন পুলিশকে চাইছেন। শুনেই আরও কয়েকজন সহকর্মীকে নিয়ে এএসআই ছুটে যান চেস্ট ডিপার্টমেন্টে। যান তিন তলায়। ঢুকেই বাবু কী দেখেন? সেটাই লক্ষ্য করার বিষয়। বাবু জিডিতে লিখেছেন, চেস্ট ডিপার্টমেন্টে ঢুকে দেখি, সেমিনার রুমে কম করে ১০-১৫ জন ডাক্তার রয়েছেন। এবং এক মহিলা মেঝেতে পড়ে রয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গেই আউটপোস্টের ওসি ও টালা থানার ওসির সঙ্গে যোগাযোগ করি। দু-জায়গা থেকে পুলিশ না আসা পর্যন্ত জায়গায় ছিলাম। বাকি টিম চলে এলে আউটপোস্টে ফিরে গিয়ে জিডি করি। যেটি সিবিআই বাজেয়াপ্ত করে ও পরে বাবুকে জেরাও করে।

আরও পড়ুন-তুমি কন্যা

লক্ষণীয় হল এই জিডি। বাবু জানাচ্ছেন ডাক্তারি পড়ুয়া যখন মেঝেতে পড়ে তখন তাঁকে ঘিরে রয়েছেন কম করে ১০-১৫ জন ডাক্তার। মাথায় রাখতে হবে ঘটনা জানার কয়েক মিনিটের মধ্যেই এই দৃশ্য তিনি দেখেছিলেন। সময়টা সকাল ৯টা ৪৫ মিনিট থেকে ১০টা ১০ মিনিট। এরপরেই টালা থানাকে বিষয়টি জানানো হয়। সুকৌশলে একটি বিষয় রটিয়ে দেওয়া হয়েছে, যেখানে দেহটি ছিল সেই জায়গার তথ্য লোপাট করা হয়েছে। সিবিআইও নাকি এ-নিয়ে তদন্ত করছে। ডাক্তারদের একটি অংশ এই সময়কার একটি ছোট্ট ভিডিও ক্লিপ ও ছবি প্রকাশ্যে আনে। যেখানে দেখা যাচ্ছে সন্দীপ ঘোষ, পুলিশ অফিসাররা সেমিনার রুমে রয়েছেন। এমনকী একটি স্টিল ছবিও প্রকাশ্যে নিয়ে আসা হয়। যা দিয়ে প্রমাণ করার চেষ্টা হয়, বহু মানুষ দেহটিকে ঘিরে রয়েছে। পরে দেখা যায় এদের ৯০ শতাংশ লোকই ছিল পুলিশের এবং অনেকেই ছিলেন পদস্থ কর্তা। কেন ছবি ও ক্লিপিং ছাড়া হয়েছিল? জুনিয়র ডাক্তাররা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই এটি করেছিলেন। প্রথমে প্রমাণ করার চেষ্টা বহু বাইরের লোক ছিল। তারপর রটনা তোলা, এরাই আসলে তথ্য লোপাট করেছে।

আরও পড়ুন-মায়ের পুজোয় মেয়েরা

জিডি নিয়ে ইচ্ছাকৃত তথ্য চাপা দেওয়ার পাশাপাশি জুনিয়র ডাক্তাররাই ময়নাতদন্তে স্বাক্ষর করেও সেই ময়নাতদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। এমনকী সেমিনার রুমের পাশে ঘর ভাঙার বিষয়েও মতামত দেওয়ার পরেও সে-নিয়ে আন্দোলন পর্যন্ত করেছেন এই দ্বিচারী জুনিয়র ডাক্তাররা। প্রশ্ন হচ্ছে, এই নির্দিষ্টি সময়ের ভিডিও ক্লিপিংটি কারা ছাড়লেন? ইতিমধ্যে সিবিআই বেশ কয়েকজন জুনিয়র ডাক্তারের বয়ান নিয়েছে। এর মধ্যে এক জুনিয়র ডাক্তারের তথ্য পাওয়া গিয়েছে পিও-তে। সব কিছুরই প্রমাণ পাওয়া যাবে সিসিটিভি ফুটেজে। প্রত্যেকেরই তথ্য বিকৃতি করার সুযোগ ছিল। ফলে সিবিআইয়ের উচিত সকলকেই স্ক্যানারের মধ্যে এনে তদন্ত করা। সিবিআইয়ের স্পষ্ট জানা উচিত, প্রথম দেহটি পাওয়ার পর কোন ডাক্তাররা তাঁকে ঘিরে ছিলেন? তাঁদের মধ্যে আজ কতজন প্রতিবাদী আন্দোলনে শামিল? কারা কারা সুকৌশলে আসল তথ্য চেপে বিপ্লবী হচ্ছেন? জট খুলছে না রহস্য ঘনীভূত হচ্ছে!

Latest article