সেবাশ্রয় এক স্বপ্নের নাম

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই মানবসেবার আদর্শ ও অনুপ্রেরণাকে পাথেয় করেই চলতি বছরে বাংলার ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছিলেন সেবাশ্রয় প্রকল্প। লিখছেন অধ্যাপক শ্যামলকুমার দরিপা

Must read

আজ থেকে অনেক বছর বাদে যখন একবিংশ শতকের বাংলার রাজনৈতিক এবং সমাজনৈতিক ইতিহাস লেখা হবে, তখন মানুষ একটা কথা নির্দ্বিধায় স্বীকার করে নেবে। সেইটি হল, তৃণমূল কংগ্রেস এবং মানবদরদি, জনমুখী সরকার— এই কথাগুলো সমার্থক। ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর থেকে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণা এবং উদ্যোগে অজস্র জনমুখী পরিষেবায় উপকৃত হয়েছেন সমগ্র বাংলার মানুষ। কন্যাশ্রী, যুবশ্রী, রূপশ্রী, স্বামী বিবেকানন্দ যুব স্কলারশিপ, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার প্রভৃতি অনেকগুলি ওয়েলফেলার স্কিমের আওতায় সমগ্র বাংলার মানুষকে এনে তাদের মুখে অন্ন তুলে দিয়েছে মা-মাটি-মানুষের সরকার। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর এই সমস্ত জনমুখী যোজনার স্বীকৃতি শুধু দেশের নানা প্রান্তেই নয়, মিলেছে বিদেশেও। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেই মানবসেবার আদর্শ ও অনুপ্রেরণাকে পাথেয় করেই চলতি বছরে বাংলার ডায়মন্ড হারবারে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক এবং মাননীয় সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় শুরু করেছিলেন সেবাশ্রয় প্রকল্প। অভিষেকের দূরদর্শী নেতৃত্ব ও উদ্যোগে এই বছরের ২ জানুয়ারি থেকে ডায়মন্ড হারবারে যাত্রা শুরু হয়েছিল ‘সেবাশ্রয়’-এর। একটানা আড়াই মাস ধরে এক-একটি বিধানসভা কেন্দ্র ধরে বাংলার আপামর জনসাধারণকে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া হয়েছিল। চোখ, কান, হার্ট, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস থেকে শুরু করে ক্যানসার— বিভিন্ন ধরনের অসুস্থতায় বিনামূল্যে চিকিৎসা পরিষেবা পেয়েছিলেন মানুষ। এলাকাবাসীরা তো বটেই, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেও বহু মানুষ এই শিবিরগুলিতে এসে সুষ্ঠু পরিষেবা পেয়েছিলেন। ‘সেবাশ্রয় ১’-এর অভূতপূর্ব সাফল্য ও সাড়াতে উদ্বুদ্ধ হয়ে সেনাপতি অভিষেক ৭ নভেম্বর তাঁর জন্মদিনে ঘোষণা করেন ‘সেবাশ্রয় ২’- এর বিস্তারিত সূচি। ১ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ৩০ জানুয়ারি ২০২৬ অবধি চলবে ‘সেবাশ্রয় ২’।

আরও পড়ুন-সেকাল পেরিয়ে একালের বিয়ে

প্রথমবারের সেবাশ্রয়ে বাংলার অন্ততপক্ষে চোদ্দ লক্ষ মানুষ স্বাস্থ্য পরিষেবা পেয়ে উপকৃত হয়েছেন। কিন্তু একবারের সাফল্যকে মূলধন করে ফলাও করে প্রচার করা কোনওদিনই তৃণমূল কংগ্রেসের স্বভাব বা লক্ষ্য ছিল না। তাই দ্বিতীয়বারের জন্য বৃহত্তর পরিকল্পনা নিয়ে আরও বড় পরিসরে জনগণের কাছে সেবাশ্র‍য় প্রকল্পের পরিষেবা পৌঁছে দিতে তৎপর হয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। সেবাশ্রয়ের সাফল্য এবং ব্যাপ্তি কতদূর পর্যন্ত প্রসারিত তার একটা অনন্য নজির হল এই ক’দিন আগেই ডিসেম্বরে পাণ্ডবেশ্বরের বৈদ্যনাথপুরে ডিভিসি মোড় সংলগ্ন একটি স্থানে আয়োজিত ‘বিধায়ক সেবা’ কর্মসূচি।
বাংলার ইতিহাসে সবচেয়ে জনদরদি মুখ্যমন্ত্রী মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রকল্প ‘সেবাশ্রয়’-এর অনুকরণে ‘বিধায়ক সেবা’ কর্মসূচি পালিত হয়, এবং সেই কর্মসূচিতে দুর্গাপুরের বেসরকারি মিশন হাসপাতাল ও একটি চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসকেরা উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া প্রায় ১০০০ জন অসুস্থ মানুষ ‘বিধায়ক সেবা’ কেন্দ্রে চিকিৎসা পরিষেবা পেতে আসেন। শিবিরে আসা অনেকেই এক্স-রে, ইসিজি, রক্ত পরীক্ষা করান। বিভিন্ন রোগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা রোগীদের চিকিৎসা করেন।
সাম্প্রতিক অতীতে আমরা দেখেছি, ভোটবাক্সের রাজনীতি করা যে বিরোধী দল মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল সরকারের সমস্ত জনমুখী প্রকল্পের সমালোচনা করেছে, তারা এবং দেশের বিভিন্ন রাজ্যের অন্যান্য রাজনৈতিক দল— প্রত্যেকেই আদতে তৃণমূল কংগ্রেসের জনমুখী প্রকল্পগুলির অনুকরণে তাদের শাসিত রাজ্যে নানান পরিষেবা চালু করেছেন। অর্থাৎ, মমতা-অভিষেকের বাংলা আজও গোটা দেশকে পথ দেখাচ্ছে, দিশা দেখাচ্ছে। শুধু ভারতবর্ষে নয়, মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওয়েলফেয়ার স্কিমগুলির জনপ্রিয়তা আজ সারা পৃথিবীতে সমাদৃত এবং সুবিদিত, একথা আমাদের অজানা নয়। অক্সফোর্ড, এডিনবরা থেকে লন্ডন স্কুল অফ ইকোনমিক্স— পৃথিবীর সমস্ত প্রথিতযশা বিদ্যোৎসাহী প্রতিষ্ঠানই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনমুখী প্রকল্পসমূহের ভূয়সী প্রশংসা করেছে। একইভাবে এ-ও বলার অপেক্ষা রাখে না যে, বাংলার আগামী প্রজন্ম যার দক্ষ হাতে নিরাপদ, সে-ই সেনাপতি, বাংলার জননেতা মাননীয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সেবাশ্রয় প্রকল্পের অনুকরণেও গোটা দেশে এবং অতঃপর বিদেশেও নানা জনমুখী প্রকল্প অচিরেই চালু হবে।

আরও পড়ুন-বিয়ে যখন সম্বন্ধের

এই প্রকল্পের সূত্র ধরে কয়েকটা কথা না বললেই নয়। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রীর পদাঙ্ক অনুসরণ করে মাননীয় অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় যে অন্তহীন সদিচ্ছা এবং অসীম দক্ষতার সঙ্গে প্রকল্পটির পরিচালনা করেছেন এবং করবেন, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। জননেতা হিসেবে অভিষেক ইতিমধ্যেই পরীক্ষিত। কিন্তু তার চেয়ে ঢের বেশি যে কথাটি ভাববার, তা হল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ছাড়া ভারতবর্ষের আর কোনও জননেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো বাংলা তথা দেশের সাধারণ মানুষের মতো কল্যাণসাধনের জন্য তৎপর হননি। এত বিশাল স্তরে এত অগণিত মানুষের সমস্যার ধরন বোঝা এবং সেই সমস্যার সমাধানে আন্তরিকভাবে তৎপর হয়ে একটি পরিণামদর্শী প্রকল্প আরম্ভ করা এবং শেষ অবধি প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক দক্ষতার সঙ্গে এই বিরাট কর্মযজ্ঞকে একাধিকবার সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করার মধ্য দিয়ে অভিষেক যে বিরাট নজির স্থাপন করলেন, তা মানুষ মনে রাখবে। সেবাশ্রয়ের পরবর্তী এবং আগামী সমস্ত সংস্করণেকে ঘিরে তাই বাংলার মানুষের মনে থাকবে অনাবিল প্রসন্নতা, অব্যাহত থাকবে জনমুখী তৃণমূল সরকারের জয়যাত্রা!

Latest article