ধর্ম নিয়ে রাজনীতি। ভুয়ো প্রতিশ্রুতির রাজনীতি। মূল্যবৃদ্ধি-বেকারত্বকে ধামাচাপা দেওয়ার রাজনীতি। নরেন্দ্র মোদির এই ভোট-সমীকরণকে চ্যালেঞ্জ করছে মা মাটি মানুষ। বুদ্ধ বিবেকানন্দের ভারতবর্ষে হিটলার-গোয়েবলসের এই রাজনীতি এবার শেষ হওয়া দরকার।
মোদি স্বৈরতন্ত্রী। হিটলার-গোয়েবলসের কায়দায় দেশকে ধ্বংস করে দিচ্ছেন। ভারতবাসী এই একনায়কতন্ত্র আর মেনে নেবেন না। মোদি সরকারের পতন তাই নিশ্চিত।মোদি যাবে, কিন্তু দেশ থাকবে। মোদি যাবে, আর মানুষ বাঁচবে।
একদিকে বিজেপি (Shame On BJP) দাবি করছে দ্রুত হারে বাড়ছে দেশের আর্থিক বৃদ্ধির হার। কিন্তু তারপরও কেন সাধারণ মানুষের জীবনে আর্থিক সচ্ছ্বলতা নেই? উত্তর দিতে পারবেন মোদি, দ্য মিথ্যুক।
তাঁর সরকারের আর্থিক ক্ষেত্রে সাফল্য নিয়ে বড়াই করেন প্রধানমন্ত্রী। অথচ তাঁর আমলেই দেশের বেকারত্বের হার ৪৫ বছরের রেকর্ড ছুঁয়েছে। কেন? সে প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার হিম্মৎ আছে মোদি, দ্য মিথ্যুকের?
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উন্নয়ননীতিতে কন্যাশ্রী, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার বা বিধবা ভাতার মতো প্রকল্পের উপস্থিতি অতি প্রকট। কারণ, একদল সাংবাদিক রাজনীতিক বলে বেড়াচ্ছেন, ভোট ব্যাঙ্ক রক্ষার স্বার্থে এইসব পদক্ষেপ। অথচ, উন্নয়ন অর্থনীতির গবেষণা স্পষ্ট বলছে, সর্বজনীন উন্নয়নের ক্ষেত্রে শর্তহীন নগদ হস্তান্তরের গুরুত্ব বিপুল। বিশেষত, সে টাকা যদি পরিবারের মহিলাদের হাতে তুলে দেওয়া হয়, তার উন্নয়ন-ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পায়। পশ্চিমবঙ্গে ঠিক এই কাজটিই হয়েছে— উন্নয়ন অর্থনীতির সূত্র মেনে হয়েছে, ভোটব্যাঙ্ক তৈরি করার কৌশল হিসাবে নয়। ভারতে ১৯৫২ সালের নির্বাচনে যে সর্বজনীন ভোটাধিকার প্রদান করা হবে, তা ছিল তৎকালীন কংগ্রেস সরকারের নীতি। অন্য দল ক্ষমতায় এসে যদি সেই নীতির অভিমুখ পাল্টে দিত, যদি ভোটাধিকারকে ফের জুড়ে দেওয়া হত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা সম্পত্তির পরিমাপের সঙ্গে, তা কি গণতন্ত্রের পক্ষে স্বাস্থ্যকর হত? ঠিক সেই কারণেই উন্নয়ননীতিগুলির ধারাবাহিকতা প্রয়োজন— তা কোন দলের তৈরি, সে কথা বিবেচনা না করেই। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসে এনআরইজিএ-কে পূর্বতন সরকারের ব্যর্থতার স্মৃতিফলক বলেছিলেন। প্রকল্পটি যাতে রক্তাল্পতায় ভোগে, সেই ব্যবস্থাও করেছিলেন। কোভিড তাঁকে এমন যোজনার গুরুত্বের কথা বুঝিয়েছে— অন্তত, কোনও দায়িত্বজ্ঞানসম্পন্ন রাষ্ট্রনায়কের তা বুঝতে পারার কথা। কিন্তু মোদি তাঁদের দলে পড়েন না। সুতরাং , যা হওয়ার সেটাই হয়েছে। তার চেয়েও বড় কথা, মানুষকে ভুগতে হয়েছে এবং হচ্ছে, স্রেফ মিথ্যেবাদী মোদির জন্য। কেন এরকম করেছেন? কেন মানুষকে বিপর্যয়ের দিকে ঠেলেছেন? বলতে পারবেন মোদি, দ্য মিথ্যুক?
আরও পড়ুন- কোর্স শেষ হলেই ছাড়তে হবে হস্টেল, নির্দেশ যাদবপুরের
যা কিছু অসম্ভব, অলীক, উদ্ভট, অম্লানবদনে তেমন কথা ভাবতে, বলতে বা লিখতে পারার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে হাস্যরস তথা কৌতুকের অফুরন্ত সম্ভার। এই সারসত্যটিকে কাজে লাগিয়ে বহু কাল ধরে বহু অবিস্মরণীয় কাহিনি ও চরিত্রের সৃষ্টি হয়েছে। যথা, বিরিঞ্চিবাবা। পরশুরামের পাঠক এবং সত্যজিৎ রায়ের দর্শক জানেন, নিজেকে নিয়ে অনর্গল আজগুবি গল্প বলে যাওয়ার ক্ষমতাতেই নিহিত ছিল সেই মহাপুরুষের চরিত্রটির অন্যতম প্রধান আকর্ষণ, যা তাঁর সান্ধ্য আসরে সমাগত ‘ভক্ত’দের আপ্লুত করে তুলত। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি দিনকয়েক আগে নিজের সম্পর্কে— অম্লানবদনেই— যে গোপন খবরটি ফাঁস করেছেন, তা শুনলে বিরিঞ্চিবাবারও পিলে চমকে যেত। শ্রীযুক্ত মোদী জানিয়েছেন যে, মাতৃবিয়োগের পরবর্তী কালে নিজের কর্মকাণ্ড ভাল করে দেখেশুনে তিনি ইদানীং এই বিষয়ে ‘নিশ্চিত’ হয়েছেন যে, সাধারণ মনুষ্যজন্মের নিয়মকানুন দিয়ে তাঁর আবির্ভাবকে ব্যাখ্যা করা যাবে না, ‘পরমাত্মা’ই আপন অভিপ্রেত কাজ করে যাওয়ার জন্য তাঁকে ধরাধামে পাঠিয়েছেন। এবং, ২০৪৭ সাল অবধি সেই কাজ সম্পন্ন করার জন্য তিনি বিরাজমান থাকবেন। প্রসঙ্গত, তখন তাঁর জৈব শরীরের বয়স হবে ৯৬ বছর। গল্পের ভণ্ড সন্ন্যাসী লোক ঠকানোর জন্য আগডুম-বাগডুম বললে হাস্যরসের সৃষ্টি হতে পারে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নিজেকে পরমাত্মার প্রেরিত অ-লৌকিক প্রাণী বলে দাবি জানালে সুস্থবুদ্ধি এবং শুভবোধ সম্পন্ন নাগরিকের মনে যে অনুভূতি জাগ্রত হয় তা কৌতুকের নয়, যুগপৎ বিবমিষা এবং উদ্বেগের। ভোটের হাওয়া যথেষ্ট অনুকূল নয় বুঝেই, অর্থাৎ বেগতিক দেখেই, দলনায়ক বেপরোয়া ব্যাট চালাচ্ছেন। এখন, ভোটের শেষ পর্বে এসে তাঁর নতুন জন্মরহস্য শ্রবণ করে মোদি বেশ বুঝতে পারছেন, মর্তলোকের যাবতীয় অস্ত্রশস্ত্রে কাজ দিচ্ছে না। তাই এ-বার পরমাত্মাকেও প্রচারে নামাতে হয়েছে। নিজের ভাবমূর্তিকে ক্রমাগত উচ্চ থেকে উচ্চতর স্তরে তুলে নিয়ে যাওয়ার তাগিদ প্রধানমন্ত্রীর আচরণে বহু দিন যাবৎ প্রকট। এক অর্থে ২০১৪ সালের নির্বাচনী প্রচারের প্রকরণ হিসাবে তাঁর ‘হলোগ্রাম’টি ছিল সেই কৌশলের অগ্রদূত। তার পর এক দশক ধরে দল এবং সরকারের সমস্ত অপদার্থতা, সব দুঃশাসনকে এক দিকে অস্বীকার করে এবং অন্য দিকে তার দায়দায়িত্ব অন্যদের উপর চাপিয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিমাকে সব কিছুর ঊর্ধ্বে রাখার প্রকল্পটি অব্যাহত থেকেছে। এখন, দশ বছরের অভিজ্ঞতায় প্রতিমার খড় মাটি উত্তরোত্তর বেরিয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই তাগিদ যদি তাড়নায় পরিণত হয়ে থাকে, বিস্ময়ের কিছু নেই।
ঠিক এই কারণেই এই আপাত-উদ্ভট কথামালাকে হেসে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না, অর্থহীন প্রলাপ বলে এড়িয়ে গেলেও ভুল হবে। বিপজ্জনক ভুল। গণতন্ত্রের স্বার্থে, দেশের সুস্থ ভবিষ্যতের স্বার্থে এই হিটলার -গোয়েবলসদের ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বিদায় করা দরকার।