দেশের অর্থমন্ত্রী তোলাবাজির অভিযোগে অভিযুক্ত!
চমকে ওঠার কিছু নেই। এটাই মোদিযুগের পরম সত্য।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তিলকনগর থানার পুলিশ নির্মলা-সহ অনেকের বিরুদ্ধে এফ আই আর দায়ের করেছে।
নির্মলার পদত্যাগ দাবি করেছেন কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া। এ-নিয়ে আগামী তিন মাসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট জমা দিতে হবে বলেও দাবি করেছেন তিনি। সিদ্দারামাইয়ার বক্তব্য খুব স্পষ্ট, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উনি। তোলাবাজির অভিযোগে এফআইআর দায়ের হয়েছে। বিজেপি ওঁকে পদত্যাগ করতে বলবে তো? প্রধানমন্ত্রীরও তো পদত্যাগ করা উচিত! নির্মলা সীতারামন পদত্যাগ করুন, জামিনে মুক্ত কুমারস্বামীও পদত্যাগ করুন।”
ঘটনার সূত্রপাত এ-বছর এপ্রিল মাসে। ‘জনাধিকার সংঘর্ষ সগঠনে’র আদর্শ আইয়ার নির্মলা এবং আরও কয়েক জনের বিরুদ্ধে তোলাবাজির অভিযোগ আনেন। জনাধিকার সংঘর্ষ পরিষদ একটি অসরকারি সংস্থা (এনজিও)। আদর্শের অভিযোগ, নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা আদায় করতে রীতিমতো জুলুম চালানো হয়েছে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই বেঙ্গালুরুর বিশেষ আদালত নির্মলার বিরুদ্ধে এফআইআর দায়েরের নির্দেশ দিয়েছে। বলা হয়েছে নির্বাচনী বন্ড সংক্রান্ত হেরাফিরি খতিয়ে দেখতে। নির্মলা এবং বাকিদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়েছে। অভিযোগে বলা হয়, ২০১৯ এবং ২০২২ সালে এক ব্যবসায়ীর সংস্থা থেকে মোটা আদায় দায়ের করা হয়। এক ওষুধ প্রস্তুত সংস্থাকেও বাধ্য করা হয় মোটা টাকা চাঁদা দিতে। আদর্শ সংবাদমাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রভাবশালী অনেকে এই জুলুমবাজির সঙ্গে যুক্ত। এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট এবং আয়কর দফতরের অপব্যবহার করেছেন নির্মলা। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে দলের সিন্দুক ভরেছেন তিনি। তোলাবাজির গুরুতর অভিযোগ রয়েছে এবং এতে কঠোর সাজা হওয়া উচিত বলে দাবি উঠেছে। লক্ষ্য করার বিষয়, সুপ্রিম কোর্ট যে নির্বাচনী বন্ডকে অসাংবিধানিক ঘোষণা করেছে, সেই নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে জোর করে চাঁদা আদায় করেছেন নির্মলা।
লক্ষণীয়, অভিযোগে নির্মলা-সহ বিজেপির রাজ্য ও কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের নাম রয়েছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে এবং পরবর্তী ধাপে যে এফআইআর নথিভুক্ত হয়েছে, সে-সব প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রক কিন্তু কোনও মন্তব্য করতে চায়নি। এবার সেই সূত্রেই আরও বেশি করে মনে হচ্ছে ডাল মে কুছ কালা হ্যায়।
পুরো ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলা যাক।
যে-কোনও গণতন্ত্রে নির্বাচনে সকলের সমান সুবিধা পাওয়া উচিত। কিন্তু নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে বিপুল টাকা তুলে সংবিধানের বুনিয়াদি কাঠামোয় হামলা চালিয়েছে বিজেপি। অস্বীকার করার উপায় নেই, এ হল বিজেপির তোলাবাজি যোজনা। স্বচ্ছভাবে তদন্ত হলে জল অনেক দূরই গড়াবে। যাতে নাম জড়াবে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতাদেরও।
বলতে দ্বিধা নেই, গণতন্ত্রকে দুর্বল করার লক্ষ্যে এ হল বিজেপির নোংরা খেলা। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর মতো এ ক্ষেত্রে সকলেই সমান ভাবে দোষী। ওই এফআইআর বিজেপির চরিত্রকে স্পষ্ট করে দিয়েছে। বিশেষ করে দলের এক ও দু’নম্বরকে। অর্থাৎ নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহকে। ওঁদের নির্দেশেই নির্মলা সীতারামন নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ।
একটা কথা জানতে খুব ইচ্ছে করে। আট হাজার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। আর তারপরও অর্থমন্ত্রী পদে বসে রয়েছেন? কী করে? রহস্যটা কী! এ-ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী মন কি বাত শোনাবেন কি?
বিষয়টা অন্য দিক দিয়েও দেখা দরকার। নির্মলা সীতারামনের নামে ফৌজদারি মামলায় এফআইআর হয়েছে। আইনের প্রক্রিয়ায় পরবর্তী ধাপ সমন। তারপর জেরা। গ্রেফতার। কিন্তু মোদি সরকারের মন্ত্রী বলে এই প্রক্রিয়ায় তিনি পার পেয়ে যান কি না, সেটাই দেখার বিষয়।
আসলে যা যা ঘটেছে বলে শোনা যাচ্ছে, সেগুলো অতি-মারাত্মক। নির্বাচনী বন্ড আদায়ে বিজেপি সরকার ইডিকে দিয়ে বিভিন্ন কোম্পানিতে আগে তল্লাশি চালিয়েছে। তারপর যেই সেইসব কোম্পানি টাকা দিয়েছে— ব্যাস, তল্লাশি বন্ধ! এছাড়া আর একটা পথ নিয়েছে ওরা। নির্বাচনী বন্ডের মাধ্যমে চাঁদা দিয়ে সরকারি কাজের বরাত, কাজের বরাত পেতে ঘুষ আর ইডিকে দিয়ে ভয় দেখানো— এই তিনভাবে নরেন্দ্র মোদির দল টাকা তুলেছে। বিষয়টা গণতন্ত্রের পক্ষে কতটা মারাত্মক, সেটা নিশ্চয় বলে বোঝানোর দরকার নেই।
টাকা তোলার ব্যাপারে এত সক্রিয় মোদি কিন্তু টাকা দেওয়ার ব্যাপারে একেবারে নীরব। রাজ্যের জন্য প্রকল্পে টাকা দেয় না কেন্দ্র। আর বন্যাবিধ্বস্ত এই দুর্বিষহ অবস্থায় বাংলার মানুষের খোঁজও নেয় না ওরা। এটাই আসল চিত্র।
ভেবে দেখুন, কাল মহালয়া। পিতৃপক্ষের অবসান, আর তারপর সূচনা দেবীপক্ষের। উৎসবের এই সময়ে রাজ্যের উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ জেলার মানুষ ঘরছাড়া। দক্ষিণববঙ্গের কোথাও ঘরের ভিতরে বুক সমান জল। আবার উত্তরবঙ্গের কোথাও পাহাড়ে নেমেছে ধস। দুর্যোগপূর্ণ এই পরিস্থিতিতে রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের উচিত ছিল বাংলার মানুষের পাশে দাঁড়ানো। কিন্তু তোলাবাজ সরকার কী করল? ফরাক্কা ব্যারেজ কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ। গত ২০ বছর ধরে কোনওরকম ড্রেজিং করা হয়নি। আগে ১২০ কিলোমিটারের দায়িত্ব নিত। এখন সেটাই মাত্র ২০ কিলোমিটারে এসে গিয়েছে। ডিভিসির জলে যেমন দক্ষিণবঙ্গ ভেসেছে, উত্তরবঙ্গে তেমন নেপাল থেকে বিহার হয়ে কোশী নদীর জল ঢুকছে। ইতিমধ্যে ৫ লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ওই জল বিহার হয়ে বাংলায় ঢুকছে। নেপাল যে জল ছেড়েছে তাতে কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি জেলার মানুষ আক্রান্ত।
সীমাহীন বঞ্চনার শিকার বাংলা। তবু দুর্যোগের সঙ্গে অসম এই লড়াইয়ে বাংলা জিতবে। কারণ, জননেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনিই প্রশাসনিক আধিকারিকদের কাছ থেকে সরেজমিনে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আর্থিক সাহায্য নিয়ে গজলডোবায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। রাজ্য তো নিজের সাধ্যমতো চেষ্টা চালাচ্ছে, কিন্তু কেন্দ্রের সরকার কোথায়?
লজ্জাও করে না এই ভোট-পাখিদের!
লজ্জাও করে না এদের!
নির্লজ্জ ভোট পাখিরা দেশের আকাশের দখল চাইছে একদিকে অর্থমন্ত্রক কেন্দ্রীয় এজেন্সিকে ব্যবহার করে তোলাবাজি চালাচ্ছে। আর একদিকে বানভাসি বাংলার স্বার্থ নিয়ে চরম উদাসীন মোদি সরকার। রাজনীতি ভুলে সাহায্যের হাত বাড়ানোর কোনও ইচ্ছেই নেই এঁদের! লিখছেন আকসা আসিফ