বেআব্রু বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতি

ভিত্তিহীন অভিযোগ, স্রেফ অভিযোগের ভিত্তিতে জেলে পাঠানো, অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও অভিযুক্তকে দোষীর তকমা দিয়ে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থকরণ, এই প্রবণতা যে আদতে ধোপে টিকবে না, একের পর এক অভিযুক্তের জামিন প্রাপ্তিতে স্পষ্ট সেই ইঙ্গিত। লিখছেন পার্থসারথি গুহ

Must read

বিজেপির বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার রাজনীতি করার যে অভিযোগ সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস বহুদিন ধরে করে আসছে একের পর এক জামিনের মধ্যে দিয়ে কার্যত তার সত্যতা প্রমাণিত। বোঝাই যাচ্ছে কতটা একতরফা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের নেতাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার।
এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণটি হল দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্টে অনুব্রত মণ্ডলের জামিন। সাধারণ বীরভূমবাসীর কাছে যিনি চব্বিশ ঘণ্টার সুখ-দুঃখের সঙ্গী কেষ্টদা, সেই অনুব্রত মণ্ডলের জামিনের খবরে বীরভূমে যেন প্রাক শারদীয় উৎসবের মেজাজ। বন্যার আবহেও আবেগের এই বহিঃপ্রকাশ নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।

আরও পড়ুন-দেড়শো বছর পূর্তিতে নয়া প্রবেশদ্বার চিড়িয়াখানায়

তথাকথিত দুর্নীতিতে ফাঁসিয়ে যাঁদের জেলে পুরে মিডিয়ার একাংশের সহায়তায় তৃণমূল কংগ্রেসের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করার চেষ্টা আজ স্পষ্টতর। আরও বেআব্রু। বেরিয়ে এসেছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের প্রতিহিংসামূলক রাজনীতির কুৎসিত চেহারাটি। ইডি, সিবিআই, ইনকাম ট্যাক্স সহ বিভিন্ন এজেন্সি ব্যবহার করে একের পর এক বিরোধী রাজনৈতিক দলের ওপর দমনপীড়ন চালানো যে দেশবাসী ভাল চোখে দেখছেন না তা বুঝিয়ে দিয়েছে এবারের লোকসভা নির্বাচনের ফল। বিজেপি সরকারের পুনর্মূষিকভব ঘটেছে এনডিএ-তে রূপান্তরের মাধ্যমে।
নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু নাইডুর ওপর ভর করা কেন্দ্রের এই নরেন্দ্র মোদি সরকার অত্যন্ত নড়বড়ে।
বিজেপির দ্রুত জনপ্রিয়তা হারানোর প্রধান কারণই হল গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচিত বিরোধী মতাদর্শের সরকারগুলির প্রতি অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী বৈরিতা প্রদর্শন। বিভিন্ন ভোটে বিরোধীদের কাছে পর্যুদস্ত হয়েও বিজেপি সেই পথ থেকে সরে আসেনি। দ্বিগুণ আস্ফালনে ঝাঁপিয়ে পড়েছে এজেন্সিগুলিকে হাতিয়ার করে। কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলিকে বকলমে নিজেদের শাখা সংগঠনে পরিণত করেছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তিনবারের নির্বাচিত অত্যন্ত জনপ্রিয় তৃণমূল সরকারের দিকেও প্রতিহিংসার যাবতীয় দাঁত-নখ মেলে ধরেছে বিজেপি।

আরও পড়ুন-ডাক্তারদের আন্দোলন নাটক, কটাক্ষ দিলীপের

বিগত ২০২১ এর বিধানসভা নির্বাচনে এ-রাজ্যে সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও ব্যর্থ হয় তারা। প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থেকে তাবড় বিজেপি নেতারা দুশো পারের হুঙ্কার তুললেও মাত্র ৭৭-এ গুটিয়ে যায় যাবতীয় লম্ফঝম্প। তৃণমূল কংগ্রেস তৃতীয়বারের জন্য ক্ষমতাসীন হয় নিরঙ্কুশ
সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে।
তারপর থেকেই রাজ্যের একের পর এক তৃণমূল নেতা, মন্ত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে বিজেপি। যথারীতি এজেন্সি নামক অস্ত্র কাজে লাগিয়ে।
প্রায় দু’বছর পর অবশেষে জামিনে মুক্ত অনুব্রত মণ্ডল। মাস দুয়েক আগে গত জুলাই মাসে সিবিআইয়ের গরুপাচারের তদন্তে জামিন পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু একই মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ইডির তদন্ত চলছিল। ইডির সেই তদন্তের প্রেক্ষিতে শুক্রবার দিল্লির রাউস অ্যাভিনিউ কোর্ট অনুব্রত মণ্ডলের জামিন মঞ্জুর করে। দশদিন আগে অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা মণ্ডলও জামিনে মুক্ত হয়েছেন। অনুব্রতর চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট মণীশ কোঠারিও জামিন পেয়েছেন। অনুব্রত মণ্ডলের পক্ষে তাঁর আইনজীবী বারংবার বিচারকদের কাছে একটা কথাই জোর দিয়ে বলেছেন যে, তাঁর মক্কেলের কাছে গরুপাচারের টাকা এসেছে তা কোনওভাবেই দেখাতে পারেনি তদন্তকারী সংস্থাগুলি। শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে তাঁকে আটকে রাখা হয়েছে। অবশেষে জামিনপ্রাপ্তির মাধ্যমে কার্যত অনুব্রত-সহ অনেককেই ভিত্তিহীন অভিযোগে ফাঁসানোর তত্ত্ব স্পষ্ট হচ্ছে। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। সেই প্রতিহিংসার রাজনীতি এবং একপেশে মনোভাব।

আরও পড়ুন-বদলাপুর, এনকাউন্টার কি আসলে সাজানো গল্প?

এজেন্সি রাজনীতির ধারক- বাহক বিজেপি যতবার রাজ্য তথা তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসার কারবার চালাচ্ছে ততবারই কিন্তু আগের চেয়েও শক্তিশালী হচ্ছে ঘাসফুল শিবির। বিভিন্ন নির্বাচনের ফলাফল তার জলজ্যান্ত উদাহরণ। বিধানসভা থেকে লোকসভা, পঞ্চায়েত থেকে পুরসভা সবেতেই তৃণমূলের প্রতি রাজ্যবাসীর আস্থা বেড়েছে। বিজেপির বৈষম্যমূলক রাজনীতির পাল্টা হিসেবে মানুষ বেছে নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারের একের পর এক জনমুখী প্রকল্প ও উন্নয়নের কর্মযজ্ঞকে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যেও একথা উঠে এসেছে বারংবার। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, তোমরা আমাদের যত আঘাত করবে ততটাই শক্তিশালী হব আমরা। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপির প্রতিহিংসার রাজনীতির মুখে দুর্দান্ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। একশো দিনের কাজ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পে রাজ্য সরকারের প্রতি কেন্দ্রীয় বঞ্চনা ও বিমাতৃসুলভ আচরণের বিরুদ্ধে আন্দোলনকে তিনি নিয়ে গিয়েছেন দিল্লির বুকে। কেঁপে উঠেছে দিল্লির জমিদাররা। স্বাভাবিকভাবে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেও টার্গেট করেছে বিজেপি সরকারের এজেন্সিগুলো। প্রত্যেকবার তাদের মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন-বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও ত্রাণ বণ্টন নিয়ে বোলপুরে প্রশাসনিক পর্যালোচনা বৈঠক

এতকিছুর পরেও কেন্দ্রের বিজেপি সরকার যে তাদের প্রতিহিংসার পথ ছাড়বে তা হয়তো নয়। কিন্তু বারবার যদি আদালতের নির্দেশে অনুব্রত মণ্ডলের মতো প্রত্যেকে জামিন পেতে থাকেন তাহলে বিজেপি সরকার আরও দুর্বল হয়ে পড়বে। যার নিশ্চিত প্রভাব পড়বে আসন্ন বিধানসভা ভোটেও। ক্ষমতাসীন রাজ্যগুলি থেকে আসবে প্রবল প্রত্যাঘাত। সেটাই এখন সময়ের অপেক্ষা।

Latest article