প্রতিবেদন : প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট এবং রেল পুরোটাই দায় চাপাচ্ছে মালগাড়ির মৃত চালকের উপর। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তদন্ত-প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই কীভাবে দুই মৃত ব্যক্তির উপর দায় চাপায় রেল? কমিশন অফ রেলওয়ে সেফটি’র আধিকারিকরা ইতিমধ্যেই এসে পৌঁছেছেন। তাঁরা প্রাথমিকভাবে কাজও শুরু করেছেন। যাঁরা ঘটনার সঙ্গে যুক্ত বা সেই সময়ে কর্মরত ছিলেন তাঁদের সঙ্গে এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলবেন তাঁরা। তাঁদের বয়ান রেকর্ড করা হবে। ১৯ জুন থেকে এই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হবে। সাধারণ মানুষের কাছে দুর্ঘটনা সম্পর্কিত কোনও তথ্য থাকলে তাঁরা তা তদন্ত কমিশনের কাছে জানাতে পারবেন বলে জানিয়েছে উত্তর-পূর্ব রেল। কন্ট্রোল রুম ও রেলের ২০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে তদন্তকারী দল। এই দুর্ঘটনায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১১। একটি ৬ বছরের শিশুর মৃত্যু হয়েছে এদিন। সোমবার ভোর থেকেই অকেজো ছিল রাঙাপানি এবং চটের হাটের মাঝের স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল পরিষেবা। রেলের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করেছে জিআরপি। রেলের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় এবং ৩পিপিডি অ্যাক্ট ও ভারতীয় রেলের দুটি ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। জিআরপি-র তরফেও আলাদাভাবে ট্রেন দুর্ঘটনার তদন্ত চালানো হচ্ছে।
এদিকে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এই দুর্ঘটনার আগে আরও একটি মালগাড়ি ওই রাঙাপানি থেকে বেরিয়ে চটের হাট স্টেশনের উপর দিয়ে গিয়েছিল। তখনও সিগন্যাল বিভ্রাট চলছিল। এরপর যখন ঘাতক মালগাড়িটি আসে তার গতি ছিল নির্দিষ্ট গতির থেকে অনেকটাই বেশি। আর সেই থেকেই এই বীভৎস দুর্ঘটনা ঘটে। তদন্তে দেখা গিয়েছে, ৮.১০ মিনিটে রাঙাপানি স্টেশন থেকে কাগজ সিগন্যাল নিয়ে ৮.৩৭ মিনিটের মধ্যে সেটি চটের হাট স্টেশনে পৌঁছে যায়। মাত্র ২৭ মিনিটে যে পথ ওই মালগাড়ি অতিক্রম করেছে সেই পথ অতিক্রম করতে কমপক্ষে সময় লাগার কথা দুই ঘণ্টা। ওই মালগাড়িটির চালক নিয়ম ভেঙে দ্রুত গতিতে একের পর একটি সিগন্যাল বেরিয়ে গিয়েছিলেন। সেই সময় যদি কোনও এক্সপ্রেস ট্রেন থাকত ওই লাইনে, তাহলে কাঞ্চনজঙ্ঘার থেকেও বড় ঘটনা ঘটে যেতে পারত, মনে করছেন তদন্তকারীরা। সেক্ষেত্রে মৃত ও আহতের সংখ্যা বাড়ত আরও। কাগজ সিগন্যাল অনুযায়ী মালগাড়ির যা গতি থাকা উচিত ছিল তার থেকে অনেক বেশি ছিল গতি। রাঙাপানি স্টেশন ছেড়েই মাত্র সাড়ে তিন মিনিটে মালগাড়িটি প্রতি ঘণ্টায় ৫০ কিমি বেগে চলতে থাকে। এই মাঝখানের পথে ১৫টি সিগন্যাল ছিল। যেগুলোর একটাকেও গ্রাহ্য করা হয়নি বলে অভিযোগ।
মঙ্গলবারই কফিনবন্দি হয়ে ফিরল রেল দুর্ঘটনায় মৃত রেলকর্মী শংকরমোহন দাসের (Shankar Mohan Das) দেহ। ফুলবাগানের শিবকৃষ্ণ দাঁ লেনে নিথর দেহ এল আরএমএস কর্মীর। মঙ্গলবারই তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। তাঁর পরিবার-পরিজনকে সমবেদনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম এবং বিধানসভা উপনির্বাচনে মানিকতলা কেন্দ্রের তৃণমূল প্রার্থী সুপ্তি পাণ্ডে।
আরও পড়ুন- শিয়ালদহে দুর্ঘটনাগ্রস্ত কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস, রেলের সুরক্ষা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ ফিরহাদের