SIR সত্য আর নেই দরকার SIR! SIR!!

চলতি পদ্ধতিতে এসআইআর-এ বিপদের মেঘ, চাই তীব্র আন্দোলন। লিখছেন জাহির আব্বাস

Must read

প্রথমেই বলি, আমরা এসআইআর-এর বিরোধী নয়, পদ্ধতির বিরোধী।
চলতি পদ্ধতিতে করা SIR (এসআইআর) নিয়ে জোরদার আন্দোলন গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি। আমরা জানি, ইতিপূর্বে ২০০২ সালেও ভোটার তালিকা সংশোধনের কাজ হয়েছিল! কই তখন অসুবিধা হয়নি তো! তাহলে আজ কেন আপনাকে-আমাকে এভাবে পরীক্ষায় ফেলছে দেশের সরকার, যাদের আমি-আপনিই (জনগণ) তো নির্বাচিত করেছি। যে ১১ দফা ডকুমেন্টস চাওয়া হচ্ছে, দেখা যাবে তার একটিও অনেকের নেই। তাছাড়াও অনেকের যদিও-বা রয়েছে বানান ও পদবি গত নানা ত্রুটি। অথচ, তারা আদি ভারতীয়! কী হবে তাদের? প্রমাণ করতে করতে সময়, শ্রম ও অর্থ ব্যয় হবে প্রচুর। কীভাবে সম্ভব! টেনশনে ঘুম উড়ে যাবে।
জেলায় জেলায় ৭০ হাজার নাগরিকত্ব প্রদান থুড়ি সিএএ ক্যাম্প বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে গেরুয়া সংগঠন। উদ্দেশ্য একটাই, প্রথমে নাম বাদ দেওয়ার ভয় দেখাও এবং তারপর নাগরিকত্বের টোপ দিয়ে উদ্বেগ কাটাও। বাজারি বাংলায় যাকে বলে ‘রাবড়ি প্রসেস’। এরপর এসআইআরকে শুধু একটি নিছকই প্রশাসনিক প্রক্রিয়া বলবেন, না চক্রান্ত! কত নাম বাদ যাবে তা বিজেপি নেতারা আগাম হাঁকছেন কোন আক্কেলে! বিজেপি আর নির্বাচন কমিশন মোদি জমানায় সমার্থক না একে অন্যের পরিপূরক?

বন্ধু, শীতঘুম দেবেন তো, জেগে উঠে অন্ধকার দেখবেন। জেনে রাখুন, এ বিপদ শুধু মুসলিমের নয়, হিন্দু-সহ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার। বিশেষ করে পিছিয়ে থাকা অসচেতন, অল্পশিক্ষিত ও গরিব মানুষজনের! অতএব, কারও ছেলে ভোলানো আশ্বাস বাণীতে ভুলে যাবেন না। প্রমাণ তো ওদের করতে হবে না, আপনাকে আমাকেই করতে হবে। কিন্তু সেসব নথি কোথায়!

আর, ভোটার কার্ড বাতিল হওয়া মানে আপনার সব কিছুই বাতিল হতে পারে! এমনকী, আপনাকে আমাকে বে-নাগরিক দাগিয়ে দেবে তখন! পারবেন তখন প্রমাণ করতে নাগরিকত্ব? দেখছেন তো, জোরপূর্বক বাংলাদেশে পুশব্যাক করা অন্তঃসত্ত্বা সোনালি- সহ তাদের পরিবারের অবস্থা! এতশত কাগজ আছে তো আপনার বা আপনার সাথে-পাশে থাকা সব মানুষজনের!

আপনার যদিও-বা থাকে, আপনি হয়ত শিক্ষিত, সচেতন ও অর্থশালী কিংবা আপনি ও আপনার পরিবারের পূর্ব-পুরুষ কেউ চাকরি করতেন। বিদেশ গেছেন। পাসপোর্ট আছে। নথি আছে। তাই আপনি হয়ত বেঁচে যাচ্ছেন। কিন্তু ওদের কথা ভাববেন না, সেই খেটে-খাওয়া, ভ্যান চালক, কলকারখানায় কাজ করা দিন-মজুর, খেতে-খামারে কাজ করা কৃষক, সেই দরিদ্র-জর্জরিত পাংশু মুখের মানুষটার কথা, যে বা যারা আপনাকে নিত্যদিন পরিষেবা দেয়!

ইতিমধ্যেই বিহারে ৬৮ লাখ বাদ দিয়ে ২১ লাখ নতুন নাম সংযুক্ত হয়েছে তালিকায়। ৭ কোটি ৮৯ লাখ থেকে কমে ৭ কোটি ৪২ লক্ষ দাঁড়িয়েছে মোট ভোটার সংখ্যা।
আর বাংলায়? নিত্য বিস্তর লম্ফঝম্প করা গেরুয়া বাঁদর সেনা মোটেই আত্মবিশ্বাসী নন। একুশের ভোটের মতো নতুন করে বড় একটা কেউ আর ‘দলবদলু’ হতে আগ্রহী নন। উল্টে উত্তরবঙ্গেও পদ্মশিবির ভাঙছে, এতকিছুর পরও রাজ্য জুড়ে তৃণমূলে ঘর ওয়াপসির পালে হাওয়া। পাঁচ বছর আগের মতো এজেন্সি দিয়ে ভয় দেখানো এবং পদ্ম শিবিরে লোক টানার দিন শেষ। একই অস্ত্র বারবার প্রয়োগ করলে কাঙ্ক্ষিত ফল মেলে না। ঘটা করে সদস্য সংগ্রহ অভিযানও ডাহা ফ্লপ। অতঃপর ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়া এবং নাগরিকত্বের খুড়োর কল ঝুলিয়ে ভোট বৈতরণী পার করার কৌশলকে সামনে রেখেই এগোতে চাইছে বাইরে থেকে আসা সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত পদাধিকারীরা।এই বহিরাগত থিঙ্কট্যাঙ্ক এবং আগমার্কা দলবদলু এবং মেরুকরণ বাদ দিলে এ রাজ্যে বিজেপি আজও আঁতুড়ঘরে। এত কাঠখড় পুড়িয়ে যিনি সভাপতির আসনে বসেছেন, তাঁর সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কতটুকু! বসে যাওয়াদের ফেরানোর চেয়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতাই বরং তাঁর নিরাপদ আশ্রয়।
নির্বাচনের ৬ মাস আগে সংগঠন কতটা তৈরি, লক্ষাধিক বুথের সর্বত্র প্রয়োজনীয় লোকলশকর আছে কি না সেদিকে খুব নজর আছে বলে মনে হচ্ছে না। রাজ্যের সমস্ত ব্লকে দলবদলুদের বাদ দিয়ে নিজ ক্ষমতায় বঙ্গ বিজেপির পক্ষে সকাল সন্ধে মিটিং-মিছিল করার সাংগঠনিক শক্তি কতটা তৈরি, ভোটের সকালে রাস্তায় সর্বত্র দলের উল্লেখযোগ্য উপস্থিতি চোখে পড়বে কি না, সেদিকে নজর দেওয়ার বদলে একটাই লক্ষ্য ভোটার তালিকাটা কেটে গোলপোস্টটাকেই পকেটে পুরে নাও। ব্যাস অতঃপর ইচ্ছেমতো গোল দাও। কেন্দ্রে ক্ষমতায় থাকার সুবাদে মাঠের ভিতরে ও বাইরে বাঁশি বাজানোর লোক তো মজুতই আছে। এখন থেকেই ৩৫৫ কিংবা ৩৫৬ জারির হুমকিও জারি রয়েছে সমানে। বিহারে দু’দফায় ২৪৩ আসনে নির্বাচন হচ্ছে, বাংলায় দশ কিংবা তারও বেশি দফায় ভোট এবারও নিশ্চিত। যদি অলিম্পিক্স প্রতিযোগিতার আগে কোনও কুস্তিগির নিজেকে তৈরি রাখার বদলে বিপক্ষের স্বাস্থ্যহানির ফন্দি আঁটেন এবং প্রতিযোগিতা শুরু হতেই প্রতিদ্বন্দ্বীকে নানা মতলবে ডিসকোয়ালিফাই করে জয়ের খোয়াব দেখেন তাহলে বলতেই হবে পুরো প্রক্রিয়াটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, বাংলার ভোটের আগে এসআইআর স্রেফ একটি প্রক্রিয়া না চক্রান্ত। কারণ রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল জেলায় জেলায় প্রায় অস্তিত্বহীন সংগঠনকে ঢেলে সাজার বদলে ক্রমাগত তাঁদের কাজকর্মকে ভোটার তালিকার সংশোধনে সীমাবদ্ধ করে তুলছে। এর একটাই কারণ সংগঠন ঘুমিয়ে। কিছুতেই তাকে জাগানো যাচ্ছে না। কেউ ভোটার তালিকা সংশোধনের বিরোধী নন। তালিকায় মৃত ভোটারের নাম থাকুক তাও কেউ চায় না। একইসঙ্গে দু’জায়গায় যাঁদের নাম আছে তাও বর্জনীয়। কিন্তু একুশে কেন্দ্রীয় এজেন্সি নামিয়ে এবং দলভাঙার পরও যেমন তৃণমূলকে পর্যুদস্ত করা দূরে থাক গায়ে একটা আঁচড় কাটাও হয়নি, এবারও যদি পরিণাম তাই হয়, তখন কী বলবে গেরুয়া পার্টি! আর কিছু বলার মুখ থাকবে?

আরও পড়ুন-এবার সব থেকে বড় জগদ্ধাত্রী চন্দননগরে

অতএব, সময় থাকতে আমাদের আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। সমূহ বিপদের মুখে পড়তে চলেছি, কিন্তু। বিহারে ডবল ইঞ্জিন সরকার ছিল। তাই কাজ হয়নি। এখানে আমাদের রাজ্য সরকারও এই পদ্ধতিতে এসআইআর-এর ঘোর বিরোধী।

অতএব, আপনার প্রতিবাদ ও কণ্ঠ দিয়ে সরকারকে জানান দিন। সংশ্লিষ্ট দফতরকে চাপ দিন।
জোরালোভাবে দাবি করুন, আধার, রেশন বা ব্যাংকের পাস-বুক-সহ অন্যন্য অথেনটিক নথিকেও ১১টি ডকুমেন্টস-এর সাথে যোগ করতে হবে। নইলে, আমাদের দ্বারা নির্বাচিত অবৈধ(!) সরকাকেও গদি ছাড়তে হবে। আন্দোলন চলুক গণতান্ত্রিক উপায়ে। পাশাপাশি বিভিন্ন দপ্তরে চিঠি, গণমেলও দেওয়া হোক। দিকে দিকে এ নিয়ে মামলাও দায়ের হোক। সব ধরণের গণ সংগঠন গুলিও এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিন।
যাঁরা হালকা ছলে বিষয়টাকে নিচ্ছেন তাঁরা কি দেখছেন না, বিহার ও আসামের অবস্থা!

Latest article