প্রতিবেদন : এযাত্রায় বড়সড় দুর্যোগের হাত থেকে পরিত্রাণ পেল পশ্চিমবঙ্গ। কালীপুজোর রাতে পড়শি বাংলাদেশের ওপর আছড়ে পড়ল সিত্রাং (Sitrang- Bangladesh)। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাসে দেওয়া সময়ের আগেই ঝড়ের ল্যান্ডফল শুরু হয়। রাত ন’টা নাগাদ বাংলাদেশের ভোলা ও নড়াইল উপজেলার (Sitrang- Bangladesh) মধ্যে দিয়ে স্থলভূমিতে প্রবেশ করে সিত্রাং। এসময় ঝড়ের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটারের কিছু বেশি। ঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি এখনও স্পষ্ট নয়। তবে প্রাথমিকভাবে পড়শি দেশে ঝড়ের দাপটে গাছ চাপা পড়ে তিনজনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। এ রাজ্য ঝড়ের সরাসরি আঘাত এড়াতে পেরেছে এ যাত্রায়।কিন্তু বিপদ পুরোপুরি কাটছে না। রাতভর আশঙ্কার প্রহর গুনছেন এ রাজ্যের উপকূল এলাকার মানুষ। রাত জেগে পুরোদস্তুর প্রস্তুত থাকছে প্রশাসন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের লেজের ঝাপটায় ঝড়, জলোছ্বাস ও বৃষ্টি চলছেই। ফলে বিপদের আশঙ্কা রয়েছে সুন্দরবন, দিঘা সহ রাজ্যের উপকূল এলাকায়। তাই নিচু জায়গা থেকেও বহু মানুষকে সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে নিরাপদ জায়গায়। বাড়ির কালীপুজোতে ব্যস্ত মুখ্যমন্ত্রীও আগাগোড়া পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে চলেছেন। এদিন বিপদ কিছুটা কাটার আভাস মেলার পরেও মানুষকে সতর্ক করে দিতে ভোলেননি তিনি।
আরও পড়ুন: পাঁশকুড়ায় বিজেপিতে বিদ্রোহ, দল ছাড়লেন মণ্ডল সভাপতি
মু্খ্যমন্ত্রীর আবেদন : কালীপুজো, দীপাবলিতে আনন্দ করুন। তবে ঝড়বৃষ্টি বেশি হলে ঘরে থাকাই নিরাপদ হবে। প্রশাসন সবরকমভাবে প্রস্তুত। আপনারা সাবধানে উৎসব করুন। সাইক্লোন বাংলাদেশের দিকে চলে গেছে৷ বাংলায় হালকা বৃষ্টি হবে। সবাইকে অনুরোধ, এখনই বাড়ি ফিরবেন না, আপনারা যে রিলিফ সেন্টারে আছেন আজ রাতটুকু ওখানেই থাকুন। সরকার যা ব্যবস্থা নিয়েছে সেটা মেনে চলুন। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা জারি থাকবে। আবহাওয়া কাল থেকে ভাল হবে।
কী বলছে আবহাওয়া দফতর : মৌসম ভবন জানিয়েছে, সোমবারেই ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ৯০-১০০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা থেকে ১১০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা হবে। এর ফলে রাজ্যের উপকূলীয় জেলাগুলিতে বৃষ্টির পরিমাণ ক্রমশ বাড়বে। ঘূর্ণিঝড়ের জেরে ওড়িশার উত্তর উপকূল, পশ্চিমবঙ্গের সুন্দরবন এবং বাংলাদেশের দক্ষিণ উপকূলে প্রভাব বেশি পড়তে পারে।
এ রাজ্যে কী প্রভাব : আলিপুর আবহাওয়া দফতরের তরফে জানানো হয়েছে, ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং উত্তর-পশ্চিমদিক থেকে উত্তর-পূর্বদিকে গতিপথ পরিবর্তন করে স্থলভাগে পৌঁছনোর পর ক্রমশ শক্তি হারাবে। কিন্তু এর ফলে বুধবার সকাল পর্যন্ত দক্ষিণ পশ্চিমবঙ্গের জেলাগুলিতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত হবে। দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং উত্তর ২৪ পরগনার উপকূলীয় জেলাগুলিতে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুরে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। কলকাতা, হাওড়া এবং হুগলিতে মাঝারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। মঙ্গলবার উত্তর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং নদিয়া জেলায় ভারী বৃষ্টির আশঙ্কার কথা জানিয়েছে হাওয়া অফিস৷ জেলায় জেলায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে৷ কলকাতা, হাওড়া, হুগলি এবং পশ্চিম মেদিনীপুরে মঙ্গলবার ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় হাওয়া বইবে।
প্রশাসনের প্রস্তুতি : কালীপুজোর দিনেও সাইক্লোন মোকাবিলায় সতর্ক রয়েছে নবান্ন। বিপর্যয় কাজের সঙ্গে যুক্ত সংশ্লিষ্ট কর্মীদের ইতিমধ্যেই বাতিল করা হয়েছে ছুটি। নবান্নে খোলা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। রবিবার বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের সচিব দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলির জেলাশাসকদের নির্দেশ দিয়েছিলেন যাতে নিচু এলাকার বাসিন্দাদের রবিবারের মধ্যেই আশ্রয় শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবারই সেই কাজ শেষ হয়েছে। ৬৭ হাজার মানুষকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সোমবার নবান্ন থেকে মুখ্যসচিব-সহ রাজ্যের প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা গোটা সাইক্লোন পরিস্থিতির ওপর নজরদারি চালিয়েছেন বলেই সূত্রের খবর। গোটা পরিস্থিতির উপর নজর রাখেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও।
সিত্রাংয়ের পরে : বর্ষা বিদায়ের এই সময়টা ঝড়ঝঞ্ঝার। সিত্রাং বিদায়ের পর এরই মধ্যে যে সাগরে নতুন করে কোনও ঘূর্ণিঝড় জন্ম নেবে না একথা হলফ করে বলা যায় না। সেই ঝড় জন্ম নেওয়ার আগেই তার নাম কিন্তু স্থির হয়ে গেছে। সিত্রাং বা সিতরাং নামকরণ করেছে থাইল্যান্ড। আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, এর পরের ঘূর্ণিঝড়ের নাম হবে মানদৌস। সৌদি আরব ওই নাম দিয়েছে।