বর্ষাকাল মানে চারপাশে অদৃশ্য হয়ে থাকা জীবাণুদের বাড়বাড়ন্ত। এই সময় স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে জীবাণুগুলো শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং বাতাসে উড়ে বেড়ায়। একেবারেই চোখে পড়ে না। ত্বকের সংস্পর্শে এলেই শুরু হয় সংক্রমণ এবং তা বাড়তে থাকে। তাই বর্ষাকালে জরুরি ত্বকের (Skin) সতর্কতা এবং অতিরিক্ত যত্ন। এই সময় কারও একজিমা থাকলে তা বেড়ে যায়। অনেকেই একজিমার সঙ্গে বর্ষার অন্যান্য ত্বক সংক্রমণকে গুলিয়ে ফেলেন। বুঝতে পারেন না। একজিমার মতোই লক্ষণযুক্ত কয়েকটি ত্বক সংক্রমণ রয়েছে যা বর্ষায় হতে পারে।
স্ক্যাবিস
স্ক্যাবিস একটি সংক্রামক জলবাহিত রোগ যা পরজীবী মাইট থেকে শরীরে দেখা দেয়। বর্ষাকালে লোকেরা প্রায়ই দূষিত জলের সংস্পর্শে আসে যা ত্বকে ফুসকুড়ি হয় এবং তীব্র চুলকানি হতে থাকে যা অস্বস্তির কারণ হতে পারে। স্ক্যাবিস সংক্রামক এবং এই অ্যালার্জিতে প্রচণ্ড ইরিটেশন বাড়ে। স্ক্যাবিস দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে।
সোরিয়াসিস
সোরিয়াসিস হল একধরনের চর্মরোগ যা মাথার তালু, কনুই, হাঁটুর অংশে, পায়ে সংক্রমণ হয়। ত্বকে চুলকানি শুরু হয়, আঁশ ওঠে, ফুসকুড়ি হয় ছোট ছোট। বর্ষায় পায়ে কাদা, জল বসে গেলে সোরিয়াসিসের রোগীর পক্ষে বেশ সমস্যার হয়। তাই পা খুব ভাল করে পরিষ্কার রাখতে হবে। বর্ষায় এবং শীতে এর প্রাদুর্ভাব হয়।
একজিমা
একজিমা হল একটি অসংক্রামক ত্বকের অবস্থা। একজিমার লক্ষণ চুলকানি, লালভাব এবং প্রদাহ। ত্বকের (Skin) প্রভাবিত অংশে ফোস্কা তৈরি হয় সঙ্গে ফাটাভাব দেখা দেয়। বর্ষাকাল এই পরিস্থিতি আরও বেড়ে যেতে পারে তাই অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া প্রয়োজন।
অ্যাথলেটিক ফুট
বর্ষার মরশুমে অনেকের পায়ে চুলকানি, বিবর্ণ বা ফাটা নখ দেখা যায়। অ্যাথলিটস ফুটের কারণে একটি ছত্রাক সংক্রমণ যা সাধারণত স্যাঁতসেঁতে ঋতুতে নোংরা জলের কারণে ঘটে। ক্যান্ডিডা নামক একটি ছত্রাকের কারণে এই রোগ হয়। পায়ে জ্বালাভাব হয়। ফোস্কা দেখা দেয়। পায়ের, আঙুলের মাঝে ফাটা ফাটা আঁশযুক্ত ত্বক দেখা দেয়।
দাদ
বর্ষাকালে সাধারণত বগল, ঘাড় বা পায়ের তলদেশে যে বৃত্তাকার, লাল ছোপ দেখা যায় একে রিং ওয়ার্ম বা দাদ বলে। দাদ একধরনের ছত্রাক সংক্রমণ। একটি বৃত্তাকার ফুসকুড়ি হয়। রোগটি ছোঁয়াচে। মূলত শরীরের নানা ভাঁজে এই ছত্রাক বা ফাঙ্গাস জন্মায়। যেমন, গলা, মুখ, কুঁচকি, মলদ্বার, বুক ও পিঠে এটি বেশি হয়। প্রচণ্ড চুলকানির পাশাপাশি কখনও কখনও দীর্ঘমেয়াদি ক্ষত তৈরি হয়। অনেক সময় ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ হলে এতে পুঁজও হতে পারে।
সেবোরিক ডারমাটাইটিস
বর্ষাকালে এর প্রাদুর্ভাব ব্যাপক। মাথার ত্বক (Skin), ভ্রু, মুখমণ্ডল, নাকের দুই পাশ, বুক ও পিঠের মাঝখানে ছোট ছোট দানার মতো দেখা দেয়; যা অনেকটা তৈলাক্ত ও হলুদাভ। প্রচণ্ড চুলকায়। এ-জন্য চুল পড়া বেড়ে যায়, ত্বকে জ্বালাবোধ ও ফুসকুড়ি দেখা দেয়। মূলত ইস্ট নামে একধরনের ছত্রাক এ-জন্য দায়ী।
খোসপাঁচড়া
সারকোপটিস স্ক্যাবি নামের একধরনের পরজীবী ত্বকের বিভিন্ন স্থানে দানা দানা সৃষ্টি করে। এটাই খোসপাঁচড়া। এতে ভয়ঙ্কর চুলকোয় ত্বক (Skin)। এটা এতটাই ছোঁয়াচে যে একজনের হলে পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়। এ-কারণে আক্রান্ত না হলেও পরিবারের সবাইকে একই সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হয়। শিশুদের ক্ষেত্রে সময়মতো চিকিৎসা না নিলে কিডনিতে জটিলতার সৃষ্টি হতে পারে। বর্ষায় অপরিচ্ছন্নতায়, নোংরা জলের কারণে, স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার কারণে খোসপাঁচড়া বাড়ে।
চুলকানি
চুলকানি একটি সংক্রামক রোগ। এক ধরনের পরজীবী মাইটের সংস্পর্শে এসে ত্বকে এই সংক্রমণ ঘটায়। পরজীবী ত্বকে বাসা বাঁধে এবং তাতে ডিম পাড়ে, ফলে রোগ বাড়ে। চুলকানিজনিত সংক্রমণ প্রবল হয় বর্ষাকালে। মাথার ত্বকেও এই সময় চুলকানি হয়। এর মূল কারণ বৃষ্টির জল। বৃষ্টির জল দূষিত হয় ফলে এই সমস্যা আসে। বর্ষায় ভেজা ভাব, ঘাম-প্যাচপেচে অবস্থা থেকেও ত্বকে এই সমস্যা হয়।
আরও পড়ুন- মানিকতলায় হারবে বুঝে বিজেপির নোংরা খেলা
হাজা
বৃষ্টির জমা জলে আর গরমের ঘামে হাতে-পায়ে ফাংগাল ইনফেকশন নতুন ঘটনা নয়। হাত-পায়ের আঙুলের খাঁজে এই সংক্রমণ হয় যাকে হাজা বলে। আর্দ্রতার জন্যই মূলত হয়। জল জমে থাকে, মুছলেও পুরোটা পরিষ্কার হয় না। ঘর গেরস্থালির কাজ করায় মহিলাদের বেশি হয়। তাই এই ধরনের সংক্রমণে নামই হয়ে গিয়েছে ‘হাউসওয়াইফ ফাংগাল ডার্মাটাইটিস’। ইমিউনোসাপ্রেসেন্টদেরও ইনফেকশন হতে পারে। যেমন ডায়াবিটিসে আক্রান্ত। এঁদের পায়ের যত্ন খুব ভালভাবে করা উচিত। নচেৎ পায়ে ফাংগাল ইনফেকশন, সেলুলাইটিস এমনকী গ্যাংগ্রিনও হতে পারে।
ছুলি
বর্ষা এলেই ছুলিতে অনেকেই ভোগেন। এটি একধরনের ছত্রাকজনিত সংক্রমণ। গরম, ঘাম, আর্দ্রতার কারণে হরমোনের পরিবর্তনের কারণে ছুলি হয়। একবার হলে খুব সহজে সারতে চায় না। ত্বকের বিভিন্ন স্থানে সাদা গোলাকার দাগ হয়ে যায়।
কী করবেন
জল ঘাঁটবেন না। বৃষ্টির জলকাদা পেরিয়ে ভেজা অবস্থায় বাইরে থেকে ফিরলে স্নান করে ফেলুন এবং শুকনো করে মুছে ফেলুন। শরীরে কোনও খাঁজযুক্ত অংশ ভেজা না থাকে।
নারকেল তেলে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, তাই ত্বকের যে কোনও রকম সমস্যা হলে নির্ভয়ে এবং নিঃসন্দেহে নারকেল তেল ব্যবহার করতে পারেন।
একটি পেঁয়াজের রস আর আধ চা-চামচ ভালভাবে মিশিয়ে নিন। এবার তুলো দিয়ে মিশ্রণটি ছুলির উপর লাগিয়ে দিন। ৫ মিনিট আলতো করে জায়গাটিতে আঙুল দিয়ে রগড়ান। কিছুক্ষণ রেখে ধুয়ে ফেলুন।
এই আবহাওয়াতে ত্বকের এক্সফলিয়েশন জরুরি। কফি, চিনি, ওটসের গুঁড়ো ব্যবহার করে এক্সফলিয়েট করতে পারেন। রোমকূপ পরিষ্কার থাকলে অনেক সংক্রমণ হবে না।
স্যাঁতসেতে ভিজে থাকলে সেই জুতো পরবেন না শুকিয়ে না যাওয়া পর্যন্ত।
সংক্রমণে বেশি চুলকানি হলে একটি পাতলা সুতির কাপড়ে কয়েকটি বরফের টুকরো নিয়ে ত্বকের ওই অংশে ১০-১৫ মিনিট ধরে রাখুন। এতে কষ্ট কমবে।
অ্যালোভেরা জেলে রয়েছে অ্যান্টিফাংগাল উপাদান। তাই অ্যালোভেরা বেসড ক্রিম বা এর ভিতর থেকে জেলির মতো অংশ বের করে নিয়েও ত্বকে লাগাতে পারেন।
যে অংশে চুলকানি রয়েছে সেখানে ফটকিরি ভেজানো জল লাগিয়ে নিন।
চুলকানিতে কষ্ট পেলে কর্পূর ও সরষের তেল লাগিয়ে নিন। এতেই মিলবে আরাম।
এছাড়াও টিট্রি অয়েল লাগিয়ে নিতে পারেন চুলকানির জায়গায়।