খুব কমন একটি বিষয়। অন্তত আজকের দিনে। উদ্বেগপূর্ণ কিন্তু আধুনিক ‘লাইফ স্টাইল’-এর অবদান। ‘ওবেসিটি’ বা ‘স্থুলতা’। গোদা বাংলায় মোটা চেহারা। স্বাস্থ্যের দিকটা সরিয়ে রাখলেও মনখারাপের দিক প্রচুর আছে! প্রতিনিয়ত যা ফেস করতে হয়। বন্ধুদের টিপ্পনী, আত্মীয়দের খোঁটা, কলিগদের হাসাহাসি আর একান্তে বিষণ্ণতা। রোজকার মধ্যবিত্ত জীবনে না মানা হয় ডায়েট না সময় বেরোয় এক্সারসাইজের। হালফিলের ফ্যাশনিস্তা হওয়া তো দূর, কোনও ড্রেসই যেন মানায় না। এবার এই এতসব সমস্যা, যা দৃশ্যমান, তা সবই ‘শরীর-কেন্দ্রিক’। যা থেকে যায় আড়ালে, তা হল, ‘মন’। যা নিয়ে সেই কবেকার অমোঘ ইতিকথা, ‘শরীর! শরীর! তোমার মন নাই কুসুম?’ প্রেক্ষিত ভিন্ন হলেও ‘সোহাগ চাঁদ’-এর কাহিনি-ভাবনা জেনে এই বাক্যটিই মনে ভেসে উঠল। মোটা মেয়েদের মনের কথা বোনা হয়েছে গল্পে। শরীর কেতাদুরস্ত না হলে কি মন থাকতে নেই? নাকি সেই মনে দুঃখ, বেদনা, আঘাত, অপমানগুলো কম আঁচড় কাটে? ‘সোহাগ চাঁদ’-এর (Sohag Chand) ‘সোহাগ’ সেই প্রশ্নগুলোই তোলে।
সোহাগ বিবাহযোগ্যা একটি মেয়ে। ব্যাঙ্কে চাকরি করে। তার জন্য পাত্র দেখা হচ্ছে বাড়ি থেকে। কিন্তু একটা নয় দুটো নয়, মোট ৩৪ জন পাত্র নাকচ করে তাকে তার মোটা ‘ওজনদার’ চেহারার জন্য। তাই পটু হাতে বাড়ির হরেক কাজ সারতে সারতে সোহাগ জানতে চায়, একজন ভাল পাত্রীর মধ্যে মানুষ আসলে কী খোঁজে? শিক্ষা-দীক্ষা, বোধ-বুদ্ধি, ঘরে-বাইরে সবার সঙ্গে সমানভাবে মানিয়ে চলার মতো ক্ষমতা— এই সবই তো? কিন্তু একে একে এতজন পাত্রপক্ষ তাকে রিজেক্ট করেছে একটাই কারণে, তা ওর মোটা চেহারার জন্য। সোহাগ তাই এমন হাজারো মোটা মেয়ের প্রতিনিধিত্ব করে, প্রশ্ন তোলে, রূপটাই কি সব? ভিতরের মানুষটাকে দেখার চোখ কি কারও নেই? তবে বিশ্বাস হারায় না সোহাগ। বরং বিশ্বাস রাখে যে একদিন এমন কেউ আসবে যে তার ওজন না দেখে ‘মন’ দেখবে।
আরও পড়ুন-ব্রাজিলকে হারিয়েও বিদায় ক্যামেরুনের, বিশ্বকাপে আরও এক অঘটন
বিবাদটা বহুদিনের। সোনার আংটি অর্থাৎ ছেলেরা বাঁকা-ট্যারা, রোগা-মোটা যেমনই হোক তা নিয়ে মাথা ঘামায় না কেউ। তার চাকরি, রোজগার, ব্যাঙ্ক-ব্যালেন্স— এগুলো থাকলেই সাতখুন মাফ। কিন্তু একটি মেয়ের ক্ষেত্রে বরাবরই প্রাথমিক বিবেচনার বিষয় হল তার ‘রূপ’। খুব সফট একটা সেন্টিমেন্ট সন্দেহ নেই। ভূমি পেডনেকর-এর ‘দম লাগা কে হ্যায়সা’, সোনাক্ষী সিনহার ‘ডাবল এক্সেল’ এই ‘প্লাস সাইজ’-এর গল্প বলেছিল দারুণভাবে। বেশ কিছু বছর আগে অন্য একটি চ্যানেলেও এই থিমের ওপর ‘রাধা’ নামে একটি ধারাবাহিক হয়েছিল। সোহাগকে নিয়েও চ্যানেল আশাবাদী তাই। ‘সোহাগ’ চরিত্রে যিনি অভিনয় করছেন, বাস্তবে তিনি শুধু ‘প্লাস সাইজ’ই নন, তাঁর ‘সাইজ’ নিয়ে এতটুকু হীনমন্যও নন তিনি। অন্বেষা চক্রবর্তী। ২০১৯-এ ‘মিস প্লাস সাইজ বিউটি পেজেন্ট’ জিতেছিলেন অন্বেষা। সেখানে নিজের বুদ্ধিমত্তা, সাহসিকতা ও প্রেজেন্টেশনের জন্য বহুল প্রশংসিত হয়েছিলেন তিনি। এবার ধারাবাহিকে ডেবিউ করছেন অন্বেষা।
অন্বেষার বিপরীতে যিনি, অর্থাৎ সোহাগের ‘চাঁদ’ (Sohag Chand) যিনি, তিনি অভিষেক বীর শর্মা। ‘মৌ-এর বাড়ি’ ধারাবাহিকে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন অভিষেক। তাই দ্রুত পর্দায় ফেরায় দর্শক খুশি। ‘চাঁদ’-এর চরিত্র যেরকম পরমতেই ধরা পড়েছিল, তাতেই বোঝা যাচ্ছিল, গল্প অচিরেই জমে উঠবে। কারণ ‘চাঁদ’ কমপ্লিট ফিটনেস ফ্রিক। নিজেকে স্লিম-ট্রিম রাখতে সদা সচেতন। একটা স্পোর্টস অ্যাকাডেমি খোলার স্বপ্ন দ্যাখে। আর তার বিশ্বাসও অন্যরকম। শুধু নিজে নয়, প্রত্যেকটা মানুষেরই নিজের স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকা জরুরি বলে তার মনে হয়। নিজের জীবনসঙ্গীর ব্যাপারেও একই মতামত তার। যে নিজের স্বাস্থ্যের খেয়াল রাখতে পারে না সে সংসারের খেয়াল কী করে রাখবে! এই তার মতামত। তাই স্ত্রী হিসেবে চান তেমনই স্লিম-ট্রিম কাউকে।
ধারাবাহিকের নিয়ম অনুযায়ী এহেন সোহাগ ও চাঁদ-এর (Sohag Chand) প্রেম তো হবেই, কিন্তু কীভাবে জমবে তাদের রসায়ন তা কৌতূহল নিয়ে দেখতে বসেছেন দর্শক। এইরকম ‘ওজনদার’ ভালবাসার গল্প যে অন্যরকম হবে তা তারা বেশ বুঝে গেছেন ইতিমধ্যেই। নিঃসন্দেহে এরকম গল্পে একটা সামাজিক বার্তা থাকে। আর কে না জানে বিগত বেশ কয়েক বছরে ধারাবাহিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে গেছে। এমন একটি মাধ্যমের প্রভাবও তাই জন-মনে বহুল। ‘কালার্স বাংলা’ চ্যানেল সেই চেষ্টা তাদের মতো করে করছে। ধারাবাহিকের প্রযোজনার দায়িত্বে সুরিন্দর ফিল্মস। সম্প্রচারের সময় সোম-শনি, সন্ধ্যা সাতটা।