জাগে বিস্ময়

কোথাও দেখা যায় সাপ-মানুষের সহাবস্থান, কোথাও এলিয়েনের ঘাঁটি, কোথাও ঝুলন্ত স্তম্ভ, কোথাও ভেসে ওঠে নরকঙ্কাল, কোথাও জলের নিচে ডুবে যায় মন্দির। অন্য কোনও দেশে নয়, এইসব রয়েছে আমাদের দেশেই। চাক্ষুষ করলে জাগে বিস্ময়। লিখলেন অংশুমান চক্রবর্তী

Must read

সাপের গ্রাম
এঁকেবেঁকে ঘুরে বেড়ায় সাপ। পথঘাটে। ঢুকে যায় গৃহস্থের ঘরেও। লাঠি হাতে তেড়ে যায় না কেউ। বরং এগিয়ে দেয় জল, খাবার। প্রতিটা বাড়িতেই রয়েছে সাপেদের থাকার আলাদা ব্যবস্থা। তারা ইচ্ছামতো ঘরে ঢুকে বিশ্রাম নেয়। ইচ্ছা হলে বেরিয়েও যায়। ছোট ছোট বাচ্চারা খেলা করে সাপ নিয়ে। কেউটে, চন্দ্রবোড়া, শাখামুটি-সহ নানা প্রজাতির বিষধর সাপ। যেন খেলনা।
গল্পকথা নয়, এমন একটি গ্রাম সত্যি সত্যিই আছে, যেখানে মানুষ আর সাপেদের মধ্যে দেখা যায় অবাক করা সহাবস্থান। এখানে মানুষ বা সাপ কেউই একে অপরকে ভয় পায় না। গ্রামটি অবস্থিত আমাদের দেশেই। মহারাষ্ট্রের সোলাপুর জেলার কারমালা তালুকের শ্বেতফল। প্রায় ১,৭০০ হেক্টর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত গ্রামটি। পুণে থেকে মাত্র ২০০ কিলোমিটার দূরে।
শুষ্ক জলবায়ুর কারণে এই গ্রাম নানা প্রজাতির সাপেদের বসবাসের আদর্শ জায়গা। গ্রামের প্রতিটা মানুষের মনেই যে কোনও প্রজাতির সাপের প্রতি রয়েছে অগাধ ভক্তি। কখনও-সখনও কাউকে কাউকে ছোবল মেরেছে সাপ। তবে প্রাণহানি ঘটেনি। গ্রামবাসীদের বিশ্বাস, ঈশ্বরের আশীর্বাদ রয়েছে মাথার উপর। তাই কিছু হয় না। সাপ বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাপ কখনও পোষ মানে না। এরা নিজেদের বিষের প্রয়োগ মাত্র দুই কারণে করে থাকে। এক, শিকার ধরার সময় এবং দুই, বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচাতে। অনেক সময় এমনও হয় যে, বিষাক্ত সাপ কামড় বসালেও বিষ ঢালে না!
কবে থেকে এবং কী ভাবে শ্বেতফলবাসীর মধ্যে এই অভ্যাস শুরু হয়েছিল, জানা নেই কারও। সাপের সঙ্গে মানুষের সহাবস্থান কাছ থেকে দেখার জন্য ওই গ্রামে ছুটে যান বহু মানুষ।

এলিয়েনের ঘাঁটি
সিনেমার দৌলতে ইটি, জাদু, পিকে-র সঙ্গে আমাদের পরিচয় ঘটে গেছে। এরা সবাই এলিয়েন। ভিনগ্রহের জীব। অনেকের মনেই প্রশ্ন জেগেছে, এলিয়েন কি সত্যিই আছে? একটি খবর ছড়িয়েছে সারা পৃথিবীতে, লাদাখে নাকি রয়েছে এলিয়েনের ঘাঁটি। ভিনগ্রহের রহস্যের কারণে এই এলাকা বিগত প্রায় সাত দশক ধরেই চর্চায় রয়েছে। লাদাখের কঙ্গকা লা গিরিপথে বহুবার এলিয়েনদের দেখা গেছে বলে দাবি করা হয়েছে। তাই এই অংশটিকে ফ্লাইং সসার বা ইউএফও বেস বলা হয়। এর সত্যতা যাচাই করার জন্য অনেক বিজ্ঞানী গবেষণাও করেছেন। এই অঞ্চলের নজরদারিও বেশ কড়া। ওটা এমন একটা এলাকা, যেখানে কেউ থাকে না। এলিয়েনরা সত্যিই আসে কি না তা বোঝার জন্য বিজ্ঞানীরা ২০০৪ সালে গবেষণা করেছিলেন। বিজ্ঞানীরা পরে জানান, গবেষণার সময় লাদাখের ওই অংশে একটি রোবটকে হাঁটতে দেখা গেছে। বিজ্ঞানীরা সেই জায়গায় পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে সেই জিনিসটি অদৃশ্য হয়ে যায়।
তবে এটাই একমাত্র ঘটনা নয়। ২০১২ সালে, ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আইটিবিপি কর্মীরাও একই রকম রহস্যময় জিনিস দেখার কথা জানিয়েছিলেন। দিল্লি সদর দফতরে সেনাবাহিনীর পাঠানো রিপোর্টে বলা হয় যে, লাদাখের কঙ্গকা লা পাস এলাকায় এলিয়েন দেখা গেছে। ২০১২ সালে, ডিআরডিও এবং ন্যাশনাল টেকনিক্যাল রিসার্চ অর্গানাইজেশন একসঙ্গে একটি গবেষণা চালিয়েছিল। তদন্ত ও গবেষণার পরেও উভয় প্রতিষ্ঠানই কোনও নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারেনি। সমাধান হয়নি এলিয়েন-সংক্রান্ত রহস্যের।

কঙ্কালের হাতছানি
হিমালয়ের কোলে লুক্কায়িত একটি হ্রদ। মনে করা হয়, সেটা অতৃপ্ত আত্মার আবাস। কাছে গেলেই দেখা যায়, হ্রদের জলে ভেসে রয়েছে অগণিত কঙ্কাল। হিমালয়ের শান্ত নিসর্গে দাঁড়িয়ে এমন দৃশ্য নজরে পড়লে যে কেউ ভয় পাবেন। উত্তরাখণ্ডের চামোলির অন্তর্গত এই হ্রদের নাম রূপকুণ্ড। নন্দা দেবী পরিক্রমায় যেতে হয় এই হ্রদ পেরিয়েই। রাশি রাশি নরকঙ্কাল কীভাবে জায়গা করে নিল রূপকুণ্ডের জলে? অনেকদিন পর্যন্ত শোনা যেত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে যেসব জাপানি সেনা ভারতে চলে এসেছিল, এগুলো তাদেরই কঙ্কাল। ঠান্ডায়, তুষারঝড়ে তাদের সলিলসমাধি হয়।
কয়েক বছর আগে গবেষকরা ময়নাতদন্তের মাধ্যমে ওই কঙ্কালের রহস্যভেদে সক্ষম হয়েছেন। জানা গিয়েছে, এই কঙ্কাল সেই খ্রিস্টপূর্ব নবম শতক থেকে ডুবে রয়েছে রূপকুণ্ডের জলে। কাহিনি বলে, কনৌজের রাজা যশধওয়াল অন্তঃসত্ত্বা রানি বালমপা, দাস-দাসী এবং সেনাদের সঙ্গে নিয়ে চলেছিলেন নন্দা দেবী পরিক্রমায়। নন্দা দেবীর পুজোয় তিনি সৌভাগ্যময় করতে চেয়েছিলেন সন্তানের জীবন। কিন্তু, পথে এক ভয়াবহ তুষারঝড় ওঠে। সেই ঝড় এবং শিলাবৃষ্টিতে সব লোকজন-সহ মৃত্যু হয় রাজা-রানির! তাঁদের মৃতদেহ স্থান পায় রূপকুণ্ডে।
স্থানীয়রা মনে করেন, অপঘাতে মৃত্যু হওয়ায় কারও আত্মাই মুক্তি পায়নি। তাই তারা এই পথের যাত্রীদের মৃত্যুর হাতছানি দেয়।

আরও পড়ুন- হাসিনা কি ফিরছেন বাংলাদেশে? জল্পনা উসকে দিল অডিও ক্লিপিংস

মন্দিরের ঝুলন্ত স্তম্ভ
অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলার একটি গ্রাম, লেপাক্ষী। হায়দরাবাদ থেকে ৪৮০ কিলোমিটার এবং বেঙ্গালুরু থেকে ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানকার লেপাক্ষী মন্দির অন্যতম ও পৌরাণিক কাহিনিতে পরিপূর্ণ। মন্দিরের প্রধান আকর্ষণগুলির মধ্যে একটি হল ঝুলন্ত স্তম্ভ। মূল মন্দিরের বাইরের অংশেই রয়েছে নাটমন্দির। আর এখানেই প্রধান আকর্ষণের অবস্থান। ঢুকলেই প্রথমে নজর কাড়বে সুবিশাল ৭০টি থামের কারুকাজ। ঘুরতে ঘুরতে চোখ থামবে একটি বিশেষ থামের দিকে। সেটা হল ঝুলন্ত স্তম্ভ। নাটমন্দিরের একটু কোণের দিকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিক নিচের একটু জায়গা একেবারে ফাঁকা! স্থানীয় কিংবদন্তি বলে, লেপাক্ষীর বীরভদ্র মন্দিরের এই বিশেষ থামটির ভেতরেই নাকি এখানকার যাবতীয় রহস্য লুকিয়ে আছে।
রহস্য উদ্ঘাটনের জন্য একবার এসেছিলেন এক ব্রিটিশ ইঞ্জিনিয়ার। আট ফুট উঁচু স্তম্ভটির তলায় লোহার রড ঢুকিয়ে নাড়ানোর চেষ্টা করেছিলেন। তারপরেই ঘটল অদ্ভুত ঘটনা। গোটা মন্দিরটাই যেন দুলতে শুরু করল। শুধু তাই নয়, সব ক’টা থামই নড়তে শুরু করে। পাছে মন্দির ভেঙে পড়ে, সেইজন্য তড়িঘড়ি সেই জায়গা থেকে পালান তিনি। ঐতিহাসিক ও প্রত্নতাত্ত্বিকেরাও গবেষণা চালিয়ে নিয়ে গেছেন। তবে কিছুই পাওয়া যায়নি।

ডুবে যায় মন্দির
গুজরাটের কাভির কামবোই শহরে রয়েছে একটি মন্দির। দিনের মধ্যে অন্তত দু’বার সেটা আরব সাগরের জলে ডুবে যায়। মন্দিরের আরাধ্য দেবতা স্তম্ভেশ্বর মহাদেব। লোকে বলে স্তম্ভেশ্বর মহাদেবের মন্দির। বয়স প্রায় দেড়শো বছর।
মন্দিরটি দিনে দু’বার জলের নিচে ডুবে যায় এবং ফের মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে। এই অদ্ভুত ঘটনা দেখতেই মন্দির এবং সংলগ্ন এলাকায় ভিড় করেন পর্যটকরা। স্তম্ভেশ্বর মন্দিরটি আরব সাগর এবং ক্যাম্বে উপসাগরের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত। ভদোদরা থেকে দূরত্ব প্রায় ৭০ কিলোমিটার। মন্দিরের এই জলে ডোবা-ওঠার ঘটনাটি ঘটে ভরা কোটালের কারণে। কোটালের সময় মন্দিরটি সমুদ্রে নিমজ্জিত হয় এবং জোয়ার কমতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মন্দির এবং মন্দিরের ভিতরের প্রায় ৪ ফুট উঁচু শিবলিঙ্গটি আস্তে আস্তে সমুদ্র থেকে উঠে আসে।

Latest article