সৌমেন মল্লিক, বাসন্তী: এইডসমুক্ত বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে সাইকেলে পৃথিবী ঘুরছেন প্রত্যন্ত সুন্দরবনের বাসিন্দা সোমেন দেবনাথ। সফর শুরু করেন প্রায় ২০ বছর আগে, ২০০৪ সালে। ১৪ বছর বয়সে মারণরোগ এইডস সম্পর্কে প্রথম জানা সোমেনের।
আরও পড়ুন-সক্ষম-সুদীপের দাপটে জয় বাংলার
বিশ্ব থেকে এই রোগ তাড়াতে মানুষকে সচেতন করার লক্ষ্যে স্কুলের পড়াশোনা শেষ করার পর তিনি রিজিওন্যাল এইডস কন্ট্রোল সোসাইটি থেকে প্রশিক্ষণ নেন। কলেজ শেষ করেই সাইকেল নিয়ে বেরিয়ে পড়েন গোটা বিশ্বে এইডস সচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিতে। ২০০৪-এ প্রথমে এ দেশের ২৮ রাজ্য-সহ পাঁচ কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মানুষদের কাছে সেই বার্তা পৌঁছে দিয়ে দশ মাস পর বাড়ি ফেরেন। ২০০৬ সালে ফের সাইকেল নিয়ে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিতে বেরিয়ে পড়েন।
আরও পড়ুন-রবীন্দ্রনাথ যাকে আশ্রমের সম্পদ বলেছিলেন সেই ঐতিহ্যবাহী কালো বাড়ির দৈন্যদশা বাড়ান বিদ্যুৎ
এশিয়ার ২৩ দেশে সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পর পাড়ি দেন ইউরোপ। সেখানকার ৫০ দেশ হয়ে আফ্রিকার ৫২টি দেশ-সহ মধ্যপ্রাচ্যের ১১টি দেশে যান সোমেন। এভাবেই ইতিমধ্যে বিশ্বের ১৮৯ দেশে এইডস সচেতনতার বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন এই বঙ্গতনয়। পাশাপাশি ভারতীয় সংস্কৃতি তুলে ধরায় তাঁর যাত্রাপথ হয়ে ওঠে ভিন্নধর্মী। দেশে দেশে এই বার্তা রটিয়ে দিতে কেটে গিয়েছে প্রায় ২০ বছর। এর মধ্যে হারিয়েছেন বাবাকে। দীর্ঘ যাত্রাপথে ৩৮ দেশের রাষ্ট্রপতি, ৭২ দেশের প্রধানমন্ত্রী-সহ ১৭৭টি দেশের ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এবং হাইকমিশনারদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
আরও পড়ুন-কাশীর টানেল বিপর্যয় সামলাবে কালনার পাইপ
একই সঙ্গে করোনাকালে চিনে গিয়ে করোনায় আক্রান্ত হওয়া থেকে আফগানিস্তানে তালিবানদের হাতে আটক হওয়ার মতো ঘটনাও আছে। এইডসমুক্ত বিশ্ব গড়ার স্বপ্ন দেখতে দেখতে প্রায় দু’যুগ নিজের সাইকেলকে সঙ্গী করে ছুটে চলা সুন্দরবনের এই বেঙ্গল টাইগার সব সময় নিজের লক্ষ্যে অবিচল থেকেছেন। আগামী ১০ ডিসেম্বর ১৯১ দেশে প্রচারের লক্ষ্যমাত্রা সম্পূর্ণ করে দেশের মাটিতে পা রাখবেন সোমেন। পৌঁছবেন সোনারপুরের সুভাষগ্রামে। যেখানে তাঁর রত্নগর্ভা মা ও দুই ভাই থাকেন। ১০ থেকে ১৬ তারিখ সুভাষগ্রামে মায়ের তৈরি পিপলস হাউসে থাকবেন। সেখানে দেশবিদেশ থেকে আসা মানুষের সঙ্গে দেখা করার পাশাপাশি চলবে এইডস সচেতনতা শিবির। ১৭ তারিখ ক্যানিং থেকে সোনাখালি পর্যন্ত প্রায় ২০ কিমি সাইকেল র্যালিতে যোগ দেবেন। সোমেনের ফেরার খবরে উচ্ছ্বসিত সুন্দরবনবাসী ঘরের ছেলেকে বরণ করে নেওয়ার প্রস্তুতি নিতে শুরু করে দিয়েছেন।