অলোক সরকার
এইমাত্র গৌতম গম্ভীরের প্রেস কনফারেন্স শেষ হল। তিনি জানতেন অ্যাটাক আসবে। তাই পাল্টা অ্যাটাকে গেলেন। যা লজ্জার হারের পর প্রত্যাশিত ছিল।
প্রেস বক্সে এসে চোখে পড়ল সাদা পলিথিন চাদরে ঢাকা পড়ছে ইডেন। ছবিটা তাৎপর্যপূর্ণ। ঘরের মাঠে ছয় টেস্টের মধ্যে চারটিতে হার। এই হারও নিশ্চয়ই নিউজিল্যান্ড সিরিজের মতো চাপা পড়বে সাদা পলিথিনের নিচে। আর কত হারলে ঘুম ভাঙবে বিসিসিআইয়ের! কেউ জানে না।
ম্যাচের আগে লাগাতার নাটক। অবশ্যই উইকেট নিয়ে। তাও ভাল ভারতীয় কোচ বলে গেলেন আমরা এই উইকেটই চেয়েছিলাম। কিন্তু চার স্পিনার? তিনে ওয়াশিংটন? সকালে বুমরাকে দিয়ে শুরু না করা? প্লিজ কিছু তো বলুন। কোচ বললেন। বেকার যুক্তি (South_Africa_India)। আসল কথা হল এই দল ১২৪ রান তাড়া করতে গিয়ে গুটিয়ে গেল ৯৩ রানে। পৌনে তিনদিনে হেরে গেল ৩০ রানে। ৩৫ ওভারে। সেটাও ঘরের মাঠে। দল আগাপাশতলা বদলে দিয়েছেন। বিরাট অস্ট্রিয়ায় ঘুরছেন। রোহিত মুম্বইয়ে। দল কলকাতায়। ভাল করে দেখুন, ঘরের মাঠে গর্বের রেকর্ড এখন ভেঙে ছত্রখান। স্পিনই বিভীষিকা ভারতের কাছে। হালফিলে। ভাবা যায়!
৯২ বলে ৩১ রান করে ফিরে যান ওয়াশিংটন সুন্দর। রেখে যান অক্ষর, কুলদীপ, সিরাজকে। শুভমনকে আর ধরা হচ্ছে না। তিনি সিরিজের বাইরে। তখনও ৫০ রান দরকার ছিল জিততে। বোঝাই গেল হবে না। ওয়াশিংটন এতগুলো টেস্ট খেলেছেন। সেট ব্যাটার হিসাবে এক-আধটা বড় ওভার খেলা উচিত ছিল যাতে চাপ উল্টোদিকে যায়। তিনি পারেননি। ড্রেসিংরুমও সেই বার্তা দেয়নি। বরং মাটি কামড়ে উইকেট দিয়ে গেলেন মার্করামকে। হার তখনই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
নাকি তারও আগে? যখন ধ্রুব জুরেল (১৩) হার্মারকে উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে গেলেন। কোনও দরকার ছিল না ওই সময় স্কোয়ার লেগে তুলে মারতে যাওয়ার। বিশেষ করে যখন ওয়াশিংটনের সঙ্গে জুটিতে দাঁড়ানোর মুখে। পরের দিকে একটা সময় ৭৬ বল পরে বাউন্ডারি হল। তারপর ছয়। ড্রেসিংরুম থেকে শিকল আলগা করার নির্দেশ আসা উচিত ছিল। আসেনি। অক্ষর তবু সেই চেষ্টা করে গেলেন ১৭ বলে ২৬ রান করে। তবে হার্মার আর মহারাজের স্পিন ও বাভুমার ক্যাচে সব গল্প শেষ।
আরও পড়ুন-লিগ নিয়ে পরামর্শ অরূপের
১২৪ রান প্রথমে মনে হচ্ছিল সহজ টার্গেট। কিন্তু এরকম ছোট টার্গেট অনেক সময় বিপদের কারণ হয়। শচীনদের জমানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজে এরকমই লো টার্গেটে দাঁড়িয়ে হেরেছিল ভারত। লাঞ্চে ভারত যখন ১০/২, তখন সেটাই অনেকের মাথায় ঘুরছিল। বাভুমা বুদ্ধিমান অধিনায়ক। তিনি জানতেন উইকেটের একদিকে বেশি বাউন্স আছে। তিনি সেদিকে জেনসেনকে নিয়ে এসেছিলেন। এরকম একটা স্পট থেকে দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংসে মার্করামকে দাঁড় করিয়ে আউট করেছিলেন বুমরা। সেটাই এদিন ফেরালেন জেনসেন। ওই সময় ভারতীয় ইনিংসে কাঁপুনি ধরিয়ে দেন তিনি। বাকিটা স্পিনারদের।
ব্রেকের আগে ইনিংস শুরু করলে ওপেনারদের চাপ থাকে। সেই চাপেই পরপর যশস্বী (০) ও রাহুলের (১) উইকেট চলে গেল। ১ রানে ২ উইকেট তখন ভারতের (South_Africa_India)। দুই কেন তিন উইকেটও ধরতে হচ্ছিল। যেহেতু নেক স্প্যাজমে শুভমন দ্বিতীয় টেস্টেও খেলতে পারবেন না। যশস্বী ভিতরে আসা বলে ব্যাটের কানা ছোঁয়ালেন। জেনসেনের বলটা লাফিয়ে এল। বাঁহাতি ওপেনার ব্যাটও সরাতে পারেননি। এরপর রাহুলকে ফেরালেন জেনসেন। সেই উঠে আসা বলে। রাহুলের ব্যাট ছুঁয়ে চলে গেল কিপারের হাতে। বাঁহাতি ফাস্ট বোলার ক্লাব হাউসের দিক থেকে প্রচুর বাউন্স পেয়েছেন।
ইডেনের এই উইকেট বিস্তর তোপের মুখে পড়েছে। আবার এই উইকেট নাটকও দেখাল অনেক। সিমাররা অনেকটা করে বল মুভ করালেন। বল তুললেন গায়ের উপরে। কিন্তু জাদেজা, হার্মারের মতো স্পিনাররাও অনেকগুলো করে উইকেট নিয়ে গেলেন। আসলে এই উইকেটকে কেউ বুঝতে পারেনি। ভারত চার স্পিনারে খেলল। ওয়াশিংটনকে ব্যবহারই করা বল না। কে জানে এত বাউন্স আছে জানলে হয়তো আকাশ দীপকে খেলাতেন গম্ভীর। এক স্পিনার বাড়তি হয়ে গেল।
এত তাড়াতাড়ি টেস্ট ম্যাচ ফুরিয়ে গেলে সংশ্লিষ্ট অ্যাসোসিয়েশন ও কিউরেটরের দিকে আঙুল উঠবেই। প্রথম দু’দিনে ২৬টি উইকেট পড়েছে। ভাবা যায়? শুধু ব্যাটারদের দিকে আঙুল তুলে হবে না। বোলারদের প্রশংসা করলেও কিছু হবে না। মোদ্দা কথা হল, উইকেট অনেক সময় বিপদ ঘণ্টা বাজিয়েছে। রবিবারের কথা ধরা যাক। জেনসেনের গতি ও বাউন্স তাঁকে পরাস্ত করেছে। রাহুল ব্যাট সরাতে পারেনি। মুশকিল হচ্ছে যে ছ’বছর পর ইডেনে টেস্ট দেখতে এসেছিলেন ফ্যানেরা। তাঁরা উইকেটের কেরামতি ও আড়াই দিনের ম্যাচ দেখে ফিরলেন।
সকালে দুই নট আউট ব্যাটারের একজনকে আউট করতে ৪৪ মিনিট লেগে গিয়েছিল। করবিন বশকে (২৫) বোল্ড করে দেন বুমরা। পরের দুটি উইকেট মহম্মদ সিরাজের। হার্মার (৭) বোল্ড, কেশব মহারাজকে লেগ বিফোর। বাভুমা নট আউট থেকে যান ৫৫ রানে। সিরাজ ও বুমরা ছাড়া আর কোনও ভারতীয় বোলার এদিন উইকেট পাননি। দুই সিমার উল্টোদিক থেকে সাহায্য পেলে হয়তো এত লিড নিতে পারতেন না বাভুমারা। তাঁদের জয়ও এত সহজ হত না।

