কেপটাউন, ৩ জানুয়ারি : রোম্যান্টিক কেপটাউনে হাড় হিম ক্রিকেট! দিনভর এটাই ছবি নিউল্যান্ডস মাঠে। সারাদিনে ২৩টি উইকেট। উঠল ২২২ রান। অল্পের জন্য ভাঙল না ১২৬ বছরের পুরনো রেকর্ড। ১৮৮৮-তে লর্ডসে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্টে একদিনে পড়েছিল ২৭টি উইকেট। এদিন চারটি কম। যাই হোক, লোকে এখানে টেবল মাউন্টেন দেখতে আসে। এদিন দেখল ফাস্ট বোলারদের রংবাজি। যেন সাতের দশকের ছবি। যখন মার্শাল, রবার্টস, লিলি, টমসনরা এভাবেই মাঠে আগুন ঝরাতেন। তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিতেন বিপক্ষের ব্যাটারদের।
একদিকে সিরাজ, বুমরা, মুকেশ। অন্যদিকে রাবাডা, এনগিডি ও বার্গার। বুধবার ভয়ঙ্কর ফাস্ট বোলিংয়ের নমুনা দেখল কেপটাউন। এতে অদ্ভুত সব কাণ্ড ঘটল। অভাবনীয়ও। একটা দল ২৩.২ ওভারে গুটিয়ে গেল ৫৫ রানে। এটা দক্ষিণ আফ্রিকা (South Africa vs India)। তখন মনে হয়েছিল ভারত লম্বা লিড নেবে। কিন্তু তারাও অল আউট ৩৪.৫ ওভারে ১৫৩ রানে। দাঁড়ান, এখানেই সবটা শেষ হয়ে যাচ্ছে না। দক্ষিণ আফ্রিকা দ্বিতীয় ইনিংসেও বেকায়দায় পড়ল। প্রথমবার যদি সিরাজ তাদের শেষ করে থাকেন, তাহলে দ্বিতীয় দফায় মুকেশও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছেন। দিনের শেষে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬২-৩। দুটি উইকেটই মুকেশের। একটি বুমরার। এখনও ৩৬ রানে পিছিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। হাতে ৭ উইকেট।
নিউল্যান্ডসে টেস্টের প্রথম দিন এমন ক্রিকেট হবে কে ভেবেছিল! কে এল রাহুল যখন আউট হলেন, তখন ভারতের রান ১৫৩-৫। বাকি ৫ উইকেটে আর কোনও রানই হল না। ১১ বলে ০ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে ভারত অল আউট হয়ে গেল। শেষ পাঁচ ব্যাটারের রান এই, জাদেজা (০), বুমরা (০), সিরাজ (০), প্রসিধ (০) ও মুকেশ কুমার ০ নট আউট। একজনকেই সাবলীলভাবে ব্যাট করতে দেখা গেল। বিরাট কোহলি। করলেন ৪৬ রান।
ভারতের ১৭ রানে যশস্বী জয়সোয়াল (০) ফিরে যাওয়ার পর রোহিত (৩৯) ও শুভমন (৩৬) রানকে ৭২ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু এরপর বিরাট ছাড়া আর কেউ রাবাডা, এনগিডি ও বার্গারের সামনে দাঁড়াতে পারেননি। তিনজনই তিনটি করে উইকেট নিয়েছেন। তবে রোহিত ও শুভমন ফিরে যাওয়ার পর বিরাট ও রাহুলের ভরসায় ছিল ভারত। কিন্তু প্রথম টেস্টে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে সেঞ্চুরি করা রাহুল এদিন ৮ রানে ফিরে যান। বিরাট ৫৯ বল কাটিয়ে গিয়েছেন। তবে যখন তাঁর ব্যাটের দিকে তাকিয়েছিল দল, তখনই তিনি ফিরে গেলেন রাবাডার শিকার হয়ে।
ডিন এলগার জীবনের শেষ টেস্টে বড় ভুল করে ফেললেন কি না তা নিয়ে চর্চা হবে। নিউল্যান্ডসে টসে জিতে তাঁর আগে ব্যাট নেওয়ার সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল কি না প্রশ্ন উঠছে। বিশেষ করে ভারত যখন চার পেসার নিয়ে মাঠে নেমেছিল। নিজেদের বানানো ফাঁদে নিজেরাই পড়ল দক্ষিণ আফ্রিকা? না হলে ২৩.২ ওভারে তারা অল আউট হবে কেন ৫৫ রানে! মহম্মদ সিরাজ একাই শেষ করেছেন তাদের। স্বপ্নের বোলিংয়ে ১৫ রানে ৬ উইকেট। পাশে দুটি করে উইকেট বুমরা ও মুকেশ কুমারের। দক্ষিণ আফ্রিকার মাত্র দু’জন ব্যাটার দুই অঙ্কে পা দিতে পেরেছেন (South Africa vs India)। বেডিংহ্যাম ১২ ও ভেরেইনের ১৫। বাকিরা দশের নিচে!
নিউল্যান্ডসে সেঞ্চুরিয়নের মতো গতির উইকেট হয় না। এখানে সবাই পাটা উইকেট দেখে এসেছে বরাবর। রোহিতরা অবশ্য কেপটাউনে পা দিয়ে বুঝে গিয়েছিলেন এবার ভিন্ন চরিত্র। ফলে সিরাজ, বুমরা, প্রসিধের সঙ্গে নেওয়া হল মুকেশকেও। আগের টেস্টে গতি ও সুইংয়ের কাছে পর্যুদস্ত রোহিতদের আরও একটা শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টায় এমন ভিন্নধর্মী উইকেট কি না সেটা প্রশ্ন। তবে উইকেট হয়তো বুমেরাংই হল! বঙ্গ সিমার মুকেশ ২.২ ওভারে ২ রান দিয়ে ২ উইকেট নিলেন। বুমরা ৮ ওভারে ২৫ রানে নিয়েছেন ২টি উইকেট। তবে সকালটা সিরাজের। উইকেটের যাবতীয় সুবিধা নিয়ে ৯ ওভারে ১৫ রানে ৬ উইকেট নিয়েছেন। নিউল্যান্ডস উইকেটে যেমন গতি ছড়িয়েছেন, তেমনই সুইং ও বাউন্স আদায় করে নেন তিনি।
আরও পড়ুন- সঙ্গীতমেলা আয়োজনে অস্বচ্ছতার ভুয়ো অভিযোগ, বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ ছুড়লেন ব্রাত্য
৫ রানে মার্করামের (২) আউট দিয়ে আফ্রিকান ইনিংসের ভরাডুবি শুরু। সিরাজের বলে তাঁর ক্যাচ নেন যশস্বী জয়সোয়াল। আগের টেস্টে দুশোর দোরগোড়ায় পৌঁছে যাওয়া এলগারকেও (৪) এরপর বোল্ড করে দেন সিরাজ। সিরাজের এই ধাক্কা থেকে আর বেরোতে পারেননি এলগাররা। এরপর স্টাবস (৩), টনি ডি জর্জি (২), বেডিংহ্যাম, ভেরিইন, জানসেন (০), মহারাজ (৩), রাবাডা (৫), বার্গাররা (৯) সবাই লাইন দিয়ে ফিরে গিয়েছেন। কোয়েটজি এই টেস্টে চোটের জন্য খেলছেন না। তাঁর জায়গায় ফিরেছেন নুঙ্গি এনগিডি। তিনি নট আউট থেকে যান কোনও রান না করেই।
ডোনাল্ডের দেশে এদিন তাঁর মতোই আগুন ঝরালেন সিরাজ। কলম্বোয় এশিয়া কাপ ফাইনালে ২১ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন। সকালের দু’ঘণ্টায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫৫ রানে মুড়িয়ে দিতে তিনি খরচ করেছেন ৯টি ওভার। মেলবোর্নে বক্সিং ডে টেস্টে অভিষেকের আগে সিরাজের বাবা মহম্মদ ঘাউস প্রয়াত হয়েছিলেন। কিন্তু অটো চালক বাবার স্বপ্ন পূরণ করতে দেশে ফিরে না এসে চোখে জল নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন তিনি। তবে ৬ উইকেট নিয়েও এদেশে ভারতীয়দের মধ্যে সেরা বোলিং করা হল না সিরাজের। রেকর্ড শার্দূল ঠাকুরের। দু’বছর আগে তিনি জোহানেসবার্গে ৬১ রানে ৭ উইকেট নিয়েছিলেন।