একটা কোকিল ডাকলে কি বসন্ত আসে? বসন্তকাল। এ-রাজ্যের বিরোধী দলগুলোর কলরব আনন্দ নয়, আর্তস্বরে ডেকে উঠল। রঙের উৎসবে জোর করে তারা নিজেদের রাঙিয়ে নিতে গোলা রঙ্গে দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে নেমে পড়েছেন। মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি বিধানসভার উপনির্বাচনে জিতেছেন তাঁরা। বড় কাতর স্বরে একটি কোকিল ডেকেছে। শূন্য থেকে তাঁরা ‘এক’ হয়েছেন। তাতেই তাঁরা মনে করলেন ‘বসন্ত এসে গেছে’।
আরও পড়ুন-প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে তৈরি হচ্ছে রঙিন ইট
পিছনের কাহিনি খানিকটা বর্ণনা করা দরকার। এ-রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সবাই নামে বা বেনামে জোট করে। একমাত্র উদ্দেশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর অযথা বদনাম করা, কুৎসা করা। আর তৃণমূল কংগ্রেসের নামে কুৎসিত মন্তব্য করা। ২০১১ সাল থেকেই এই ব্যাপারটি পাকাপোক্তভাবে চলছে।
আরও পড়ুন-নতুন সেতু উদ্বোধনে আগামিকাল ফের ডায়মন্ড হারবার যাচ্ছেন অভিষেক
এই পথ ধরেই বামপন্থীরা ও কংগ্রেস জোট করেছে। ২০১৬-তে করেছে। ২০২১-এ করেছে। লোকসভায় করেছে। ২০২১-এর বিধানসভায় কংগ্রেস ও বাম শূন্য হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভায় বাম শূন্য আর কংগ্রেস অর্ধেক আসন। সুবিধাবাদী জোট মানুষ মানেননি। এর সঙ্গে যোগ ছিল বিজেপি। রাজনীতির এমন সুবিধাবাদী অবস্থান কল্পনা করা যায় না। বামপন্থীরা দলে দলে বিজেপিকে ভোট দিচ্ছে। বিজেপি উল্টোটা। আলাদা প্রার্থী দিচ্ছে। কিন্তু ভোট পড়ছে এক জায়গায়। তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে হবে এটাই তাদের উদ্দেশ্য। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সুশাসন, জনগণের সরকার, গরিবের অধিকার, মা-বোনেদের অধিকার, শ্রমিক, কৃষক, মধ্যবিত্তের অধিকার তাদের পছন্দ হচ্ছে না। তারা এলোমেলো করে লুটেপুটে খেতে চায়। অনেকদিন তারা ক্ষমতার বাইরে। আর সহ্য করতে পারছে না। আর বিজেপি তুলেছে ডবল ইঞ্জিনের গল্প।
আরও পড়ুন-পুরীতে জগন্নাথ মন্দির সংলগ্ন শপিং মলে আগুন, পুড়ে ছাই বহু দোকান
সাগরদিঘি উপনির্বাচনে সেই নীতিহীন, সুবিধাবাদী জোট দেখা গেল। কংগ্রেস প্রার্থীকে সমর্থন করল সিপিএম। একটা চলচ্ছক্তিহীন ক্ষয়িষ্ণু পার্ট খড়কুটো ধরে বেঁচে থাকতে চাইছে। নীতি এদের কাছে কোনও ব্যাপার নয়। ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন আজও দেখে। তাই জোট বাঁধল। আলাদা প্রার্থী দিল বিজেপি। আশ্চর্যের ব্যপার বিজেপি নেতাদের ভাষণ শুনে মনে হল না তারা ভোট লড়ছে এবং জিততে চায়। তারা বলল— বিজেপিকে ভোট না দিন তাতে সমস্যা নেই। তবে তৃণমূল কংগ্রেসকে ভোট দেবেন না। আর যাকে পছন্দ হবে ভোট দেবেন। একটা বড় পার্টি, কেন্দ্রে সরকার চালাচ্ছে, যারা নিজেদের বিশ্বের সর্ববৃহৎ পার্টি বলে করে তারা কতখানি দেউলিয়া হলে একথা বলতে পারে? সেই কারণে গত নির্বাচনে প্রাপ্য ভোটের ১৪ শতাংশ কংগ্রেস প্রার্থীকে উপহার দিয়েছে।
আরও পড়ুন-নারী যখন খাঁচার পাখি
আমরা আশ্চর্য হতে ভুলে গেলাম যে, রাজ্যের কংগ্রেস নেতা মাথায় তেরঙ্গা ফেট্টি, গালে লাল আবিরের টিপ এবং লাল রঙের জামা গায়ে দিয়ে সিপিএম বন্দনা করছেন। মাত্র কিছুদিন আগেই সিপিএম রাজত্বে তাঁরা কতখানি অত্যাচারিত হয়েছেন, এই দলই কেরলে সিপিএমের সঙ্গে রাস্তায় মারামারি করেছে। কত বড় দ্বিচারিতা মান্য করলে এই কাজ করতে পারে? যে কথা আগে বলেছিলাম। কেন্দ্রবিন্দু একটাই— মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও তৃণমূল কংগ্রেসকে পরাজিত করতে হবে। তার জন্য লড়াইয়ে কোনওরকম নীতি-নৈতিকতা, নিদেনপক্ষে চক্ষুলজ্জা থাকলেও হবে না। সাগরদিঘি উপনির্বাচনে এই কাজটাই বিরোধীরা করছে। কেউ সেখানে আলাদা দল ছিল না। না বাম, না কংগ্রেস, না বিজেপি। একটা দলে পরিণত হয়ে আমাদের নেত্রী ও দলের নামে খিস্তি-খেউড় করছে।
আরও পড়ুন-প্রয়াত বিশিষ্ট আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ সমরাদিত্য পাল, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
এরা সবাই রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। রাজনীতির কোনও অস্ত্র তাদের হাতে নেই যা দিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মোকাবিলা করতে পারে। সে পথ তাঁরা ত্যাগ করলেন। কুৎসিত রাস্তা ধরলেন তাঁরা। সাম্প্রদায়িকতার রাস্তা। প্রায় ৬৭ শতাংশ মুসলমানের বাস এখানে। প্রীতি, সম্প্রীতিতে বাস সকলের। এখানকার খেরুয়ে আছে সেই বিখ্যাত মসজিদ। যার গায়ে আছে বিষ্ণুপুর ঘরানার কাজ। পাঁচশো বছরের পুরনো। বিরোধী দলগুলো সম্প্রীতিটা ভাঙবার জন্য উঠেপড়ে লাগল। সামান্য কিছু হলেও তারা সফল হয়েছে। কিন্তু বড় ক্ষতি হয়ে গেছে হিন্দু ও মুসলমানের, বড় ক্ষতি হয়ে গেছে সমাজের, বড় ক্ষতি হয়ে গেছে বাংলার। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রাণপাত পরিশ্রমে যে বাংলায় আমরা মন্দিরের কাঁসর-ঘন্টা আর মসজিদের আজান শুনে ঘুম থেকে উঠি অথবা ঘুমোতে যাই— সেখানে বিরোধীরা বিভেদের ক্যানেস্তারা বাজিয়েছে। কোনও দায়িত্ববোধের ধার তারা ধারে না। তারা বাংলায় বিভেদ আনতে চেয়েছে। সাগরদিঘিতে অশুভ আঁতাঁত করে সেই কাজে তারা কিছুটা সফল হয়েছে।
আরও পড়ুন-বসন্তদিনে ঘুরে আসুন ভালকি মাচান
তবে সাগরদিঘি একটা বড় শিক্ষা দিয়েছে যে, বিরোধীদের আর আলাদা করে চিনতে হচ্ছে না। একটাই দোকানে পরপর ছোট- বড় সাইনবোর্ড লাগানো আছে। মাঝে মাঝে তারা বাজার গরম করার জন্য নকল যুদ্ধে নামেন। যেমন সাগরদিঘির মাটিতে নেমেছিলেন। এই সময় পশ্চিমবাংলার সুস্থ পরিবেশকে নষ্ট করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে বিরোধীরা। জোট বেঁধেছে। কারণ তারা জানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার মানুষের মনে যেভাবে জায়গা করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে তাতে তাদের আর ফেরার কোনও সুযোগ নেই। সেইজন্য সাগরদিঘিতে তারা সমস্ত কুৎসিত খেলার অবতারণা করেছিল। রাজ্যের সর্বত্র সেটাই করতে চাইছে। বিরোধীরা একথাও জানে না দলের ও নেত্রীর শক্তি কোথায়? শক্তি আছে প্রত্যন্ত গ্রাম-শহরের সব প্রান্তিক ও এগিয়ে আসা মানুষের মনের মধ্যে। যার পরাজয় নেই। সাগরদিঘিতে আমরা হারতে পারি কিন্তু— একটা কোকিল ডাকলে বসন্ত আসে না। বিরোধীদের বসন্ত-উৎসব পাগলের কল্পনা মাত্র।