নবনীতা মণ্ডল, নয়াদিল্লি : পশ্চিম দিল্লির মুন্ডুকা মেট্রো স্টেশনের কাছে শুক্রবার রাতের বিধ্বংসী আগুনে প্রাণহানি আরও বাড়তে পারে। শনিবার সন্ধ্যাতেও অগ্নিদগ্ধ বহুতল থেকে কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। এখনও চলছে উদ্ধারকাজ। দমকলের ৩০টি ইঞ্জিনের চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এলেও চারিদিকে লন্ডভন্ড অবস্থা, আর্তনাদ। এখনও পর্যন্ত উদ্ধার করা হয়েছে ৭০ জনকে। দিল্লির এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শোকপ্রকাশ করে ট্যুইট করেছেন। তিনি বলেন, দিল্লিতে মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের কারণে বিপুল সংখ্যক প্রাণহানির খবরে অত্যন্ত মর্মাহত ও ব্যথিত। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাই। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করি।
আরও পড়ুন-একসঙ্গে খাওয়া নয়
পশ্চিম দিল্লির জেলাশাসক জানিয়েছেন, যে চারতলা ভবনে আগুন লেগেছিল তার অগ্নিনির্বাপণ শংসাপত্রও ছিল না। শনিবার বিকেলে ঘটনাস্থলে দেখা গিয়েছে, ইতিউতি ছাইয়ের গাদা। কালো হয়ে যাওয়া দেওয়াল। স্বজন হারানোর আর্তনাদে কেঁপে উঠছে মুন্ডুকা মেট্রো স্টেশনের গলি। স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, ভিতরে এখনও আগুনে পুড়ে যাওয়া কিছু মৃতদেহ রয়ে গিয়েছে। চারতলা এই বাড়ির প্রায় আর কিছুই অবশিষ্ট নেই। সব পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছে। শুধু কয়েকটা থাম আর ছাদ দাঁড়িয়ে আছে। তার মধ্যেই চোখে জল নিয়ে নিখোঁজ স্বজনের সন্ধানে ভিড় করেছেন অসহায় বহু মানুষ। মৃত্যুপুরী মুন্ডুকা এলাকার ওই অভিশপ্ত বাড়ি এখন পুরোটাই প্রশাসনের দখলে। কাউকেই ভিতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। সরকারিভাবে মৃতের সংখ্যা ৩০ হলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের আশঙ্কা, মৃতের প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি।
আরও পড়ুন-আসছে গ্রহাণু
জানা গিয়েছে, ভস্মীভূত ওই চারতলা বাড়িতে আগুন লাগার সময় প্রায় ২০০ জন উপস্থিত ছিলেন। কারণ সেখানে একটি কনফারেন্স চলছিল। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখনও ২৫ জন মহিলা এবং ৫ জন পুরুষ সহ মোট ৩০ জন নিখোঁজ বলে জানা গিয়েছে। প্রায় ৪০ জন অগ্নিদগ্ধ হয়ে সঞ্জয় গান্ধী মেমোরিয়াল হাসপাতাল ও আরও কয়েকটি হাসপাতালে ভর্তি। যার মধ্যে ১২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। উদ্ধারকাজ এখনও চলছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, উদ্ধারকাজ শেষ হলে মৃতের সংখ্যা আরও বাড়বে।
আরও পড়ুন-মূল্যবৃদ্ধি ও উৎপাদন ঘাটতির জের, এবার গম রফতানি নিষিদ্ধ করল কেন্দ্র
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, ওই বহুতলে ছিল একাধিক অফিস। দোতলাতেই আগুনের সূত্রপাত হয়েছিল। তবে কী কারণে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তা এখনও স্পষ্ট নয়। ওই ফ্লোরে যে অফিস রয়েছে, তাতে সিসিটিভির ক্যামেরা তৈরির কাজ হয়। সংস্থার দুই মালিক হরিশ গোয়েল ও বরুণ গোয়েলকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপর এক মালিক এখনও পলাতক। এরই মধ্যে দিল্লির দমকল বিভাগ জানিয়েছে, চারতলা বাড়ির যে অফিস থেকে আগুন ছড়িয়ে পড়ে সেই অফিসের মালিকরা দমকল বিভাগের থেকে ‘নো অবজেকশন সার্টিফিকেট’ নেননি। দিল্লি দমকল বিভাগের প্রধান, অতুল গর্গ জানিয়েছেন, ওই অফিসের মালিকেরা অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা যাচাই করে দমকলের অনুমোদনের জন্য আবেদনই করেননি।
আরও পড়ুন-রাম-সীতা ইস্যুতে অবান্তর মামলায় কুণালের বিরুদ্ধে চার্জশিট ত্রিপুরা পুলিশের
এমনকী, ওই বাড়ির বেশির ভাগ অফিসেই দমকল বিভাগের প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নেই। প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা না মেনে ওই বাড়িতে কীভাবে অফিসগুলি চলছিল সে বিষয়ে বিজেপি শাসিত দিল্লি পুরসভার গাফিলতির দিকেও আঙুল তুলেছেন বিরোধীরা। তদন্তে এসেছে ফরেনসিক দলও। রোহিণীর ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরির ডিরেক্টর দীপা ভার্মা জানিয়েছেন, তাঁদের দুটি দল, তদন্ত করছে। শনিবার দিল্লির মুন্ডকা এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী কেজরিওয়াল। প্রত্যেক পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা করেছেন তিনি। আহতদের দেওয়া হবে ৫০ হাজার। ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের পক্ষ থেকেও।