প্রতিবেদন : অশান্তি-অরাজকতা-গুন্ডামি-পুলিশকে রক্তাক্ত করা-বাইকে আগুন জ্বালানো-ব্যারিকেড ভাঙা— এরকম হাজারো ছবি বাংলার মানুষ দেখলেন তথাকথিত নবান্ন অভিযানকে কেন্দ্র করে। কিন্তু পুলিশ সংযমী ভূমিকা পালন করায় লাশের রাজনীতি করা হচ্ছে না দেখে শেষ বেলায় তেড়েফুঁড়ে নামল বঙ্গ বিজেপির ম্যানেজাররা। হতাশায় ডাকল বাংলা বন্ধ। যাতে আগামিকাল, বুধবার আরও একবার গোলমাল করার সুযোগ পাওয়া যায়। কিন্তু রাজ্য সরকারের তরফে এবং দলের তরফে সব জানিয়ে দেওয়া হয়েছে আগামিকাল বাংলায় কোনও বন্ধ হচ্ছে না। সম্পূর্ণ স্বাভাবিক থাকবে জনজীবন। অফিস, স্কুল, কলেজ গণপরিবহণ সব থাকবে স্বাভাবিক। রাজ্যকে স্বাভাবিক রাখতে যথাযথ ব্যবস্থা দিচ্ছে প্রশাসন। মঙ্গলবার বিকেলে নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে মুখ্যমন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য, ব্রাত্য বসু, অরূপ বিশ্বাস এবং ইন্দ্রনীল সেন এই বন্ধের তীব্র বিরোধিতা করে স্পষ্ট জানিয়ে দেন, রাজ্য সরকার এই বন্ধের তীব্র বিরোধিতা করছে। সমস্ত সরকারি অফিস-সহ রাজ্যের সবকিছুই আগামিকাল স্বাভাবিক থাকবে।
আরও পড়ুন-বাংলা অচল হবে না, পাশে আছে সরকার
বিজেপির ডাকা ১২ ঘণ্টা বাংলা বন্ধের তীব্র বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেসও। তৃণমূলের স্পষ্ট বক্তব্য, ন্যায় বিচারের দাবি বদলে গেছে পদত্যাগের দাবিতে! ছাত্র সমাজের নামে নবান্ন অভিযানের ডাক দিল আরএসএস, বিজেপি। ব্যারিকেড ভাঙল তারা। পুলিশকে রক্তাক্ত করল তারা। বাইক জ্বালাল তারা। তৃণমূল কংগ্রেসের ব্যানার, পোস্টার ছিঁড়ল বিজেপি। আবার বন্ধও ডাকল বিজেপি। এর থেকে হাস্যকর কিছু হয় না। কাল বাংলায় কোনও বন্ধ হচ্ছে না এ-কথা সব জানিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ বলেন, এদিন দেখা গেল লোকজন বেশি নেই এদের অভিযানে। কিছু দুষ্কৃতী হামলাকারীরা ব্যারিকেড ভেঙেছে, পাথর ছুঁড়েছে, বোতল ভেঙেছে। বাইক জ্বালিয়েছে। পুলিশকে রক্তাক্ত করেছে। হাওড়া চণ্ডীতলা আইসির মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। চূড়ান্ত অরাজকতা করতে দিনভর উসকানি দিয়েছে বিজেপি নেতারা। এরাই আবার বাংলা বন্ধের ডাক দিয়েছে। বিজেপির ষড়যন্ত্র, চক্রান্তের ফাঁদে কেউ পা দেবেন না এই সাবধানবাণী শুনিয়ে কুণাল বলেছেন, কোনও বাংলা বন্ধ হবে না। তাঁর কথায়, এরা অরাজকতা, অশান্তি করে পুলিশের মাথা ফাটিয়েছে। একাধিক পুলিশকে মারধর করেছে। বাম জমানায় পুলিশ ১৯৯৩ সালের ২১ জুলাই ১৪ জনের লাশ ফেলে দিয়েছিল। কোচবিহারে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর পুলিশ ফরওয়ার্ড ব্লকের কর্মীদের গুলি করে মেরেছিল। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশ সেসবের ধারকাছ দিয়ে যায়নি। যেখানে যেটুকু না করলেই নয়, সেটুকুই করেছে। কুণালের সংযোজন, আরজি করের ঘটনাকে সামনে রেখে, মানুষের আবেগের সুযোগ নিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে বিজেপি। জনজীবন স্বাভাবিক থাকবে। বিজেপি কি মনে করেছিল তারা ব্যারিকেড ভাঙবে, ঢিল মারবে আর পুলিশ চুপচাপ দেখবে? এরা কোন মুখে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চাইছে? বিজেপি শাসিত রাজ্যে খুন-ধর্ষণের ঘটনা ঘটে তখন মুখ্যমন্ত্রীরা পদত্যাগ করেন না কেন? যারা আজ নবান্ন অভিযানে গিয়েছিল তাদের চেহারা দেখেছেন? মুখের ভাষা শুনেছেন? জনগণের প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসের আবেদন, বিজেপি ষড়যন্ত্র করে, গন্ডগোল তৈরির প্লট করেছে। ওদের ফাঁদে পা দেবেন না। আগামিকাল ২৮ অগাস্ট টিএমসিপির প্রতিষ্ঠাদিবসের সমাবেশ রয়েছে মেয়ো রোডে। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী আসবেন। ইতিমধ্যে অনেকেই কলকাতায় চলে এসেছেন। সমাবেশ বিশাল আকার নেবে। বাংলার জনজীবনও স্বাভাবিক থাকবে।