“তিনমূর্তি” সিনেমার গানের সুরে অনায়াসে বলা যেতে পারে যে, ‘এমন মজার শহর যারা থাকে কলিকাতায়, নেই জিলাপির প্যাঁচ গো, তারা সরল সিধেসাদা।’
ঠিক এমনটাই হলেন, আমাদের সবার প্রিয় নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর মনে এক, মুখে এক কখনও হয় না। সেজন্যই তাঁর সরল মন্তব্য নিয়ে কূটকাচালির অন্ত নেই। মুখ্যমন্ত্রী একজন প্রকৃত অভিভাবকের মতো পোশাকি ভাষার প্যাঁচপয়জারে না গিয়ে রাজ্যবাসীকে অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দেন।
তিনি নিজেও একসময় সংসার প্রতিপালনে অনেক কষ্টসাধ্য কাজ করেছেন। সেই জায়গা থেকে আজ রাজ্যের সর্বোচ্চ জায়গায় পৌঁছালেও পা তাঁর মাটিতেই রয়েছে। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর সেই সরলসিধে কথার মধ্যেও জিলাপির প্যাঁচ খুঁজছে বাংলা বিদ্বেষীরা। ঠাকুর রামকৃষ্ণদেবের যত মত তত পথের দর্শনকে এরা কোনওদিন সোজা ভাবে নেয়নি। এদেরই কোনও বাচাল পূর্বপুরুষ ঠাকুরকে পর্যন্ত পাগলা সাধু বলার বাতুলতা দেখিয়েছে। সুতরাং মুখ্যমন্ত্রীকে যে তারা আক্রমণ করবে তা খুবই স্বাভাবিক। যদিও তা পাগলের প্রলাপ বা প্রহসনে পরিণত হয়েছে।
যারা দায়িত্ব নিয়ে রাজ্যের কলকারখানা লাটে তুলেছে তারা মুখ্যমন্ত্রীর চা-ঘুগনি নিয়ে গলাবাজি করছে। অথচ কলকাতা তথা রাজ্যের নানাবিধ ব্যবসার চেইন যেভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-সহ ইউরোপ তথা তাবড় বিশ্বে ছড়িয়ে গিয়েছে তাতে চোখ ছানাবড়া হতে বাধ্য। এভাবেই কলকাতায় সামান্য চায়ের দোকান থেকে রাজ্যের নানাপ্রান্তে ছড়িয়ে গিয়েছে ব্যবসার বুনিয়াদ, এমন হাতেগরম উদাহরণও ভরপুর।
পর্যটন ব্যবসায় আগ্রা, রাজস্থান-সহ দেশের একাধিক বড় স্পটকে পিছু ফেলে এখন কলকাতা এবং রাজ্য অগ্রণী হয়ে উঠেছে। ফুড, রিসোর্ট, নানাধরনের স্টার্ট আপ আজ বাঙালি ছেলেদের হাত ধরে আন্তর্জাতিক হয়ে উঠেছে। এটাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলা। শুধুমাত্র চাকরির মুখাপেক্ষী না হয়েও এখানে যাপনের হাজারো বীজ রোপণ হয়ে গিয়েছে। সেই কর্মবীজের জ্বালায় নিষ্কর্মা রক্তবীজের দল জ্বলেপুড়ে মরছে। বড়জোর টিভি চ্যানেলের সন্ধ্যা-আহ্নিকে বসে জিঘাংসা ঝরাচ্ছেন। যদিও তাতে রাজ্যবাসীর কাঁচকলা। কারণ, মমতাময়ীর জাদুতে রাজ্য আজ কর্মবৎসল।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) পান থেকে চুন খসার জন্য যারা রাতদিন হত্যে দিয়ে পড়ে থাকে ফ্ল্যাশব্যাকে ইতিহাসের দিকে একটু ফিরে তাকালে দেখবেন বাংলায় বন্ধ্যাত্ব আনার মূল কারিগর কিন্তু তারাই। সিপিএম নেতৃত্বাধীন বামেদের ৩৪ বছর হল বাংলা ও বাঙালিকে পিছিয়ে দেওয়ার সাপ-লুডো খেলার সেই পুট। যা বাঙালিকে টেনে নামিয়েছিল ঐতিহ্যের অট্টালিকা থেকে আঁস্তাকুড়ে। কিন্তু সবকিছুর যেমন শেষ আছে তেমনই বাংলাকে ছিবড়ে করা নেতিবাচক সেই সিপিএমকে উৎখাত করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যবে থেকে চালকের স্টিয়ারিংয়ে বসেছেন তখন থেকে খেলা পুরো ঘুরে গিয়েছে। হ্যাঁ, বাংলার নবযৌবন থেকে প্রান্তিক মানুষ বাংলার গরিমা ফিরিয়ে আনতে ‘খেলা হবে’র স্লোগানে আজ মুখরিত।
এই বাংলা কোনও কিছুকে তুচ্ছ ভাবায় দীক্ষিত নয়। বরং উদার মনোভাবাপন্ন হয়ে সব কাজকেই আপন ভেবে যাপন করে।
আরও পড়ুন-যুবভারতী-কাণ্ডে গ্রেফতার বেড়ে ৯, শতদ্রুর বাড়িতে তল্লাশি
প্রাথমিকে ইংরেজি তুলে দেওয়া সিপিএম নেতা মন্ত্রী-সান্ত্রী মায় এলসিএম, ব্রাঞ্চ মেম্বারের সন্তানরা পর্যন্ত অধিকাংশ ক্ষেত্রেই নামীদামি ইংলিশ মিডিয়ামে পড়ত। উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশ চলে যেত নানারকম কোটার বগলদাবা হয়ে। অথচ পরের ছেলেকে পরমানন্দ ভেবে একের পর এক প্রজন্মকে এরা শেষ করে দিয়েছে।
সেই সিপিএম তথা বাম এবং তাদের গুরুঠাকুর বিজেপি ওরফে রাম এখন মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে খুঁত ধরতে ব্যস্ত। হ্যাঁ, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন জীবন সমুদ্রে একেবারে ভাটা যাতে না পড়ে সেজন্য প্রয়োজনে ছোট পুঁজির ব্যবসাতেও মনোনিবেশ করতে হয়। ঠিক যেভাবে বিদেশের মাটিতে ছাত্রজীবনে হাতখরচের টাকার জোগানের জন্য সুইপার থেকে গাড়ি সাফসুতরো-সহ জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠে অংশ নেয় ছাত্রছাত্রীরা। সেটাই এখানে করলে গেল গেল রব উঠবে। আবার সেই সিপিএমের কমরেডদের মুখে বড় বড় বুকনি শোনা যায়, যাঁরা কমিউনিজমের প্রলেতারিয়েতের নামে গড়ে তুলেছিল সুবিধাভোগী, উচ্ছিষ্টযাপনকারী এক তথাকথিত এলিট সমাজ। মুখে মার্কসবাদ। কিন্ত আমরা খাব, তোমরা বাদ। রাজ্যে ব্যবসা তথা শিল্পপরিকাঠামো ঘুণপোকার মতো তিলে তিলে গ্রাস করেও শান্তি হয়নি। এই অতৃপ্ত আত্মারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মোড় ঘোরানো বাংলার মাটিতে কোনও ফাঁকফোকর খুঁজে না পেয়ে মানুষের বৃত্তিকে ছোট করার কুৎসিত খেলায় মেতেছে। সাম্যবাদের গঞ্জিকা সেবন করা কমরেড তথা রামরেডরা কাজের ছোট-বড় খুঁজে বেড়াচ্ছে। সমুদ্র যেমন কিছুই নেয় না, সব ফিরিয়ে দেয়। তেমনই উদার শহর কলকাতা। যে পরিশ্রম, অধ্যবসায় মানুষ নিজেকে নিংড়ে দেয় এ-শহরে তার ষোলোআনা ফিরিয়ে দিতেও মহানগর কার্পণ্য করে না। শুধু ষোলোআনা কেন, পড়ে পাওয়া চৌদ্দআনাও জুটে যায় অনেকক্ষেত্রে।
কত পথের ফেরিওয়ালা এই তিলোত্তমার স্পর্শে ধনকুবের হয়ে উঠেছেন তার ইয়ত্তা নেই। বস্তুত, সামান্য গামছার ব্যাপারী থেকে চটকল মালিক, অতঃপর সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা এই শহর বারংবার চোখে আঙুল দাদার মতো দেখিয়ে দিয়েছে। টাটা, বিড়লা, গোয়েঙ্কা থেকে অনেক শিল্পপতির ভিত্তিপ্রস্তর এই কলকাতার কলতানে খুব সাধারণ কাজ থেকে মহিরুহ হয়ে উঠেছে।
মাঝে বামপন্থা নামক ৩৪ বছরের অন্ধকার যুগ এসে কলকাতার শিল্প-সংস্থান, ব্যবসা, উদ্যোগ এবং কর্মসংস্কৃতি ধ্বংস করে দিয়েছিল। সেই দেওয়ালে পিঠ ঠেকে জায়গা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ফের জোয়ার এসেছে বাংলার শিল্পে। কথায় কথায় বনধ ডাকা বন্ধ করে কর্মদিবসের মাধ্যমে বাংলা পেয়েছে তারুণ্যের প্লাবন।
কোনও কাজই যে ছোট নয় তা পরতে পরতে শিখিয়ে চলেছে আমাদের শহর। আর জীবনভর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হওয়া বাংলার অগ্নিকন্যা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) এই শহরের জয়গান বা থিমসঙ বেঁধেছেন সেই আঙ্গিকে।
যার মোদ্দা কথা হল, বেকার থাকার চেয়ে হাতের সামনে যে অপশন আসবে তাকেই বেছে নিতে হবে অধুনা মোবাইল ক্লিক করার মতো। অবশ্যই নিজের শিক্ষাগত যোগ্যতার মাপকাঠিতে এগোতে হবে। তবে যোগ্যতা থাকা সত্বেও সেই উপযুক্ত কর্মসংস্থান না হলে চাপ নেই। সামান্য পুঁজিতেও অনেক অসাধ্য সাধন সম্ভব। নিতে হবে না একগুচ্ছের ব্যাঙ্ক লোন কিংবা ফান্ডের আয়োজন।
শুধুমাত্র উপস্থিত বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে গড়ে তোলা যায় নিজস্ব কারবার। সেলফির ভরা দুনিয়ায় কাজের এই নিজস্বী পরিবেশ তিলে তিলে গড়ে উঠেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জাদুদণ্ডে।

